প্রচণ্ড গরমে মানুষের স্বাভাবিক চলাচল ব্যহত হওয়ার পাশাপাশি দেখা দেয় বিভিন্ন ধরণের অসুখ। বিভিন্ন ধরণের অসুস্থতার মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক হচ্ছে হিটস্ট্রোক এছাড়াও অতিরিক্ত গরমের কারণে কারো কারো বদ হজম হয়ে থাকে।
অতিরিক্ত গরমে যারা শারীরিক পরিশ্রম করে থাকেন তাদের অসুস্থ হওয়ার প্রবনতা সবচেয়ে বেশী। দেখা দিতে পারে পানি স্বল্পতা, চামড়া পুড়ে যাওয়া, ফুড পয়জনিং বা খাবারে বিষক্রিয়ার কারণে হতে পারে বমি বা ডায়রিয়া।
এছাড়াও হতে পারে সর্দি জ্বর, অ্যালার্জি, বিষণ্ণতা, অবসাদ, ঘামাচি ইত্যাদি।
এসব অসুস্থতাকে ওভারকাম করেই গরমকালে মানুষকে বেঁচে থাকতে হয়। অতিরিক্ত গরমের কারণে উপরোক্ত অসুস্থতা থেকে খুব সহজেই একজন মানুষ রেহাই পেতে পারে।
আসুন জেনে নেই, অতিরিক্ত গরমে সুস্থ থাকার উপায়।
সুচীপত্র
- অতিরিক্ত গরমে সুস্থ থাকার উপায়
- ১. প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি পান করুন
- ২. খাবার স্যালাইন খান
- ৩. রেড মিট পরিহার করুন
- ৪. সবুজ শাক সবজি খান
- ৫. টক জাতীয় ফল খান
- ৬. টক দই খান
- ৭. প্রতিদিন গোসল করুন
- ৮. ঘরেই অবস্থান করুন
- ৯. শারীরিক পরিশ্রম কমিয়ে দিন
- ১০. পাতলা সুতি কাপড় পরিধান করুন
- ১১. পারফিউম ব্যবহারে সতর্ক থাকুন
- ১২. ধূমপান পরিত্যাগ করুন
- ১৩. চা কফি পরিত্যাগ করুন
- ১৪. শান্ত থাকুন
- ১৫. ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখুন
অতিরিক্ত গরমে সুস্থ থাকার উপায়
নিচের কয়েকটি বিষয়ে সতর্ক থাকলে এবং কিছু নিয়ম মেনে চললে প্রচণ্ড গরমে সুস্থ থাকা সম্ভব। আসুন আর কথা না বাড়িয়ে জেনে নেই মাত্রাতিরিক্ত গরমে সুস্থ থাকার উপায়।
১. প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি পান করুন
অতিরিক্ত গরমে শরীর থেকে স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশী ঘাম হয়ে থাকে ফলে দেখা দিতে পারে পানিস্বল্পতা। শরীরের অভ্যন্তরে পানির পরিমাণ কমে গেলে ডিহাইড্রেশন হতে পারে।
শরীরের পানিস্বল্পতা দূর করতে প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ খাবার পানি পান করা উচিৎ। প্রচণ্ড গরমে সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে পানি পান করার উপকারিতা রয়েছে অনেক।
বিশুদ্ধ খাবার পানি পান করার পাশাপাশি পান করতে পারেন বাসায় তৈরি ফলের জুস কিংবা কচি ডাবের পানি। শরীরের ত্বককে সতেজ রাখতে পানি, শরবত বা জুস পানের জুড়ি নেই।
অতিরিক্ত গরমে প্রতিদিন অন্তত ৩ থেকে ৪ লিটার বিশুদ্ধ পানি পান করলে ডিহাইড্রেশন এবং পানিস্বল্পতা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব।
২. খাবার স্যালাইন খান
প্রচণ্ড গরমে ঘামের সাথে শরীর থেকে প্রয়োজনীয় লবন বের হয়ে যায় ফলে শরীর অনেক বেশী দুর্বল হয়ে পড়ে। এর থেকে পরিত্রাণ পেতে খাবার স্যালাইন খেতে পারেন।
বিকেলের দিকে খাবার স্যালাইন গ্রহণ করলে অতিরিক্ত ঘামেও শরীরে সতেজতা ফিরে আসে। অনেকেই স্বাদযুক্ত স্যালাইন খেয়ে থাকেন যেমন, টেস্টি স্যালাইন। ভুলেও এসব খেতে যাবেন না। এক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো হচ্ছে ওরস্যালাইন খাওয়া।
তবে যাদের উচ্চরক্তচাপ আছে তাদের ক্ষেত্রে খাবার স্যালাইন খাওয়ার পূর্বে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিৎ।
