পানিশূন্যতা কি বা ডিহাইড্রেশন কি এই প্রশ্নের উত্তর জানার পূর্বে পানিশূন্যতা বা ডিহাইড্রেশন শব্দটির সাথে পরিচিত হওয়া যাক। কারণ আমরা অনেকেই হয়তো শব্দদুটির সাথে পরিচিত নই।
হাইড্রেশন শব্দটির বৈজ্ঞানিক সংজ্ঞা হচ্ছে পানি শোষণ করার জন্য কোন কিছু সৃষ্টি করার প্রসেস বা প্রক্রিয়া।
কিন্তু ডিহাইড্রেশন শব্দটি এখানে পানিশূন্যতা অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে। আসুন জেনে নেয়া যাক, ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতা কি বা কাকে বলে? অথবা কোন অবস্থাকে ডিহাইড্রেশন বলা হয়ে থাকে?
সুচীপত্র
পানিশূন্যতা বা ডিহাইড্রেশন কাকে বলে?
একজন সুস্থ মানুষের শরীরে ৬০-৭০ শতাংশ পানি থাকে। এই অংক দেখে বোঝাই যাচ্ছে মানুষের শরীরে পানি কতটা অপরিহার্য!
মানুষের শরীর থেকে কোনভাবে যদি পানি বের হয়ে যায় এবং শরীরে পানির সংকট দেখা দেয় সেই অবস্থাকে মূলত ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতা বলা হয়। একে পানি অল্পতাও বলা হয়ে থাকে।
ডাক্তারি ভাষায় শরীরে পানির স্বল্পতাকেই বলা হয়ে থাকে ডিহাইড্রেশন।
অনেকেই ধারণা করে থাকেন শুধুমাত্র গরমকালেই মানুষের শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দেয়। কিন্তু আসলে সেটা পুরোপুরি ভুল ধারণা।
গরমকাল বলুন আর শীতকাল বলুন সব কালেই মানুষের শরীরে ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতা হতে পারে। তবে এটা ঠিক যে, গরমকালে শরীরে ডিহাইড্রেশন হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
মানব দেহে বিভিন্ন কারণে পানিশূন্যতা বা ডিহাইড্রেশন হতে পারে। আসুন তাহলে জেনে পানিশূন্যতা বা ডিহাইড্রেশন এর কারণগুলো কি কি?
পানিশূন্যতা বা ডিহাইড্রেশনের কারণ
ইতঃপূর্বে আমরা জেনেছি মানুষের শরীরের প্রায় ৬০ থেকে ৭০ ভাগই পানি। যদি পানির এই অংকটা কোন কারণে ৬০-৭০ ভাগের নিচে চলে আসে তবে সেটাকে বলা হয়ে থাকে পানিশূন্যতা বা ডিহাইড্রেশন।
আসুন তাহলে জেনে নেয়া যাক, পানি শূন্যতা বা ডিহাইড্রেশনের কারণগুলো কি কি?
১. অপর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করা
আমাদের মাঝে অনেক মানুষ আছে তারা এ বিষয়ে অবগত নয় যে একজন সুস্থ মানুষের প্রতিদিন কত লিটার পানি পান করা প্রয়োজন।
চিকিৎসা বিজ্ঞান বলে একজন সুস্থ মানুষকে প্রতিদিন কমপক্ষে ২ থেকে ৩ লিটার পানি পান করা প্রয়োজন (অর্থাৎ ১০ থেকে ১২ গ্লাস)।
এর বেশি পানি পান করতে পারলে মন্দ নয় কিন্তু এর কম পানি পান করলে শরীর ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতায় ভুগতে পারে।
দীর্ঘদিন পানিশূন্যতায় বা পানি অল্পতায় ভুগলে নানা ধরণের জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বিশেষ করে কিডনি রোগ, যা নীরব ঘাতক নামে পরিচিত।
এখান থেকে বিস্তারিত জেনে নিতে পারেন,
-
-
- কিডনি রোগের কারণ কি?
