যত দিন যাচ্ছে প্রযুক্তিতে তত এগিয়ে যাচ্ছে বিশ্ব। প্রতিদিন নানা ধরনের প্রযুক্তি আবিষ্কার হচ্ছে এবং মানুষকে তাক লাগিয়ে দিচ্ছে প্রতিনিয়ত।
আগামীতে এমন কিছু প্রযুক্তি আছে যা বিশ্ববাসীকে তাক লাগিয়ে দেবে। এমন কিছু প্রযুক্তি নিয়ে আজকের লেখা। আসুন প্রযুক্তিগুলোর সাথে পরিচিত হওয়া যাক।
সুচীপত্র
যেসব প্রযুক্তি আগামীতে বিশ্বকে মাতিয়ে তুলবে
১. ক্লাউড কম্পিউটিং
পেন্ড্রাইভ এর নাম আমরা কে না জানি? ইতিপূর্বে আমরা বিভিন্ন ডাটা পেন্ড্রাইভে নিয়ে ঘুরাঘুরি করতাম। বর্তমানে এই পেন্ড্রাইভের কাজটি করে দিচ্ছে গুগল ড্রাইভ, ওয়ান ড্রাইভ, কিংবা ড্রপবক্স। এখন আর পেন্ড্রাইভে ডাটা নিয়ে ঘুরাঘুরি করতে হয় না। খুব সহজেই ডাটা ট্রান্সফার করা যায়।
ইউএসবি বা ডাটা ট্রান্সফার এর সকলকিছু বর্তমানে গুগোল ড্রাইভ, ওয়ান ড্রাইভ, ড্রপবক্সসহ অন্যান্য ক্লাউড ভিত্তিক প্রযুক্তিতে পরিবর্তিত হয়েছে। ক্লাউডে কম্পিউটারের বিভিন্ন প্রসেস ব্যবহার করে বিভিন্ন হিসাব নিকাশ বা তথ্য প্রসেস এর ব্যাপারগুলো অনায়াসে করা হচ্ছে ক্লাউডে।
আপনারা ইতিপূর্বে জটিল জটিল হিসাব-নিকাশের জন্য মাইক্রোসফট এক্সেল কিংবা বিভিন্ন সফটওয়্যার ব্যবহার করতেন। এসবকিছুই এখন ক্লাউডের মাধ্যমে করা হচ্ছে। জটিল এনালাইসিস, হিসাব নিকাশ অতি দ্রুততার সাথে এবং নির্ভুলভাবে করা যাবে ক্লাউড কম্পিউটিং এর মাধ্যমে।
বিভিন্ন এনালাইসিস থেকে জানা গেছে যে, ২০১৮ এবং ২০১৯ সালে ক্লাউডের ব্যবহার প্রায় ২৪% বৃদ্ধি পেয়েছে। আপনি হয়তো ভাবছেন সংখ্যাটি অনেক কম? জানলে অবাক হবেন যে, সারা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ক্লাউডে ব্যয় করেছে প্রায় ২১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
২০১৯ সালে ক্লাডের পিছনে যে পরিমাণ টাকা খরচ হয়েছে তা দিয়ে ৩ বছর বাংলাদেশ অনায়াসে চলতে পারবে। চিন্তা করে দেখেন বিশ্বের মানুষ কি পরিমাণ অর্থ ক্লাউডের পিছনে ব্যয় করছে?
ভাবেন তাহলে, আগামীতে ক্লাউড কি পরিমাণ মাতিয়ে রাখবে পুরো বিশ্বকে!
২. তথ্য, তথ্য এবং তথ্য
ক্লাউড কম্পিউটিং এরপর বিশ্ব জুড়ে যে বিষয়টি নিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে তা হল তথ্য বা ডাটা। যাকে আমরা সবকিছুর রাজা বলে থাকি।
কিছুদিন পূর্বে আমরা জানতাম যে দেশে যত বেশি সোনা আছে সে দেশ তত বেশি উন্নত বা অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী। কিন্তু বর্তমানে সোনার পরিবর্তে তা তথ্য বা ডাটাতে রুপান্তরিত হয়েছে।
বর্তমানে যে দেশ বা কোম্পানির কাছে যত বেশি ডাটা বা তথ্য থাকবে, সেই দেশ বা কোম্পানির মূল্য তত বেশি।
বিশ্বে সবচেয়ে ধনী প্রতিষ্ঠান হল গুগল এবং ফেসবুক। ধনী প্রতিষ্ঠান হওয়ার প্রথম এবং প্রধান কারন হচ্ছে এদের কাছে আছে তথ্য ভাণ্ডার।
আগামীতে এই ধরণের প্রতিষ্ঠানগুলো আরও বেশী শক্তিশালী হয়ে উঠবে তাদের ডিপ লার্নিং, কৃতিম বুদ্ধিমত্তা বা ইন্টেলিজেন্সি, মেশিন লার্নিং ইত্যাদি সহ অন্যান্য প্রযুক্তি যুক্ত হওয়ার কারনে।
এই প্রযুক্তিগুলোর ক্ষমতার কথা শুনলে আপনি নিজেও অবাক হয়ে যাবেন। সহজ ভাষায় বলা যেতে পারে, কোন তথ্য থেকে কম্পিউটার পর্যালোচনা করতে পারবে, কম্পিউটার নিজে নিজে শিখতে পারবে, এমনকি নিজে নিজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।
আমাদের দেশে কিছু প্রতিষ্ঠান আছে যেমন, পাঠাও, ইউবার, ফুডপান্ডা ইত্যাদি তথ্য ব্যবহার করে ব্যবসা করছে কয়েক বছর ধরে। আগামীতে এদের ব্যবসা বৃদ্ধি পাবে কয়েক গুণ।
৩. স্বয়ংক্রিয় গাড়ি
বর্তমানে স্বয়ংক্রিয় গাড়ি নিয়ে তুমুল হৈচৈ হচ্ছে সারা বিশ্বে। যদিও সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় গাড়ি এখনও বাজারে আসেনি, তবে কিছু গাড়ি বাজারে এসেছে তাতেই অবাক হওয়ার মত ব্যাপার ঘটেছে।
cars.com এ আপনারা এ ধরণের গাড়ির বড়সর একটি তালিকা পেতে পারেন। আগামি দুই এক বসরের মধ্যে হয়তো আমরা সম্পূর্ণরূপে স্বয়ংক্রিয় গাড়ি চোখের সামনে দেখতে পাবো।
এই ধরণের গাড়িগুলো কম্পিউটিং প্রযুক্তির মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলবে।
৪. ক্রিপটোকারেন্সি
আপনি হয়তো অবাক হয়ে যাবেন, ক্রিপটোকারেন্সি আগামীতে ব্যাংকিং সেক্টরে বিপ্লব ঘটাতে চলেছে। সবার আগে জানা প্রয়োজন ক্রিপটোকারেন্সি আসলে কি?
ক্রিপটোকারেন্সি মূলত এক ধরণের সাংকেতিক মুদ্রা। এতে ব্ল্যাক চেইন নামক নতুন একটি প্রযুক্তির ব্যবহার হয়েছে।
এই প্রযুক্তিতে তৃতীয়পক্ষের কোন প্রকার নিয়ন্ত্রণ থাকে না, এ কারনে কে কার সাথে লেনদেন করেছে তা গোপন থেকে যায়, এমনকি নিজের পরিচয় গোপন রাখতে চাইলে সেটিও করা সম্ভব।
এই ধরণের ডিজিটাল মুদ্রার উপরে কোন দেশের সরকার কোন প্রকার হস্তক্ষেপ করতে পারবে না, যেমনটা প্রচলিত মুদ্রার উপর করে থাকে। এ কারনে অনেক দেশে এই ধরণের লেনদেন নিষিদ্ধ।
এই ধরণের মুদ্রার বাস্তবে কোন প্রকার অস্তিত্ব নেই। সবকিছু অনলাইনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ এবং পরিচালনা করা হয়।
এই প্রযুক্তিতে এমন কিছু কোড ব্যবহার করা হয় যা লেনদেনকারী দুই ব্যক্তি ছাড়া অন্য কেউ বুঝতে পারবে না অর্থাৎ পুরোপুরি গোপন থাকবে সবকিছু।
আগামীতে এমন অবাক করা প্রযুক্তির ব্যবহার দেখবে বিশ্ববাসী।
৫. ড্রোন
ছোটবেলায় আমরা রিমুট কন্ট্রোল খেলনা নিয়ে অনেক খেলাধুলা করেছি। বর্তমানে এটি শুধু খেলনার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। ছোট ছোট ড্রোন বা হেলিকপ্টার দিয়ে অনেকেই অনেক ছবি তুলছে।
এই ধরণের হেলিকপ্টার কিংবা ড্রোন কিন্তু আর ছবি তোলার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ নেই। এগুলোকে ব্যবহার করা হচ্ছে চিকিৎসা ক্ষেত্রে, উদ্ধার কাজে।
আগামীতে আমরা এমন কিছু দেখতে পারব যা আসলেই অবাক করার মত বিষয়। এ ধরণের ড্রোনগুলো আগামীতে পন্য আদান প্রদানে। আপনার পণ্যটি অনায়াসে আপনার কাছে পৌঁছিয়ে দিবে ড্রোন।
এখানে শুধুমাত্র ৫ টি বিষয় তুলে ধরা হয়েছে যা সবচেয়ে বেশী আলোচিত। এরকম হাজারো প্রযুক্তি রয়েছে যা অবাক করার মত।
নিত্য নতুন প্রযুক্তি সম্পর্কে জানতে চোখ রাখুন আমাদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি পেইজে।
আরও পড়ুন,
*পোস্টটি ভালো লাগলে আপনার প্রিয়জনদের সাথে শেয়ার করুন*