মুসলমানদের সাপ্তাহিক ঈদের দিন হলো জুমার দিন। জুমার দিনের নামাজের অনেক গুরুত্ব ও ফজিলত রয়েছে। জুমার দিন এবং এই দিনের নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,
“হে মুমিনগণ, যখন জুমার দিনে আজান দেয়া হয়, তোমরা আল্লাহকে স্মরণ করার জন্য দ্রুত চলো এবং কেনা-বেচা বন্ধ কর। এটা তোমাদের জন্য উত্তম যদি তোমরা বুঝতে পার। অতঃপর সালাত আদায় করা শেষ হলে পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহের খোঁজ কর, যেন তোমরা সফলকাম হও।” (সূরাহ জুমআ, আয়াত নং ৯-১০)
জুমার নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত অনুধাবন করে মুসলমানগণ নামাজের প্রস্তুতি গ্রহন করে আগে থেকেই। এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ রয়েছে যা জুমার দিনে মেনে চলা উচিৎ। যা পালন করলে নবীর সুন্নাত পালন হবে এবং নেকীও পাওয়া যাবে। আসুন জেনে নেই জুমার দিনের মর্যাদাসম্পন্ন কাজগুলো কি কি?
সুচীপত্র
জুমার দিনে যে কাজগুলোর মর্যাদা সবচেয়ে বেশি
১১ টি খুব সহজ কাজ রয়েছে যে কাজগুলোর মর্যাদা জুমার দিনে সবচেয়ে বেশি। প্রত্যেক মুসলমানের এই কাজগুলো সম্পর্কে জেনে রাখা অতীব জরুরী। আসুন জেনে নেই, কি সেই কাজগুলো?
১. গোসল করা
জুমার নামাজের পূর্বে ভালোভাবে গোসল করা উচিৎ। হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) বলেছেন,
“তোমাদের মধ্যে যদি কেউ জুমার নামাজ পড়ে তাহলে তার পূর্বে সে যেন গোসল করে”।
২. মেসওয়াক করা
মসজিদে প্রবেশ করার পূর্বে অবশ্যই ভালোভাবে মেসওয়াক করা উচিৎ। কারণ মেসওয়াক না করলে মুখ থেকে দুর্গন্ধ বের হবে আর তার জন্য মসজিদের পবিত্রতা নষ্ট হতে পারে। তাই মসজিদে প্রবেশের পূর্বে ভালোভাবে সময় নিয়ে মেসওয়াক করে নেওয়া উত্তম।
৩. পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পোশাক পরিধান করা
জুমার দিন নতুন না হলেও পবিত্র ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন কাপড় পরিধান করা উচিৎ। কারণ মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র তাই তিনি পবিত্র ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতাকে পছন্দ করেন। তাই অন্তত জুমার দিনের পোশাক সুন্দর ও পরিপাটি হওয়া জরুরী।
৪. সুগন্ধি ব্যবহার করা
জুমার নামাজের উদ্দেশ্যে মসজিদে যাওয়ার পূর্বে গোসলের পর সুগন্ধি ব্যবহার করা উচিৎ।
৫. আগে মসজিদে যাওয়া
সবসময় উচিৎ আগে আগে মসজিদে উপস্থিত হওয়া। হাদিসে এসেছে,
“যে ব্যক্তি সবার প্রথমে জুমার মসজিদে উপস্থিত হবে, সে ব্যক্তি একটি উট কুরবানি করলে যে সাওয়াব হয় সেই পরিমাণ সাওয়াব তার পুণ্যের খাতায় লেখা হবে, আর যে ব্যক্তি সবার শেষে মসজিদে উপস্থিত হবে সে একটি ডিম সদকা দিলে যে সাওয়াব হয় সেই পরিমাণ সাওয়াব পাবে”।
সুতরাং আগে আগে মসজিদে উপস্থিত হওয়ার চেষ্টা করা উচিৎ।
৬. পায়ে হেঁটে মসজিদে যাওয়া
জুমার দিনে পায়ে হেঁটে মসজিদে যাওয়ার অনেক গুরুত্ব রয়েছে। যে ব্যক্তি যত দূর থেকে পায়ে হেঁটে মসজিদে আসবে সে ব্যক্তির জন্য ততো বেশি সাওয়াব। কেননা, মসজিদের উদ্দেশ্যে যাওয়া কোন ব্যক্তির প্রতিটি কদমে তার গোনাহ মাফ হয়, এবং সেই ব্যক্তির মান-মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয়।
