মানুষের বয়স বাড়ার সাথে সাথে মাথার চুল উঠে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। চুল উঠে যাচ্ছে বলে অনেকের চিন্তার কোন শেষ নেই। কেউ ডাক্তারের কাছেও যাচ্ছে চুল পড়া বন্ধ করতে।
অনেকেই অবশ্য প্রাকৃতিক উপায় খুঁজছেন। কিভাবে প্রাকৃতিক উপায়ে চুল পড়া রোধ করা যায়? বা কিভাবে প্রাকৃতিকভাবে চুলের স্বাস্থ্য ঠিক রাখা যায়?
চুলের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে এবং চুলের দ্রুত বৃদ্ধি করতে ব্যবহার করতে পারেন সবার পরিচিত এবং সহজলভ্য জবা ফুল।
চুলের যত্নে জবা ফুল এর ব্যবহার আদিকাল থেকেই চলে আসছে। চুলের যত্নে জবা ফুলের পাতাও বেশ কার্যকরী।
চুল পড়া প্রতিরোধ করতে আপনি কি প্রাকৃতিক উপায় খুঁজছেন? চুল পড়া রোধে জবা ফুল আপনাকে দিতে পারে চমৎকার সমাধান।
প্রতিদিন মানুষের ৫০ থেক ৬০ টি চুল আপনা আপনি উঠে যায় এবং নতুন চুল গজায়। যদি উঠে যাওয়া চুল আর না গজায় তাহলেই বিপদ।
চিন্তার কোন কারণ নেই, নতুন চুল গজাতে জবা ফুল এর ব্যবহার করতে পারেন চোখ বন্ধ করেই। এখন একটি প্রশ্ন হয়তো মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে,
কিভাবে চুলের যত্নে জবা ফুল ব্যবহার করব? বা চুলের যত্নে জবা ফুলের পাতা কিভাবে ব্যবহার করব?
কোন চিন্তা নেই, জবা ফুলের হেয়ার প্যাক তৈরি সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া জেনে নিতে পারবেন এখান থেকেই। চলুন আর দেরি না করে জেনে নেই, চুলের যত্নে জবা ফুল এর ব্যবহার।
সুচীপত্র
চুলের যত্নে জবা ফুলের ব্যবহার
নিচের কয়েকটি পয়েন্ট ভালো করে দেখে নিলে খুব সহজেই চুলের যত্নে জবা ফুল এবং চুলের যত্নে জবা ফুলের পাতার ব্যবহার সম্পর্কে জেনে নিতে পারবেন। আসুন জেনে নেই বিস্তারিত।
১. চুলের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে
চুলের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে জবা ফুলের পাতার কোন জুরি নেই। চুলের যত্নে জবা ফুলের পাতার ব্যবহার করার জন্য আপনাকে একটু কষ্ট করতে হবে
তবে আহামরি কোন ব্যাপার না। সেটি হল, জবা ফুলের পাতার হেয়ার প্যাক তৈরি। জবা ফুলের পাতার হেয়ার প্যাক খুব সহজেই তৈরি করা যায়।
এর জন্য আপনাকে কয়েকটি জবা ফুলের পাতা ভালো করে পেস্ট করে নিতে হবে এবং এতে ৩ থেকে ৪ টেবিল চামচ টক দই ভালোভাবে মেশাতে হবে। ব্যাস তৈরি হয়ে গেল জবা ফুলের পাতার হেয়ার প্যাক।
এরপর এই মিশ্রণটি হাতের তালুর সাহায্যে পুরো মাথায় ভালোভাবে লাগিয়ে নিন। ১ ঘণ্টা পর হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন, এক্ষেত্রে শ্যাম্পু ব্যবহার করলে মন্দ হয় না।
চুলের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে এবং চুলের বৃদ্ধি তরান্বিত করতে জবা ফুলের পাতার হেয়ার প্যাকটি ব্যবহার করতে পারেন অনায়াসেই।
২. চুলের বৃদ্ধি দ্রুত করতে
বয়স বাড়ার সাথে সাথে চুলের পুষ্টি কমে যেতে থাকে ফলে পুষ্টিহীনতার কারণে বৃদ্ধি কমে যায়। অনেকেই এই সমস্যায় ভুগছেন এবং এর থেকে পরিত্রান পেতে চুল দ্রুত বৃদ্ধি করার প্রাকৃতিক উপায় খুঁজছেন।
এ ক্ষেত্রে চুলের দ্রুত বৃদ্ধির জন্য এবং চুলের পুষ্টি নিশ্চিত করতে ব্যবহার করতে পারেন জবা ফুল। তবে এর জন্য আপনাকে একটি মিশ্রন তৈরি করে নিতে হবে।
মিশ্রণটি তৈরি করতে প্রথমে আপনাকে ৯ থেকে ১০ টি জবা ফুল এবং পাতা নিয়ে তা পেস্ট করতে হবে।
তারপর পেস্টটি এককাপ বিশুদ্ধ নারিকেল তেলে ভালোভাবে মেশাতে হবে। মেশানো হয়ে গেলে সিদ্ধ করে নিতে হবে।
সিদ্ধ করা হয়ে গেলে তা ঠাণ্ডা করে ব্যবহার উপযোগী করতে হবে। ঠাণ্ডা হয়ে গেলে পুরো মাথায় মেখে রেখে দিন ৩০ মিনিট থেকে ৪০ মিনিট। তারপর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
এই প্যাকটি বাতাস প্রবেশ করে না এমন পাত্রে সংরক্ষন করে নিয়মিত ব্যবহার করা যাবে অনায়াসে। এটি ব্যবহারের ফলে চুলের পুষ্টিহীনতা দূর হবে এবং চুলের দ্রুত বৃদ্ধি হবে।
৩. চুলকে ঝলমলে করতে
ছেলে কিংবা মেয়ে বর্তমানে প্রায় সবাই চায় চুল ঝলমলে হোক আর তার জন্য প্রতিদিন ৩ টাকা থেকে ৫ টাকা বা তারও বেশী খরচ করতে হয়।
বাজারে যে কন্ডিশনার কিনতে পাওয়া যায় তা পুরোটাই কেমিক্যাল হওয়ায় অনেকেই প্রাকৃতিক উপায় পছন্দ করে থাকেন।
প্রাকৃতিক উপায়ে চুল কন্ডিশনিং করতে ব্যবহার করতে পারেন জবা ফুল। এই প্যাকটি তৈরি করার জন্য আপনাকে ৮ থেকে ১০ টি জবা ফুল সংগ্রহ করে একটি গাঢ় পেস্ট তৈরি করতে হবে।
এর সাথে অন্য কোন কিছু না মিশিয়ে সরাসরি এই পেস্টটি হাতের তালুর সাহায্যে মাথায় লাগিয়ে নিন। এক ঘণ্টা পর হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
চুলকে কন্ডিশনিং অর্থাৎ চুল ঝলমলে করতে নিশ্চিন্তে ব্যবহার করতে পারেন জবা ফুলের এই প্যাকটি।
৪. চুল স্বাস্থ্যোজ্জ্বল করতে
চুল স্বাস্থ্যোজ্জ্বল করতে জবা ফুলের পাতার ব্যবহার বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত। এই প্যাকটি তৈরি করতে ৩ থেকে ৪ টেবিল চামচ জবা ফুলের পাতার গুঁড়া এর সাথে ৩ টেবিল চামচ আমলা পাউডার একত্রে মিশিয়ে প্যাক তৈরি করতে হয়।
এই মিশ্রণের সাথে আমলার পাউডার ব্যবহারের পরিবর্তে আমলার রসও ব্যবহার করা যেতে পারে।
এরপর মিশ্রণটি হাতের তালুতে নিয়ে মাথায় ভালোভাবে মেখে নিয়ে ৪০ থেকে ৫০ মিনিট অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেলুন।
নিয়মিত এই প্যাকটি ব্যবহার করলে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুল পেয়ে যাবেন খুব সহজেই।
৫. চুলের খুশকি দূর করতে
চুলে খুশকি হলে কম বেশি সবাই দুশ্চিন্তায় পড়ে যায়। অনেকে খুশকি দূর করতে অ্যান্টি ড্যান্ড্রাফট শ্যাম্পু ব্যবহার করে থাকেন।
আবার অনেকেই উপকার না পেয়ে প্রাকৃতিক উপায় খুঁজে থাকেন। এক্ষেত্রে মেথি বীজ এবং শুঁকনো জবা ফুলের পাতা আপনাকে সাহায্য করতে পারে।
এই প্যাকটি তৈরি করার জন্য এক চামচ মেথি বীজ ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে। তারপর শুঁকনো জবা পাতা এবং ভিজিয়ে রাখা মেথি বীজ একসাথে বেটে একটি পেস্ট তৈরি করতে হবে।
পেস্ট তৈরি হয়ে গেলে এর সাথে বাটার মিল্ক মেশাতে হবে। এরপর হাতের সাহায্যে পুরো মাথায় লাগিয়ে ২০-৩০ মিনিট রেখে দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
চুলের যত্নে জবা ফুলের পাতার সাথে মেহেদি পাতা গুড়ো করে এর সাথে ১ চামচ পরিমাণ লেবুর রস মিশিয়ে মিশ্রণ তৈরি করুন।
এই মিশ্রণটি নিয়মিত ব্যবহার করলে মাথার খুশকি দূর হবে পাশাপাশি চুল ঝলমলে করতে সাহায্য করবে।
চুলের যত্নে জবা ফুল আপনাকে অনেকভাবে সাহায্য করতে পারে যদি সঠিকভাবে প্যাকগুলো তৈরি করতে পারেন। শুধু চুলের যত্নই নয় বরং নতুন চুল গজাতে জবা ফুল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
পরিশেষে বলা যায় চুলের যত্নে প্রাকৃতিক উপায় অবলম্বন করুন এবং চুলকে রাখুন নিরাপদ।
আরও পড়ুন,
*লেখাটি শেয়ার করার অনুরোধ রইলো*