খুশকি শব্দটির সাথে পরিচয় নেই এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া বেশ মুশকিল। আমরা বিভিন্নভাবে এই খুশকির মুখোমুখি হয়ে থাকি।
আমাদের শরীরের অনেকগুলো সমস্যার মধ্যে খুশকিও অন্যতম একটি সমস্যা। এতে করে মাথা থেকে চুল পড়া বৃদ্ধি পায়।
চলুন জেনে নিই, খুশকি কি বা খুশকি কাকে বলে? এবং মাথায় খুশকি হওয়ার কারণ কি?
সুচীপত্র
খুশকি কি?
খুশকি হচ্ছে ত্বকের একটি অবস্থা যা সাধারণত মানুষের মাথায় বেশি দেখতে পাওয়া যায়। মাথার ত্বক থেকে চর্মরেণু আঁশের মত করে উঠে আসে।
খুশকি সাধারণত আকারে ছোট হয়ে থাকে আবার অনেক সময় চর্মরেণুগুলো দেখতে বড় দেখায়। নারীদের তুলনায় পুরুষের খুশকি সাধারণত বেশি দেখা যায় বেশি দেখা যায়।
ত্বকের তৈলাক্ত অবস্থা এবং সাথে চুলকানি থাকলে তখন এই অবস্থাকে খুশকির ভয়াবহ অবস্থা বলে বিবেচনা করা হয়। ইংরেজিতে এর নাম হচ্ছে সেবোরেইক ডারমাটাইটিস।
এবার আসুন আমরা জেনে নেই, খুশকি কেন হয়? অর্থাৎ খুশকি হওয়ার কারণ কি?
আরও পড়ুন,
মাথায় খুশকি কেন হয়?/ মাথায় খুশকি হওয়ার কারণ কি?
সাধারণত খুশকি কোন রোগ নয় কিংবা রোগের লক্ষণও নয়। ছত্রাক এবং লোমকূপে ময়লা জমে খুশকি তৈরি হতে পারে।
মাথায় খুশকি হওয়ার স্পষ্ট কোন কারণ না থাকলেও গবেষকরা আমাদেরকে বেশ কিছু ধারণা দিয়েছেন। আসুন জেনে নিই, মাথায় খুশকি হওয়ার কারণগুলো কি কি?
১. শুষ্ক ত্বক
মাথায় খুশকি হওয়ার কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে শুষ্ক ত্বক। আমরা জানি, শীতকালে বায়ুমণ্ডলের আদ্রতা কম থাকে।
যার ফলে আমাদের শরীরের ত্বকের পাশাপাশি মাথার ত্বকও শুষ্ক হয়ে যায়। একারনে মাথায় খুশকি দেখা দেয়।
এছাড়াও ঘরের তাপমাত্রা এবং বাইরের তাপমাত্রার সাথে মিল থাকে না। যেমন শীতকালে বাইরের তাপমাত্রা বেশি ঠাণ্ডা থাকে এবং ঘরের তাপমাত্রা গরম হয়ে থাকে।
আবহাওয়ার এই তারতম্যের কারনেও আমাদের মাথায় খুশকি দেখা দিতে পারে।
জেনে নিন,
২. অতিরিক্ত তেলের ব্যবহার
মাথায় অতিরিক্ত তেল ব্যবহার করার কারণে চুলের গোঁড়ায় তেল জমে থাকে। চুলের গোরায় তেল স্তুব হয়ে থাকার কারণে ছত্রাকের আক্রমণ সহজ হয়। ফলে মাথায় খুশকি হয়ে থাকে।
একটি গবেষণায় দেখা যায়, যারা মাথায় বেশি বেশি তেল ব্যবহার করে থাকেন তাদের মাথায় খুশকি হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। মাথায় তেলের ব্যবহার খুশকি হওয়ার কারণগুলোর মধ্যে একটি।
জেনে নিন, গাঁজর খাওয়ার উপকারিতা
৩. চুল না আঁচড়ানো
মাথায় খুশকি হওয়ার কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে পর্যাপ্ত পরিমাণে চুল না আঁচড়ানো।
মাথার চুল কম আঁচড়ালে ত্বকের চামড়া ঝরে পড়ার প্রবণতা অনেক কমে যায় ফলে মাথায় খুশকি হতে পারে।
৪. চুলে নিয়মিত শ্যাম্পু না করলে
মাথার ত্বক পরিষ্কার রাখার জন্য নিয়মিত শ্যাম্পু করা প্রয়োজন। চুলে যদি নিয়মিত শ্যাম্পু করা না হয় তবে মাথার ত্বক অপরিষ্কার থাকে। আর এর থেকে সৃষ্টি হতে পারে খুশকির।
জেনে নিন,
৫. অ্যালার্জি থাকলে
মাথায় খুশকি কেন হয় বা মাথায় খুশকি হওয়ার কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে গবেষকরা বলেছেন, যাদের অ্যালার্জির সমস্যা রয়েছে তাদের মাথায় খুশকি হওয়ার প্রবণতা অনেক বেশি থাকে।
মহিলাদের ক্ষেত্রে অ্যালার্জি বেশি দেখা দেয়। আবার ইস্ট জাতীয় ছত্রাক এবং সূর্যের অতি বেগুনী রশ্মির প্রভাবে মাথায় খুশকি হওয়ার প্রবণতা অনেক বৃদ্ধি পায়।
৬. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে
গবেষকরা জানিয়েছেন, মানুষের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে মাথায় খুশকি হওয়ার প্রবণতা বেশি লক্ষ্য করা যায়।
আবার বেশ কিছু রোগ রয়েছে যেমন, হৃদরোগ, সেনসিটিভ ত্বক, পারকিনসন রোগ, একজিমা, সোরিয়াসিস ইত্যাদির কারণে মাথায় খুশকি হতে পারে।
বেশ কিছুদিন আগের একটি গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা গেছে, এইচ আই ভি রোগীদের মাথায় খুশকি হওয়ার প্রবণতা অনেক বেশি থাকে।
৭. ম্যালেসেজিয়া ফাঙ্গাস আক্রমণ করলে
মাথায় খুশকি হওয়ার কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি বড় কারণ হচ্ছে ফাঙ্গাসের আক্রমণ। ম্যালেসেজিয়া নামক ফাঙ্গাস আক্রমণ করলে এবং এর পরিমাণ বেশি হলে মাথায় খুশকি হওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে।
একটি কথা মাথায় রাখা জরুরী যে, ম্যালেসেজিয়া ফাঙ্গাস প্রায় সকল মানুষের মাথায় থাকে তবে স্বাভাবিক পরিমাণে থাকলে খুশকি দেখা দেয় না। কিন্তু পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে মাথায় খুশকি দেখা দেয়।
ম্যালেসেজিয়া ফাঙ্গাসের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে মাথার ত্বকের ক্ষরিত তেল শোষণ করে নেয়। এর ফলে স্ক্যাল্প বেশি বেশি ত্বকীয় সেল তৈরি করে।
অতিরিক্ত সেল বা কোষ তৈরি হলে কোষ মরে যাওয়ারও প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। এই মৃত কোষ স্ক্যাল্প ও চুলের তেল এক সাথে হয়ে তৈরি করে খুশকি।
জেনে নিন,
৮. খাদ্যাভাস ঠিকঠাক না থাকলে
মাথায় খুশকি হওয়ার কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম আরও একটি কারণ হচ্ছে খাদ্যাভাস ঠিকঠাক না থাকা। অর্থাৎ অনিয়মিত খাদ্যাভাসের কারণেও মাথায় খুশকি দেখা দিতে পারে।
খাবারে যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে জিংক এবং ভিটামিন বি না থাকে তবে মাথায় খুশকি হওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়।
এছাড়াও যদি মাত্রাতিরিক্ত চর্বি জাতীয় খাবার গ্রহণ করার অভ্যেস থাকে তবুও মাথায় খুশকি হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।
৯. পানির সমস্যার কারণে
মাথায় খুশকি হওয়ার কারণগুলোর মধ্যে আরও একটি অন্যতম কারণ হচ্ছে পানি জনিত সমস্যা।
পানিতে যদি ক্লোরিনের পরিমাণ বেশি থাকে তাহলে ত্বক তারাতারি শুষ্ক হয়ে যায় ফলে মাথায় খুশকি হওয়ার সম্ভাবনা বহুগুণ বৃদ্ধি পায়।
১০. মানসিক চাপের কারণে
সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় উঠে এসেছে, কেউ যদি অতিরিক্ত মানসিক চাপে থাকে তাহলে তার মাথায় খুশকি হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বৃদ্ধি পায়।
এখান থেকে জেনে নিন,
সাধারণত খুশকি হওয়ার স্পষ্ট কোন কারণ নেই। উপরের কারণগুলো ধারণার উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত। কিছু কারণ আছে যা গবেষণার ফল।
ধারণা করা হয় পরিবেশগত কারণে কিংবা জিনগত কারণেও খুশকি হতে পারে। আবার শীতকালে খুশকি হওয়ার প্রবণতা বহুগুণে বৃদ্ধি পায়।
অনেকেই ধারণা করে থাকেন পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন না থাকলে মাথায় খুশকি হতে পারে কিন্তু এ কথার আসলে শক্তপোক্ত কোন ভিত্তি নেই।
খুশকির আসল কারণ হচ্ছে মাথার ত্বকের মাত্রাতিরিক্ত বৃদ্ধি। অর্থাৎ মাথার ত্বকের কোষ যদি খুব বেশি বৃদ্ধি পায় তবে মাথায় খুশকি হওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়।
এখান থেকে জেনে নিন,
খুশকি দূর করার উপায়