মাইক্রোসফট ওয়ার্ড এর নাম শুনিনি এমন মানুষ বর্তমানে খুব কমই আছে। এটি একটি ওয়ার্ড প্রসেসিং সফটওয়্যার। এর মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন লেখা লেখি, ছোট খাটো ডিজাইন, প্রিন্ট দেয়া ইত্যাদি বিভিন্ন কাজ করে থাকি।
মাইক্রোসফট ওয়ার্ড এর মতো আরও একটি ওয়ার্ড প্রোসেসিং টুলস রয়েছে যার সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানি না। এটি গুগল এর একটি প্রোডাক্ট।
গুগল এর নাম রেখেছে Google Docs. এর মাধ্যমে ওয়ার্ড প্রোসেসিং এর কাজগুলো খুব সহজেই করা যায়। আজকে আমরা এটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।
আসুন সবার প্রথমে আমরা জেনে নেই, গুগল ডকস কি?
সুচীপত্র
Google Docs কি?
মাইক্রোসফট ওয়ার্ড এর মতো এতো বেশি পরিচিত না হলেও ধীরে ধীরে মানুষ গুগল ডকস এর প্রতি ঝুকে পড়ছে। এর কারণ হল এতে কাজ করা অনেক বেশি সহজ। কথা না বাড়িয়ে চলুন জেনে নেই গুগল ডকস কি?
আমরা জানি নাম্বার ওয়ান ব্র্যান্ড হচ্ছে গুগল। গুগলের রয়েছে অনেক প্রোডাক্ট। এই অনেকগুলো প্রোডাক্টের মধ্যে গুগল ডকস হচ্ছে একটি অন্যতম প্রোডাক্ট বা সেবা।
আপনারা হয়তো গুগল ড্রাইভের নাম শুনে থাকবেন, গুগল ড্রাইভ হচ্ছে অনলাইন স্টোরেজ সুবিধা। গুগল এই সুবিধাটি মানুষকে ১৫ জিবি পর্যন্ত বিনা মূল্যে দিয়ে থাকে। গুগল ডকস সেবাটি মূলত গুগল ড্রাইভের সাথে সম্পৃক্ত করেছে গুগল।
গুগল ড্রাইভ সম্পর্কে আমাদের লেখাটি পড়ে নিতে পারেন, Google Drive কি? কেন এবং কিভাবে গুগল ড্রাইভ ব্যবহার করা যায়?
গুগল ডকস সম্পর্কে মোটামুটি একটি সাধারণ ধারণা পেয়ে গেলাম, এখন আমরা জানবো গুগল ডকস এর চমৎকার এবং সহজ কিছু ব্যবহার।
গুগল ডকস এর ব্যবহার
গুগল ডকস এর অনেক গুলো ফিচার রয়েছে। আজ আমরা গুরুত্বপূর্ণ এবং সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত কয়েকটি ফিচার এবং এর ব্যবহার নিয়ে বিস্তারিত জানবো।
১. ভয়েস টাইপিং
অনেকেই না দেখে টাইপ করতে পারে না ফলে তাদের কীবোর্ড দেখে দেখে টাইপ করতে হয়। এতে অনেক সময় অপচয় হয়। এই সময় অপচয় রোধ করতে ব্যবহার করা যেতে পারে ভয়েস টাইপিং।
গুগল ডকস এ রয়েছে ভয়েস টাইপিং অপশন। যা আপনার টাইপিং কাজকে অনেক সহজ করে দেবে। এই অপশন ব্যবহার করে বাংলা কিংবা ইংরেজি ভাষায় অনায়াসে টাইপ করা যায়।
২. সাজেস্টিং মোড অপশন
গুগল ডকস এর একটি মজার অপশনের নাম হল সাজেস্টিং মোড। লেখক আপনাকে একটি লেখা পাঠাল। ডকুমেন্ট বা লেখাটিকে সরাসরি পরিবর্তন না করে সাজেস্ট করতে পারেন লেখককে। তখন লেখক আপনার সাজেশন অনুযায়ী কিংবা তার পছন্দমত এডিট করতে পারবেন।
৩. টেমপ্লেট
গুগল ডকস এর আকর্ষণীয় এবং চমৎকার একটি ফিচার হল টেমপ্লেট গ্যালারি। এর গ্যালারিতে অনেক সুন্দর এবং আকর্ষণীয় টেমপ্লেট রয়েছে যা আপনি অনেক সহজেই সেখান থেকে ব্যবহার করতে পারবেন।
