বাসা বাড়ি, মার্কেট কিংবা অফিস সব জায়গায় এখন ওয়াইফাই রাউটারের ব্যবহার। তার বিহীন ইন্টারনেট এর একটি প্রধান মাধ্যম হচ্ছে রাউটার। এই ওয়াইফাই রাউটারগুলো বিভিন্ন রেঞ্জের হয়ে থাকে।
যেমন, লং রেঞ্জ ওয়াইফাই রাউটার, শর্ট রেঞ্জ রাউটার। আবার কোন কোম্পানির রাউটার ভালো এই প্রশ্ন অনেকের মাথায় ঘুরপাক খায়।
তাই রাউটার কেনার পূর্বে জেনে নেয়া প্রয়োজন কোন ধরণের রাউটার আপনার জন্য বা আপনার প্লেস এর জন্য উপযুক্ত।
আমাদের মাঝে অনেকেই যাচাই বাছাই না করে ওয়াইফাই রাউটার কিনে থাকি এবং কয়েকদিন পর ভালো ফলাফল না পাওয়ার কারণে পরিবর্তন করতে বাধ্য হই।
তাই কোন জায়গার জন্য কেমন রাউটার কেনা উচিৎ সেটা জেনে রাখা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
একটি ব্রান্ডের বিভিন্ন মডেলের রাউটার রয়েছে, ঠিক কোন মডেলটি আপনার জন্য উপযুক্ত হবে সেটা কখন ভেবে দেখেছেন? ভেবে দেখা হয়নি, তাই অনেক সময় দোকানদারের উপর নির্ভর হয়ে ওয়াইফাই রাউটার কিনতে হয়।
আসুন জেনে নেই, রাউটার কেনার পূর্বে যে বিষয়গুলো মাথায় রাখা প্রয়োজন।
সুচীপত্র
ওয়াইফাই রাউটার কেনার পূর্বে যে বিষয়গুলো জানা দরকার
রাউটার রেঞ্জ নিয়ে চিন্তার শেষ নেই। লং রেঞ্জ ওয়াইফাই রাউটার ভালো নাকি শর্ট রেঞ্জ রাউটার ভালো? আবার কোন কোম্পানির রাউটার ভালো?
এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে অনেকেই দিশেহারা। ওয়াইফাই রাউটার কেনার পূর্বে সবার একটি কমন প্রশ্ন থাকে, রাউটার ভালো কোনটা? চলুন রাউটার নিয়ে জেনে নেয়া যাক বিস্তারিত।
১. সিঙ্গেল ব্যান্ড ও ডুয়াল ব্যান্ড রাউটার
ফ্রিকুয়েন্সি এর ভিত্তিতে রাউটারগুলোকে প্রধানত দুইভাগে ভাগ করা যায়। একটি হচ্ছে ২.৪ GHz এবং অপরটি হচ্ছে ৫ GHz. সিঙ্গেল ব্যান্ডের রাউটারগুলো মূলত ৫ GHz অথবা ২.৪ GHz ফ্রিকুয়েন্সিতে কাজ করে।
অপরদিকে ডুয়াল ব্যান্ডের রাউটারগুলো ৫ GHz অথবা ২.৪ GHz উভয় ফ্রিকুয়েন্সিতে কাজ করে থাকে। তার মানে হচ্ছে ডুয়াল ব্যান্ডের রাউটার ৫ GHz অথবা ২.৪ GHz উভয়কেই সমর্থন করে থাকে।
ওয়াইফাই রাউটার কেনার পূর্বে এ কথা মাথায় রাখা জরুরী যে, কিছু ডিভাইস আছে যেগুলো শুধুমাত্র সিঙ্গেল ব্যান্ডে কানেক্ট হয় আবার কিছু কিছু ডিভাইস ছে যেগুলো ডুয়াল ব্যান্ডে কানেক্ট হয়।
তাই উন্নত মানের কানেক্টিভিটির জন্য ডুয়াল ব্যান্ড রাউটারকে বেছে নেয়া বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
কোন ধরণের রাউটার ভালো কাজ দেবে তা অনেক সময় এলাকার উপর নির্ভর করে। ঘন বসতিপূর্ণ এলাকায় সাধারণত ডুয়াল ব্যান্ডের রাউটার ভালো কানেক্টিভিটি দিয়ে থাকে।
কারো যদি হাই স্পীড ইন্টারনেট এর প্রয়োজন না থাকে তবে সিংগেল ব্যান্ডের রাউটার ব্যবহার করা যেতে পারে।
২. ওয়াইফাই রাউটারের স্ট্যান্ডার্ড
বাজারে অনেক স্ট্যান্ডার্ডের ওয়াইফাই রাউটার পাওয়া যায়। আপনার জন্য রাউটার ভালো কোনটা? এমন প্রশ্নের উত্তরে বলা যেতে পারে, বর্তমানে ৮০২.১১ ac স্ট্যান্ডার্ডের রাউটারগুলো অনেক ভালো পারফর্মেন্স দিয়ে থাকে। এবং এটি সবথেকে আপডেট স্ট্যান্ডার্ডের ওয়াইফাই রাউটার।
যদি কখনো দেখা যায় যে, ইন্টারনেট প্রভাইডার আপনাকে ১০ mbps স্পীড দিচ্ছে কিন্তু আপনি স্পীড পাচ্ছেন না, তাহলে নিশ্চিত থাকেন আপনার রাউটারটি ৮০২.১১ ac স্ট্যান্ডার্ডের নয়।
বাজারে ৮০২.১১ n স্ট্যান্ডার্ড এর রাউটার পাওয়া যায় যা ৮০২.১১ ac এর থেকে ভালো পারফর্মেন্স দিতে পারে না। তাই রাউটার কেনার পূর্বে দেখে নিন রাউটারটি ৮০২.১১ ac স্ট্যান্ডার্ডের কিনা।
৩. ওয়াইফাই রাউটার রেঞ্জ (নেটওয়ার্ক রেঞ্জ)
রাউটার কেনার পূর্বে রাউটার রেঞ্জ বা রাউটারের নেটওয়ার্ক রেঞ্জ সম্পর্কে একটু হলেও জেনে রাখা প্রয়োজন। একটি রুমে যদি ওয়াইফাই ব্যবহার করতে চান তবে লং রেঞ্জ ওয়াইফাই রাউটার আপনার জন্য প্রয়োজন নেই।
যদি আপনার বাসার প্রতিটি রুমে ওয়াইফাই কানেকশন পেতে চান তবে লং রেঞ্জ ওয়াইফাই রাউটার ব্যবহার করতে হবে। কত জন ইউজার সে বিষয়টি মাথায় রাখা জরুরী।
ইউজার যদি আপনি একাই হন তবে লং রেঞ্জ ওয়াইফাই রাউটার কেনার দরকার নেই। ইউজার যদি ৪-৫ জন অথবা তারও বেশি হয় তবে লং রেঞ্জ ওয়াইফাই রাউটার আপনার জন্য আবশ্যক।
কারণ লং রেঞ্জ ওয়াইফাই রাউটার না হলে কানেকশন পেতে ঝামেলা হবে আর কানেকশন পেলেও ইন্টারনেটের গতি অনেক ধীর হবে।
উপরের তথ্য মতে এবং আপনার প্রয়োজন অনুসারে সহজেই বাছাই করতে পারবেন আসলে কোন ধরণের রাউটার আপনার প্রয়োজন।
৪. ওয়াইফাই রাউটারের লাইফস্প্যান
বিভিন্ন রাউটারের লাইফস্প্যান ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। কম্পিউটারের হার্ডওয়্যারের থেকে রাউটারের হার্ডওয়্যারগুলো অনেক বেশি প্রেসার নিয়ে থাকে।
যেমন একটি রাউটার অনেক ধরণের ডিভাইসের সাথে কানেক্ট থাকতে পারে, ফলে চাপও থাকে অনেক বেশি। রাউটারের লাইফস্প্যান কম হলে ডিভাইস থেকে ইন্টারনেট কানেকশন ডিসকানেক্ট হয়ে যেতে পারে।
অনেক সময় অনেক ডিভাইসের সাথে কানেক্ট থাকার কারণে ইন্টারনেটের গতি অনেক ধীর হয়ে যায়।
এ কথা সত্যি যে, কম লাইফস্প্যানের রাউটারের তুলনায় বেশি লাইফস্প্যানের রাউটারগুলোর দাম তুলনামূলক বেশি হয়ে থাকে। তবে বেশি লাইফস্প্যান সমৃদ্ধ রাউটারের পারফর্মেন্স অনেক বেশি।
ধীর গতির কারণে বার বার রাউটার পরিবর্তন না করে বেশি লাইফস্প্যান সমৃদ্ধ রাউটার একটু বেশি দাম দিয়ে কেনাই বুদ্ধিমানের কাজ।