-
২. বমি
বিভিন্ন কারণে মানুষের বমি হতে পারে আর এই বমির সাথে শরীর থেকে প্রয়োজনীয় ইলেক্ট্রোলাইট বের হয়ে যায়। যার ফলে শরীর পানিশূন্যতায় ভুগতে পারে।
অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যায় দু একবার বমি করলেই শরীর নিস্তেজ হয়ে পড়ে। শরীর নিস্তেজ হওয়ার মূল কারণটাই হচ্ছে ডিহাইড্রেশন।
৩. ডায়রিয়া
ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা বিভিন্ন কারণে হতে পারে যেমন দুষিত পানি পান করলে, ফুট পয়জনিং ইত্যাদি।
ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে প্রয়োজনীয় উপাদান যেমন সোডিয়াম, পটাশিয়াম ইত্যাদি বের হয়ে যায়।
এর ফলে শরীর খুব দ্রুততম সময়ের মধ্যে দুর্বল হয়ে পড়ে। এর জন্য ডায়রিয়া রোগীকে প্রতিবার পাতলা পায়খানার পর একটি করে খাবার স্যালাইন খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন ডাক্তারেরা।
জেনে নিন,
৪. জ্বরের কারণে
জ্বরের কারণেও শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে। এর কারণ হচ্ছে জ্বর হলে স্বাভাবিকভাবেই শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় এর ফলে শরীরে পানির ঘাটতি দেখা দেয়।
একটু লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে, যাদের জ্বর হয় তাদের খুব ঘন ঘন মুখ শুকিয়ে আসে। এর মূল কারণ হচ্ছে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া। তাই জ্বর হলে বেশি বেশি পানি পান করা এবং ভেজা কাপড় দিয়ে সারা শরীর মুছে দেয়া উচিৎ।
৫. অতিরিক্ত গরম
অতিরিক্ত গরমের কারণে শরীর থেকে অতিরিক্ত ঘাম ঝরবে এটাই স্বাভাবিক। এর ফলে শরীরে পানির ঘাটতি দেখা যায়।
আবার অনেক মানুষ আছেন যারা অতিরিক্ত গরমেও ঘামে না কিন্তু তবুও তাদের শরীরে পানির ঘাটতি দেখা যায়। কারণ, অতিরিক্ত গরম ত্বক থেকে পানি চুষে নেয়।
এ অবস্থায় শরীরকে সুস্থ রাখতে পর্যাপ্ত পানি পান করার পাশাপাশি ফলমূল খাওয়া আবশ্যক।
৬. শরীরচর্চা
অনেক সময় শরীর চর্চার কারণেও ডিহাইড্রেশন হতে পারে। কারণ এতে শারীরিক পরিশ্রমের কারণে প্রচুর ঘাম হয় এতে করে শরীরে পানির ঘাটতি দেখা দেয়।
তাই বিশেষজ্ঞগণ শরীর চর্চার পর প্রচুর পানি পান করতে বলে থাকেন।
৭. অত্যাধিক পরিশ্রম
গ্রামে কিংবা শহরে হটাত দেখা যায় কেউ ধান ক্ষেতে কাজ করতে করতে অজ্ঞান হয়ে গেছে অথবা রিক্সা চালাতে চালাতে অজ্ঞান হয়ে গেছে।
এর মূল কারণ হচ্ছে ডিহাইড্রেশন অর্থাৎ শরীরে পানিঅল্পতা। এর থেকে পরিত্রানের উপায় হচ্ছে প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি পান করা।
এখান থেকে বিস্তারিত জেনে নিন,
৮. ডায়াবেটিস
ডায়াবেটিস রোগীদের ডিহাইড্রেশনে ভোগার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। এর একটি প্রধান কারণ হচ্ছে ঘনঘন প্রসাব।
এছাড়া ডায়াবেটিস রোগীদের খাবার খেতে হয় পরিমিত। এর উপর যদি ঘনঘন প্রসাব হয় কিংবা অতিরিক্ত গরমের কারণে শরীর থেকে ঘাম ঝড়ে তাহলে তো শরীরে পানির ঘাটতি দেখা দেবেই।
এখান থেকে জেনে নিন,
ডিহাইড্রেশন বা পানিশুন্যতা এমন একটি অবস্থা যা ছোট বড় সকলেরই হতে পারে। তাই পরিমিত পানি পান করা অপরিহার্য।
পাশাপাশি পানিশূন্যতা বা ডিহাইড্রেশনের কারণগুলো সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞান থাকাও প্রয়োজন।