এসব টেমপ্লেট ব্যবহার করে যে কেউ কোন প্রজেক্ট, সিভি, এমনকি সার্টিফিকেটও খুব সহজেই বানাতে পারবে।
৪. PDF ফাইলে রূপান্তর করা
ওয়ার্ড ফাইল পিডিএফ ফাইলে কনভার্ট করার জন্য অনেকেই অনেক ধরণের সফটওয়্যার ব্যবহার করে থাকে। এতে সময়ের অনেক অপচয় হয় তাছাড়া অনেকের কাছে জটিল কিংবা ঝামেলাও মনে হয়।
গুগল ডকস আপনার কাজকে সহজ করার জন্য এর সাথে জুড়ে দিয়েছে পিডিএফ কনভার্টার। এটি ব্যবহার করলে আপনাকে আলাদা কোন সফটওয়্যার ব্যবহার করতে হবে না।
যেকোনো ফাইল কিংবা ইমেজকে খুব সহজেই পিডিএফ ফাইলে কনভার্ট করে নিতে পারবেন। শুধু তাই নয়, এর মাধ্যমে আপনি যেকোনো পিডিএফ ফাইলকে আপলোড করে সেটিকে সহজেই এডিট করতে পারবেন।
৫. Offline এডিটিং
অনেকেই ধারণা করে থাকেন যে, ইন্টারনেট না থাকলে গুগল ডকস এ কাজ করা যায় না। এ ধারণাটি একেবারেই সঠিক নয়। আপনি চাইলে ইন্টারনেট ছাড়াই গুগল ডকস এ যেকোন কাজ করতে পারেন।
এর জন্য আপনাকে অফলাইন এডিটিং অপশনটি প্রথমে চালু করতে হবে।
জেনে রাখুন, জিমেইলের ১০ টি অজানা ব্যবহার
৬. এক্সপ্লোর অপশন
আপনি অনেকগুলো ডকুমেন্ট সেভ করে রেখেছেন, একটি একটি করে খুঁজছেন কিন্তু আপনার কাঙ্ক্ষিত ডকুমেন্টটিকে খুঁজে পাচ্ছেন না। এমন হলে তো বিরক্ত লাগবেই। অপরদিকে আপনার মূল্যবান সয়ময়ের তো বারোটা বাজছে।
আর বিরক্ত হবেন না, এক্সপ্লোর অপশনটি ব্যবহার করে খুব সহজেই আপনার প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টটি খুঁজে নিতে পারেন।
৭. ছবি এডিটিং
ছবি এডিটিং করার জন্য আমরা অনেকেই ফটোসফট ব্যবহার করে থাকি। অনেকের কাছেই এর ব্যবহার অনেকটা জটিল মনে হয়ে থাকে।
অথবা আলাদা ভাবে ফটোসফট এর কাজ জানা না থাকলে ছবি এডিট করা যায় না। তাই ছবি এডিট করার ইচ্ছে থাকলেও তা পারে না। তাদের জন্য আর নয় চিন্তা, গুগল ডকস এ ফটো এডিটিং সুবিধা রয়েছে।
সেখান থেকে আপনার মনমতো ছবি এডিট করতে পারবেন খুব সহজেই।
৮. অটোম্যাটিক সেভ
অনেকে আমরা মাইক্রোসফট ওয়ার্ড ব্যবহার করেছি। সেখানে কোন কিছু লিখলে কিছুক্ষণ পর পর সেভ করতে হয়। যদি সেভ না করেন এবং যদি বিদ্যুৎ চলে যায় তবে আপনার সব কষ্ট মাটি, অর্থাৎ আপনাকে আবার নতুন করে লিখতে হবে।
এই সেভ করার ঝামেলা থেকে মুক্তি দিতে পারে গুগল ডকস। এখানে আপনি কোনকিছু লিখলে বা কোন কাজ করলে তা অটোম্যাটিক সেভ হয়ে যাবে অর্থাৎ আপনাকে ম্যানুয়ালি সেভ করতে হবে না।
মানুষের জীবনকে সহজ থেকে সহজতর করতে নানা ধরণের প্রযুক্তি আবিষ্কার হয়েছে। আর আমাদের সকলের উচিৎ প্রযুক্তিগুলোর সঠিক এবং যথাযথ ব্যবহার করা।
বন্ধুরা আজ এখানেই শেষ করছি, আগামীতে দেখা হবে নতুন কোন টপিকস নিয়ে। সে পর্যন্ত ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন এবং যুক্ত থাকুন প্রযুক্তির সাথে। আল্লাহ হাফেজ।
আরও পড়ুন,
*লেখাটি ভালো লাগলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন*