অনলাইনের মাধ্যমে আয় করা নিয়ে আমাদের দেশে রয়েছে অনেক কৌতুহুল। কেউ বলে ভাওতাবাজি, কেউ বলে ভালো। তবে যে যাই বলুক আমাদের দেশে নতুন প্রজন্মের রয়েছে অনেক আগ্রহ।
তারা ছাত্র জীবন থেকেই আয় করার বিভিন্ন উৎস সম্পর্কে জানতে চায়। আর সেটা যদি হয় অনলাইনের মাধ্যমে তাহলে তো কোন কথা নাই। ইন্টারনেট ব্যবহার করে ঘরে বসে টাকা আয় করা যাবে এতে তো আগ্রহ থাকবেই।
এখন যারা ছাত্র তারা ভালো করে জানে যে ছাত্র জীবন শেষ করে একটা বেসরকারি কোম্পানিতে যদি চাকুরী করি তাহলে বেতন হবে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা।
আর সরকারি চাকুরীর কথা তো বাদই দিলাম, বাদ দিব না কেন? ১ টা সরকারি চাকুরী নিতে যদি ১০ থেকে ২০ লক্ষ টাকা ঘুষ দেয়া লাগে, তবে সেটা দেয়ার ক্ষমতা কয় জনের আছে?
অনেক কথাই বললাম, আসলে এটাই বাস্তবতা। তাহলে বাস্তবতায় কি নতুন প্রজন্ম বসে বসে বেকার জীবন কাটাবে? এমনটা তারা কখনোই চায় না।
তাই তারা ছাত্র জীবন থেকেই টাকা আয় করার পথ খুঁজে। চাকুরীর অল্টারনেটিভ কিছু ভেবে রাখে। আবার কেউ কেউ ছাত্র জীবন থেকেই আয় করা শুরু করে দেয়।
বর্তমান ইন্টারনেটের যুগে অনলাইনের মাধ্যমে আয় করা যায় এ ব্যাপারটি কম বেশি সবাই জানে। তবে সঠিক উপায় বা পদ্ধতি অনেকেই জানে না।
আপনি যদি অনলাইনে ক্যারিয়ার তৈরি করতে চান তবে আমার লেখা এই পোস্টটি শেষ পর্যন্ত অবশ্যই পড়বেন। আশাকরি আপনার অনলাইনে ক্যারিয়ার তৈরিতে বেশ সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
অনলাইন ব্যবহার করে ঘরে বসে বসে আয় করার অনেকগুলো মাধ্যম রয়েছে। যেমন- ব্লগিং, ডিজিটাল মার্কেটিং, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং, ফ্রিল্যান্সিং, SEO ইত্যাদি। এসবের মধ্যে জনপ্রিয় মাধ্যম হল অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং।
আজ আমি অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং নিয়ে খুঁটি নাটি সব বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো। প্রথমেই বলে রাখি, আপনি যদি কাজ না শিখে কিংবা ভালোভাবে না জেনে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং শুরু করে দেন তবে কখনোই সফল হতে পারবেন না। মনে রাখবেন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং অতটা সহজ নয়।
তবে আপনি যদি সঠিক পদ্ধতিতে সব কিছু শিখতে পারেন তবেই সফল হতে পারবেন। ভালো কিছু করতে চাইলে সে বিষয়ে ভালোভাবে জানা দরকার। না জেনে কোন কিছুতে হাত দেয়াটা আপনার জন্য বুমেরাং হয়ে যেতে পারে।
আসুন প্রথমেই জেনে নেয়া যাক অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কি বা কাকে বলে?
সুচীপত্র
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কি বা কাকে বলে?
মনে করুন, আমার একটি বার্গারের দোকান আছে। আমি বিভিন্ন প্রকারের বার্গার তৈরি করে থাকি। আমি আপনার সাথে কন্টাক্ট করলাম যে, আপনি যদি আমাকে কাস্টমার এনে দেন এবং সে কাস্টমার যদি আমার দোকান থেকে বার্গার কিনে তবে আপনাকে একটা কমিশন দেব। এই পদ্ধতিটাকেই যদি অনলাইনে প্রয়োগ করি তাহলে সেটাই অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং।
এক কথায় বলা যেতে পারে, যদি আপনি কোন কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের সার্ভিস বা প্রোডাক্ট কিছু নিয়ম মেনে মার্কেটিং বা প্রমোট করেন এবং এর মাধ্যমে যদি সেই প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানির প্রোডাক্ট বিক্রি হয় তবে ঐ কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান আপনাকে কিছু কমিশন প্রদান করবে, এই পদ্ধতির মার্কেটিং কেই বলা হয় অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং।
সুতরাং আপনার মার্কেটিং এর উপর কি পরিমাণ প্রোডাক্ট বিক্রি হলো তার উপরেই মূলত অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং নির্ভর করে। আপনার আয় কেমন হবে তার পরিমাণও নির্ভর করবে আপনার মাধ্যমে কত টাকা বিক্রি হল তার উপর।
আপনার পক্ষে কি অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং সম্ভব?
সব মানুষের পক্ষে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এ সফল হওয়া সম্ভব না। আপনার পক্ষে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং সম্ভব হবে কি না এই প্রশ্নের উত্তর আপনি নিচের কয়েকটি লাইন থেকেই পেয়ে যাবেন।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করার জন্য কিছু সূক্ষ্ম বিষয় আছে, এই সূক্ষ্ম বিষয়গুলোর সাথে যদি আপনার চিন্তা ধারা কিংবা ভালো লাগা, বা আপনার মতের মিল হয়ে যায় তবেই আপনার পক্ষে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং সম্ভব।
আর যদি কোনটিও আপনার মতের সাথে না মিলে যায়, কিংবা মন থেকে ভালো না লাগে তবে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং আপনার জন্য না। তবুও যদি শুরু করেন তবে সফলতা আপনার কপালে নাও থাকতে পারে।
আসুন জেনে নেই কি সেই সূক্ষ্ম বিষয়গুলো?
- আমি অনেক আগ্রহের সাথে কম্পিউটারে কাজ করতে পারি এবং অনেক আনন্দ পাই।
- আমি যে ইন্টারনেট লাইন ব্যবহার করি তা আনলিমিটেড এবং যখন যা খুশি তাই দেখতে পাই।
- আমার প্রিন্টার ব্যবহার করি কিংবা যে কোন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আমার কম্পিউটারে জমা করে রাখতে পারি।
- নির্দ্বিধায় কাজ করার জন্য আমার সুন্দর পরিবেশের একটি জায়গা আছে। সেখানে কেউ আমাকে বিরক্ত করতে পারবে না।
- আমি প্রচুর স্বপ্ন দেখি, আমি খুব ভালবাসি স্বপ্ন দেখতে। এবং আপ্রান চেষ্টা করি স্বপ্ন গুলো বাস্তবে রূপান্তর করতে।
- ইংরেজি ভাষা সম্পর্কে আমার ভালো জ্ঞান আছে, যেকোনো ইংরেজি লেখা কিংবা পত্রিকা পড়লে তা সহজেই বুঝতে পারি এবং গ্রামার অনুসারে লিখতে পারি।
- নতুন নতুন বিষয় নিয়ে চিন্তা করতে এবং সে বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করতে ভালো লাগে।
- যেকোনো কাজ আমি খুব ভালোভাবে করতে পছন্দ করি, যদি কোন ভুল থাকে তবে সহজেই আমার চোখে পড়ে যায়।
- যে কোন কিছুর থেকে আমি আমার কাজকে বেশি মূল্যায়ন করি।
- যেকোনো কাজ শেষ না করা পর্যন্ত আমি হাল ছেড়ে দেই না।
- প্রতিদিন আমি অন্তত ৩ ঘণ্টা করে আফিলিয়েট মার্কেটিং এর কাজ গুলো করতে পারব, এতে আমার কোন সমস্যা হবে না।
- কাজ শেখার জন্য ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা খরচ করতে আমার কোন সমস্যা নেই।
- ইনকাম করার পূর্বে কাজ শেখাটাই আমার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
- যেকোনো মানুষের চরিত্র কিংবা মন মানসিকতা বা স্বভাব সম্পর্কে আমার জানার আগ্রহ বেসি এবং জানতে পছন্দ করি।
- যে কোন তথ্য বা নতুন কোন কিছু জানার জন্য অন্যের সাহায্য না নিয়ে গুগলে খুঁজে বের করার চেষ্টা করি।
- খুব তারাতারি লাখপতি, কিংবা কোটিপতি হওয়ার ইচ্ছে নেই, টাকার প্রতি লোভ কাজ করে না।
- অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং আমার দ্বারা সম্ভব এবং আগামি বছরের মধ্যেই আমি একজন সফল অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার হবই।
উপরের কথাগুলো যদি আপনার মনের সাথে মিলে যায় তবে ইনশাআল্লাহ আপনি অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এ সফল হবেন।
কিভাবে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং শুরু করা যায়?
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং শুরু করার পূর্বে যে বিষয়গুলো সম্পর্কে জ্ঞান রাখা খুবই জরুরী
১. নিশ
ইন্ডাস্ট্রিকে মূলত নিশ বলা হয়ে থাকে। একটি মার্কেটে যেমন বিভিন্ন ক্যাটাগরির দোকান থাকে যেমন, খাবার দোকান, মোবাইল এর দোকান, কাপড়ের দোকান, জিম, মুদির দোকান, মাংশের দোকান, মাছের দোকান ইত্যাদি।
ঠিক তেমনি ওয়েব এও এরকম ওয়েবসাইট রয়েছে, যেমন খাবারের ওয়েবসাইট, কাপড়ের ওয়েবসাইট, জিম রিলেটেড ওয়েবসাইট, কসমেটিক প্রডাক্টের ওয়েবসাইট ইত্যাদি।
কাপড়ের ওয়েবসাইট হলে এখানে নিশ বলা হয় কাপড় বা ড্রেস কে। যদি খাবারের ওয়েবসাইট হয় তবে নিশ হবে ফুড, যদি একটি নিদ্রিস্ট টুলস এর ওয়েবসাইট হয় যেমন Hedge Trimmer তাহলে এখানে নিশ হচ্ছে Hedge Trimmer. আবার যদি বাগানের যন্ত্রপাতি সম্পর্কিত ওয়েবসাইট হয় তবে নিশ হবে Gardening Tools.
মোট কথা হলো- আমরা অফলাইনে যাকে বলি ইন্ডাস্ট্রি, সেটাকে অনলাইনের ভাষায় বলা হয় নিশ। একটি নিশকে ভেংগে আরও ভিতরে গেলে আরও নিশ পাওয়া যেতে পারে।
যেমন আপনার ফুড রিলেটেড ওয়েবসাইট আছে এখানে ফুড হল নিশ। যদি আপনি বার্গার রিলেটেড ওয়েবসাইট তৈরি করেন তবে সেখানে নিশ হবে বার্গার। সহজ বেপার, তালগোল পাকানোর কিছুই নেই।
২. নিশ কিভাবে নির্বাচন করবেন?
লাভজনক নিশ নির্বাচন করতে এমন কতোগুলো বিষয় আছে যেগুলোর উপর নজর দিতেই হবে।
ধরুন আপনি একটি নিশ নির্বাচন করলেন এবং সেটি নিয়ে কাজ শুরু করে দিলেন। ১ বছর অক্লান্ত পরিশ্রম করলেন কিন্তু কোন ফল পেলেন না, এমন হলে তো বিপদ।
তাই এমন টা যেন না হয় এবং আপনার পরিশ্রমের যেন যথার্থ মূল্য পান সেই কথা চিন্তা করে কিছু সিক্রেট টিপস আপনাদের পরবর্তীতে দেব যার মাধ্যমে আপনি খুব সহজে প্রফিট্যাবল নিশ সিলেক্ট করতে পারবেন।
৩. কোথায় পাবেন পছন্দের নিশ
নতুনদের জন্য সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো নিশ খুঁজে পাওয়া। ভালো এবং মান সম্মত নিশ নিয়ে তারা পড়ে যায় দুশ্চিন্তায়।
কোন ব্যাপার না, যে সকল ওয়েবসাইট এ অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করার সুযোগ রয়েছে গুগল থেকে সেগুলর একটা লিস্ট বের করে ফেলুন। তারপর হাজার হাজার প্রোডাক্ট থেকে বেছে নিন আপনার পছন্দের প্রোডাক্ট বা নিশ।
বাংলাদেশে সবচেয়ে জনপ্রিয় হচ্ছে আমাজন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং। এছাড়াও অনেকেই বিভিন্ন ভাবে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে থাকে।
তবে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং ক্যারিয়ার শুরু করতে হলে Click Bank দিয়ে শুরু করা উচিৎ, কারণ এটা অনেক সহজ অথবা আমাজন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং ও শুরু করতে পারেন।
আপনাদের সুবিধার জন্য নিচে কয়েকটি জনপ্রিয় অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং সাইট এর নাম দিয়ে রাখলাম, চাইলে নোট করে রাখতে পারেন-
৪. নির্বাচিত নিশ নিয়ে কিভাবে মার্কেটিং করবেন? এবং কিভাবে আয় করা যাবে?
আপনার নির্বাচিত নিশ এর মার্কেটিং করার জন্য কয়েকটি পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারেন।
ইমেইল মার্কেটিং
মানুষের কাছ থেকে কিংবা বিভিন্ন ব্লগ থেকে ইমেইল এড্রেস সংগ্রহ করুন। তারপর আপানার নিশ সম্পর্কে সঠিক তথ্য দিয়ে সুন্দর মেইল লিখে তাদের মেইল এ পাঠিয়ে দিন।
শত শত মেইল একসাথে পাঠানোর জন্য Mailchimp নামক একটি ফ্রী টুলস ব্যবহার করতে পারেন। ইমেইল মার্কেটিং সম্পর্কে ভালোভাবে শিখতে চাইলে ভালো কোন প্রতিষ্ঠান হতে ছোট একটি কোর্স করে নিতে পারেন।
ব্লগ বা ওয়েবসাইট
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করার জন্য সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো নিজস্ব ব্লগ বা ওয়েবসাইট এর মাধ্যমে মার্কেটিং করা। আপনার ওয়েবসাইট বা ব্লগে নিয়মিত আপনার নির্বাচিত নিশ নিয়ে লেখা লেখি করুন।
তারপর ব্লগ বা ওয়েবসাইট এর এসইও করে আপনার ওয়েবসাইটকে নিয়ে আসুন সার্চ ইঞ্জিনের প্রথম পেইজে। তাহলে অনেক কম পরিশ্রমে অনেক বেশি আয় করতে পারবেন ঘরে বসে থেকেই। এসইও নিয়ে আমার লেখা আর্টিকেলগুলো পড়লে আশা করি অনেক উপকার পাবেন।
ইউটিউব
ইউটিউব এর মাধ্যমে আপনার নিশ প্রমোট করতে হলে আপনাকে একটি ইউটিউব চ্যানেল খুলতে হবে এবং আপনার নিশ সম্পর্কিত ভিডিও তৈরি করে সেখানে আপলোড করতে হবে।
ভিডিওগুলো যেন মান সম্মত হয় এবং ভিজিটর যেন ভিডিও থেকে উপকার পায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
ফেসবুক
ফেসবুক ব্যবহার করে বর্তমানে অনেকেই অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং সফলতার সাথে করে যাচ্ছে। এর জন্য আপনাকে একটি ফেসবুক পেইজ তৈরি করতে হবে।
সেখানে আপনার প্রোডাক্ট সম্পর্কে লেখা লেখি করতে পারেন। আপনার পোস্টগুলো বিভিন্ন গ্রুপে শেয়ার করতে পারেন এমনকি প্রোডাক্ট এর ভিডিও পোস্ট করতে পারবেন।
আজকে এ পর্যন্ত, আগামীতে আবার হাজির হব নতুন কোন টপিকস নিয়ে। আপনার কোন প্রশ্ন কিংবা পরামর্শ থাকলে কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করুন, উত্তর দেব ইনশাআল্লাহ। ধন্যবাদ!
লিখেছেন,
আরও পড়ুন,
*নিচের বাটনে ক্লিক করে আপনার প্রিয়জনদের সাথে শেয়ার করুন*