৫. ক্লাউড সাপোর্ট
ওয়াইফাই রাউটার কেনার পূর্বে জেনে নিন রাউটারটি ক্লাউড সাপোর্ট করে কিনা। যদি ক্লাউড সাপোর্ট করে তবে আপনি চাইলে বাসা কিংবা অফিসের বাইরে থেকে রাউটার কন্ট্রোল করতে পারবেন।
ক্লাউড সাপোর্ট না করলে বাসা বা অফিসের বাইরে থেকে তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না। যদি আপনি চান যে, আপনার রাউটারটি বাসার বাইরে থেকে নিয়ন্ত্রণ করবেন তাহলে রাউটার কেনার পূর্বে জেনে নিন তা ক্লাউড সাপোর্ট করে কিনা।
৬. VPN সাপোর্ট
আপনার সার্ভার থেকে অন্য কারো সার্ভারে ঢুকতে চাইলে, কিংবা আপনার সার্ভারে অন্য কাউকে এক্সেস দিতে চাইলে VPN সাপোর্ট করে এমন রাউটারের প্রয়োজন পড়ে।
ওয়াইফাই রাউটার যদি VPN সাপোর্ট না করে তবে এই কাজটি করা সম্ভব হবে না। তাই ওয়াইফাই রাউটার কেনার পূর্বে ভেবে দেখুন এমন কাজের প্রয়োজন আপনার আছে কিনা?
৭. বহনযোগ্য রাউটার
ওয়াইফাই রাউটার দুই ধরণের হয়ে থাকে, একটি ব্রডব্যান্ড লাইন দিয়ে চালানো যায় এবং অপরটি সিম দিয়ে চালানো যায়। ব্রডব্যান্ড লাইন দিয়ে যেসব রাউটার চালানো হয় সেগুলোকে ইচ্ছে করলে বহন করা যায় না।
অপরদিকে সিম দিয়ে যেসব রাউটার চালানো যায় সেসব রাউটারগুলোকে যেখানে খুশি সেখানে বহন করা সম্ভব।
তবে রাউটারটি ৩জি কিংবা ৪জি সাপোর্ট করে কিনা তা কেনার পূর্বে জেনে নিন এবং ইউএসবি পোর্ট আছে কিনা দেখে নিন, তাহলে মডেম ব্যবহার করতে পারবেন খুব সহজেই।
৮. কোন কোম্পানির রাউটার ভালো?
সত্যি কথা বলতে সব কোম্পানির রাউটার ভালো, তবে আমরা চাহিদা অনুযায়ী কিনতে পারি না তাই মনে হয় অমুক কোম্পানির রাউটার খারাপ।
আপনার চাহিদা অনুযায়ী যেকোনো কোম্পানির রাউটার ব্যবহার করতে পারেন। বাংলাদেশের বাজারে সবচেয়ে ভালো বিক্রি হয় টিপি লিংক পাশাপাশি ডি লিংক রাউটারগুলোও খারাপ না। কেনার পূর্বে অবশ্যই উপরের বিষয়গুলো মাথায় রেখে কিনবেন।
আপনি আসলে কেন রাউটার ব্যবহার করবেন? কত জন ইউজার হবে? ইন্টারনেট স্পীড কেমন প্রয়োজন? কয় রুমের জন্য ব্যবহার করবেন? ইত্যাদি বিষয়গুলো মাথায় রেখে ওয়াইফাই রাউটার কেনা উচিৎ।
তো বন্ধুরা আজ আমরা জানলাম ওয়াইফাই রাউটার রেঞ্জ কেমন হওয়া উচিৎ? লং রেঞ্জ ওয়াইফাই রাউটার কখন প্রয়োজন? কোন কোম্পানির রাউটার ভালো? রাউটার কভারেজ কতটুকু?
এই প্রশ্নগুলোর উত্তর না জেনে রাউটার কেনা ঠিক হবে না। তাই রাউটার কেনার পূর্বে উক্ত প্রশ্নেগুলোর যথাযথ উত্তর জেনেই রাউটার কিনুন এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সাথে থাকুন।
আরও পড়ুন,
*লেখাটি শেয়ার করার অনুরোধ রইলো*