তাই মসজিদে যাওয়ার সময় রাস্তার একপাশ দিয়ে যাওয়া উচিৎ এবং আসার সময় অপর পাশ দিয়ে আসা উচিৎ।
৭. খুৎবা শোনা
জুমার দিনের খুৎবার গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম। তাই প্রত্যেক মুসলমানের উচিৎ জুমার খুৎবার সময় কোন প্রকার কথা না বলে, নীরব থেকে ইমামের খুৎবা মনোযোগসহকারে শোনা। মহানবী (সাঃ) খুৎবার সময় কথা বলতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন।
৮. নামাজ আদায় করা
উপযুক্ত সময়ে জুমার নামাজ পড়া উচিৎ। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,
“হে মুমিনগণ!, জুমার দিন যখন তোমাদের আহবান করা হয় তখন তোমরা দেরি না করে, কেনা- বেচা বন্ধ করে আল্লাহর উপসনার জন্য ধাবিত হও,”
অর্থাৎ মহান আল্লাহ তায়ালা জুমার দিনে দ্রুত মসজিদে উপস্থিত হতে বলেছেন।
৯. দরুদ পাঠ করা
জুমার দিনে আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর উপর বেশি করে দরুদ পাঠ করা জরুরী। কেননা হাদিসে এসেছে,
রাসূল (সাঃ) বলেছেন, অন্যসব দিনের চেয়ে জুমার দিন হলো শ্রেষ্ঠ দিন। কারণ এই দিনে পৃথিবী সৃষ্টি করা হয়েছে আবার এই দিনে পৃথিবী ধংশ করা হবে। এই দিনে আমাদের আদি পিতা হযরত আদম (আঃ) কে সৃষ্টি করা হয়েছে, এই দিনেই হযরত আদম (আঃ) মৃত্যুবরণ করেছেন। এই দিনে কিয়ামাত হবে। এই দিনে সকল মৃত মানুষকে পুনরায় জীবিত করা হবে।
তখন উপস্থিত সাহাবিগণ রাসুল (সাঃ) কে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল, কিভাবে আমাদের পড়া দরূদ আপনার নিকট পৌঁছাবে, আপনি তো মৃত্যুর পর মাটির সাথে মিশে যাবেন। তখন রাসূল (সাঃ) বলেন, নবীগনদের দেহ মহান আল্লাহ তায়ালা মাটির জন্য হারাম করে দিয়েছেন। (ইবনে মাজাহ, আবু দাউদ, বায়হাকি, নাসাঈ)
১০. সুরাহ কাহাফ পাঠ করা
জুমার দিন সূরাহ কাহাফ পাঠ করা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। হযরত খদরি (রাঃ) হতে বর্ণিত একটি হাদিস আছে এ ব্যাপারে, তিনি বর্ণনা করেন,
“জুমার দিনে যে ব্যক্তি সূরা কাহাফ তিলাওয়াত করবে সে ব্যক্তি এক জুমা থেকে পরবর্তী জুমা নূরের আলোতে থাকবেন”।
হযরত আলী (রাঃ) এ ব্যপারে একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেছেন,
“এক জুমা থেকে পরবর্তী আরেকটি জুমা পর্যন্ত সূরা কাহাফ তিলাওয়াত করা ব্যক্তির সকল ছগিরা গুনাহ মাফ হয়ে যাবে”
১১. দোয়া করা
পবিত্র জুমার দিনে একটি সময় আছে যে সময়ে কোন মুসলমান মহান আল্লাহর দরবারে কোন বিষয়ে দোয়া করলে, কিছু চাইলে মহান আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দার দোয়া কবুল করেন।
এই সময় নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে, কোন কোন আলেম বলেছেন, জুমার দিনে দোয়া কবুল হওয়ার সময় হচ্ছে আছর হতে মাগরিব পর্যন্ত আবার কেউ কেউ বলেছেন, ইমাম যখন খুতবা পাঠ করে তাঁর মধ্যবর্তী সময়টা হচ্ছে দোয়া কবুলের সময়।
মহান রাব্বুল আলামিন আমাদের সবাইকে জুমার নামায আদায় করার তাওফিক দান করুন এবং জুমার দিনের সওয়াব হাছিলের জন্য উল্লেখিত কাজগুলো করার তাওফিক দিন। আমিন।
আরও পড়ুন,
১. স্বামীর প্রতি স্ত্রীর কর্তব্য, ইসলাম কি বলে?
২. রোজা রাখার শারীরিক ও মানসিক উপকারিতা