৩. রেড মিট পরিহার করুন
অতিরিক্ত গরমে গরুর, ছাগলের মাংস খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিৎ। কারণ গরমকালে বা অতিরিক্ত গরমে গরুর মাংস খেলে শরীরের তাপমাত্রা অনেক বেশী বেরে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
গরু ছাগলের মাংস পরিহার করে খেতে পারেন মাছ। আর হ্যাঁ অতিরিক্ত গরমে অবশ্যই অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন।
৪. সবুজ শাক সবজি খান
প্রচণ্ড গরমে শরীরকে সুস্থ রাখতে খেতে পারেন প্রচুর পরিমাণে সবুজ শাক সবজি। সবুজ শাক সবজিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন মিনারেল এবং খনিজ উপাদান থাকায় অতিরিক্ত ঘামেও শরীর অসুস্থ হয়ে পড়ার সম্ভাবনা কমে যায়।
এছাড়াও খেতে পারেন তরমুজ যা শরীরে তাৎক্ষণিক এনার্জি দিতে পারে।
৫. টক জাতীয় ফল খান
প্রচন্ত গরমে সুস্থ থাকার উপায় হিসেবে খেতে পারেন টক জাতীয় ফল। যেমন তেতুল, লেবু, কামরাঙ্গা, আমরা ইত্যাদি। তবে অতিরিক্ত টক ফল খাওয়া উচিৎ নয়।
কারও যদি এসিডিটি সমস্যা থাকে তবে টক জাতীয় ফল খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। টক জাতীয় ফল অবশ্যই খালি পেটে খাবেন না, এতে আরও বেশী অসুস্থ হয়ে পারেন।
৬. টক দই খান
অতিরিক্ত গরমে সুস্থ থাকতে খেতে পারেন টক দই। যারা রোদে কাজ করে বিশেষ করে তাদের জন্য অনেক উপকারী এই টক দই।
রোদের প্রচণ্ড তাপ থেকে শরীরকে কিছুটা হলেও রক্ষা করতে পারে টক দই। টক দই শরীরের ভিতরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে।
৭. প্রতিদিন গোসল করুন
গরমকালে প্রতিদিন অন্তত একবার গোসল করার চেষ্টা করুন। যদি সম্ভব হয় তবে দিনে দুইবার গোসল করুন। গোসল করার ক্ষেত্রে একটু সাবধানতা অবলম্বন করা উচিৎ।
বাহির থেকে এসে রেস্ট না নিয়ে ভুলেও গোসল করতে যাবেন না। কারণ হটাত গরম থেকে এসে গোসল করলে ঠাণ্ডা লেগে যেতে পারে।
৮. ঘরেই অবস্থান করুন
অতিরিক্ত গরমে খুব প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের না হওয়াই ভালো। যদিও বিভিন্ন কারণে আমাদের বাহিরে বের হতে হয়, এক্ষেত্রে রোদ থেকে শরীরকে বাঁচাতে ছাতা ব্যবহার করুন। যতটুকু সম্ভব ছায়াযুক্ত স্থানে থাকুন।
৯. শারীরিক পরিশ্রম কমিয়ে দিন
গরমকালে অনেকেই অতিরিক্ত ব্যায়াম করে থাকেন এমনটি করা মোটেও উচিৎ নয় কারণ অতিরিক্ত গরমে শরীরের তাপমাত্রা একটু বেশী থাকে।
এই অবস্থায় যদি কেউ ব্যায়াম করে তাহলে শরীরের তাপমাত্রা আরও বেড়ে যাবে। যা সুস্থ থাকার চেয়ে অসুস্থতাই ডেকে নিয়ে আসতে পারে।
তাই বলে একেবারেই ব্যায়াম করা বন্ধ করে দিলে শরীর ফিট থাকবে না। তাই সীমিত পরিসরে ব্যায়াম চালিয়ে যেতে হবে। অতিরিক্ত ব্যায়াম করে ঘেমে একাকার হয়ে যাওয়ার চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলাই উত্তম।
১০. পাতলা সুতি কাপড় পরিধান করুন
গরমে পাতলা সুতি কাপড় পরিধান করা উচিৎ। সেই কাপরের রং যদি হয় সাদা তবে তো কোন কথাই নেই। কারণ সাদা কাপড় তাপ শোষণ করে না বরং তাপের প্রতিফলন ঘটায় এবং গরম কম অনুভূত হয়।
অতিরিক্ত গরমে কালো বা ভারী রঙয়ের কাপড় পরিধান করা হতে বিরত থাকুন কারণ কালো বা ভারী রঙয়ের কাপড় তাপ শোষণ করে এবং গরম তুলনামূলক বেশী অনুভূত হয়।
১১. পারফিউম ব্যবহারে সতর্ক থাকুন
অতিরিক্ত গরমে ঘামের দুর্গন্ধ থেকে রক্ষা পেতে অনেকেই সুগন্ধি বা পারফিউম ব্যবহার করে থাকেন। তবে অতিরিক্ত গরমে কড়া পারফিউম ব্যবহার না করাই উত্তম কারণ, কড়া পারফিউম গরম লাগার ভাব বৃদ্ধি করে দেয়।
এক্ষেত্রে ব্যবহার করতে পারেন হালকা গন্ধের পারফিউম। বাজারে কিছু পারফিউম পাওয়া যায় যেগুলো ঠাণ্ডা ভাব এনে দেয়, সে পারফিউম ব্যবহার করলে মন্দ হয় না।
১২. ধূমপান পরিত্যাগ করুন
আমাদের মধ্যে অনেকেরই ধূমপানের মত বদ অভ্যাস রয়েছে। ধূমপান করলে সাধারণত শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় বেড়ে যায়।
তাই প্রচন্ত গরমে সুস্থ থাকতে ধূমপান পরিত্যাগ করা উচিৎ। যদিও এই অভ্যাসটি খুব সহজে পরিত্যাগ করা সম্ভব নয় তাই যতটুকু সম্ভব ধূমপান কমিয়ে আনার চেষ্টা করুন।
জেনে নিন, ধূমপান ছাড়ার সহজ কৌশল।
১৩. চা কফি পরিত্যাগ করুন
চা, কফি কিংবা অ্যালকোহল পান করলে শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। আর অতিরিক্ত গরমে যদি চা, কফি কিংবা অ্যালকোহল গ্রহণ করা হয় তাহলে শরীরের তাপমাত্রা অতিরিক্ত মাত্রায় বৃদ্ধি পায় ফলে হতে পারে হিটস্ট্রোক।
তাই প্রচণ্ড গরমে চা কফি বা অ্যালকোহল গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকা উচিৎ।
১৪. শান্ত থাকুন
মেজাজ গরম হলে শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় কিছুটা বৃদ্ধি পায়। আর অপরদিকে অতিরিক্ত গরমে তো শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়ই।
রাগের কারণে শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং অতিরিক্ত গরমের কারণে তাপমাত্রা বৃদ্ধি, এই দুই বৃদ্ধি একসাথে হয়ে গেলে কি অবস্থা হবে একবার হলেও ভেবে দেখুন।
তাই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা অতিরিক্ত গরমে শান্ত থাকার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। বিশেষ করে যাদের হার্টের সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য শান্ত থাকাটা অপরিহার্য।
জেনে নিন, নিজের মনকে নিয়ন্ত্রণ করার সহজ উপায়।
১৫. ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখুন
যত দিন যাচ্ছে উচ্চরক্তচাপ রুগীর সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। আবার প্রচণ্ড গরমে অতিরিক্ত ঘামের কারণে ব্লাড প্রেসার কমে যেতে পারে। গরমকালে ব্লাড প্রেসার যেন স্বাভাবিক থাকে সেদিকে মনযোগী হওয়া একান্ত প্রয়োজন।
অতিরিক্ত ঘামের কারণে অনেকেরই মাথা ঘোরা শুরু হয়, এর কারণ হচ্ছে শরীরে পানি অল্পতার কারণে রক্তের স্বাভাবিক চলাচল ব্যাহত হয়। এর থেকে পরিত্রাণ পেতে প্রচুর পানি পান করা দরকার।
পানি পানের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা বলেন, একেবারে অধিক পরিমাণে পানি পান করা উচিৎ নয় বরং ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা অন্তর অন্তর অল্প অল্প করে পানি পান করা উচিৎ, এতে কিডনি এবং শরীরের অন্যান্য ভাইটাল অঙ্গসমুহ সুরক্ষিত থাকে।
তো বন্ধুরা আজকে আমরা জেনে নিলাম প্রচণ্ড গরমে সুস্থ থাকার উপায়। আর নয় চিন্তা, উপরের কাজগুলো নিয়ম করে করতে পারলেই অতিরিক্ত গরমে শরীরকে সুস্থ রাখা সম্ভব।
আজ এই পর্যন্ত, আগামীতে দেখা হবে নতুন কোন বিষয় নিয়ে। ততদিনে ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন এটাই কামনা।
আরও পড়ুন,
*পোস্টটি শেয়ার করার অনুরোধ রইলো*