আদিকাল থেকে ভারতীয় উপমহাদেশের মানুষের নিকট অনেক জনপ্রিয় একটি মশলা হচ্ছে রসুন। শুধু ভারতীয় উপমহাদেশেই নয় বরং সারাবিশ্বে মশলা হিসেবে রসুনের ব্যপক পরিচিতি রয়েছে।
বিভিন্ন খাবারে বিশেষ করে তরকারীর স্বাদ বৃদ্ধিতে রসুনের ভূমিকা অতুলনীয়। এর শক্তিশালী ঘ্রাণের কারণে মানুষ এটিকে তরকারীর উল্লেখযোগ্য একটি মশলা হিসেবে বেছে নিয়েছে।
রসুন শুধু যে তরকারীতে ব্যবহৃত হয় এমন টা নয়। ভারতীয় উপমহাদেশে প্রাচীনকাল থেকেই বিভিন্ন রোগের ওষুধ হিসেবেও ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
কীটনাশক আবিস্কারের পূর্বে মানুষ পোকা দমনের হাতিয়ার হিসেবে রসুনকে বেছে নিত। প্লেগ রোগ প্রতিহত করতে ইউরোপিয়ানরা রসুনের ব্যবহার করেছিল।
রসুনে এক প্রকার সালফার যৌগ আছে যা অ্যালিসিন নামে পরিচিত। বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে অ্যালিসিন ব্যবহৃত হয়ে থাকে। কাঁচা রসুন খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায়, ফলে শরীরে ব্যাকটেরিয়া কিংবা ফাঙ্গাস প্রভাব বিস্তার করতে পারে না।
বর্তমানে অনেক গবেষণায় জানা গেছে রসুনে ক্যান্সার বিরোধী উপাদান আছে যা ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে পারে।
রসুনে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ময়শ্চার, ফ্যাট, ফাইবার, মিনারেল, এবং কার্বোহাইড্রেট রয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন ভিটামিন রয়েছে, যেমন- থায়ামিন, ভিটামিন- সি, ভিটামিন- বি, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম এবং আয়রন যা মানব দেহের জন্য অতি প্রয়োজনীয় উপাদান।
সিদ্ধ করা রসুন থেকে কাঁচা রসুন খেলে বেশি উপকার পাওয়া যায়। তবে কাঁচা রসুন খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে, প্রথম প্রথম খেতে একটু কষ্ট হবে কিন্তু যখন অভ্যাস হয়ে যাবে তখন আর কোন সমস্যা হবে না।
রসুনের ঔষুধি গুনাগুণ সঠিক মত্রায় পেতে হলে প্রথমে খাওয়ার নিয়ম জানতে হবে। আসুন জেনে নেই রসুনের গুনাগুণ এবং এর স্বাস্থ্যগত উপকারিতা।
সুচীপত্র
- রসুনের গুনাগুন এবং স্বাস্থ্যগত উপকারিতা
- ১. অ্যান্টিবায়টিক হিসেবে
- ২. অ্যান্টিহাইপারটেনসিভ হিসেবে
- ৩. অন্ত্র বা Intestine কে ভালো রাখতে
- ৪. শরীরকে ডি-টক্সিফাই করে রসুন
- ৫. শ্বসন ক্রিয়া ঠিক রাখে
- ৬. যক্ষ্মা প্রতিরোধ করে
- ৭. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
- ৮. খাদ্য হজমে সাহায্য করে
- ৯. সর্দি-কাশি দূর করে
- ১০. হার্ট কে সুস্থ রাখে
- ১১. যৌন শক্তি বৃদ্ধি করে
- ১২. Anti-Coagulant হিসেবে কাজ করে
- ১৩. জয়েন্ট এর ব্যথা
- ১৪. ফোঁড়া এর চিকিৎসায়
- ১৫. ক্যান্সার প্রতিরোধে
- ১৬. ব্রণ সমস্যায়
- ১৭. কৃমি নিরাময়ে
- ১৮. রক্ত পরিষ্কারে
- ১৯. ঠাণ্ডা জ্বরে রসুন
- ২০. Anti-Bacterial হিসেবে
- ২১. ঘা সারাতে বা শুকাতে
- ২২. চোখের সুরক্ষায়
- ২৩. ত্বকের উজ্জ্বলতা ধরে রাখতে
- আরও কিছু প্রণালী
- রসুনের দুর্গন্ধ কিভাবে দূর করা যায়?
- রসুনের অপকারিতা
রসুনের গুনাগুন এবং স্বাস্থ্যগত উপকারিতা
আসুন জেনে নেই, রসুনের বিভিন্ন গুণাগুণ, স্বাস্থ্যগত বিভিন্ন উপকারিতা, এবং ব্যবহার বিঁধি।
১. অ্যান্টিবায়টিক হিসেবে
অনেক গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা গেছে, খালি পেটে রসুন খেলে তা বেশী কার্যকরী। সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে রসুন খেলে তা একটি শক্তিশালী Antibiotic এর ন্যায় কাজ করে।
খালি পেটে রসুন খেলে তা Bacteria এর বিরুদ্ধে কাজ করা শুরু করে দেয় এবং রসুনের বিরুদ্ধে ব্যক্টেরিয়া মোকাবেলা করতে পারে না ফলে ব্যাক্টেরিয়া ধংশ হয়ে যায়।
২. অ্যান্টিহাইপারটেনসিভ হিসেবে
বর্তমানে আমাদের দেশে উচ্চ রক্তচাপ মারাত্মক আকার ধারন করেছে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত ব্যক্তি রসুন খেলে তারা ভালো অনুভব করেন। এতে Anti-Cuagulant Activity থাকার কারণে উচ্চ রক্তচাপ রোগীর জন্য ভালো।
৩. অন্ত্র বা Intestine কে ভালো রাখতে
খালি পেটে রসুন খেলে মুত্রাশয় এবং লিভার ঠিকঠাকভাবে তাদের কাজ করতে পারে। এছাড়াও খালি পেটে রসুন খেলে শরীরের ভিতরের অনেক সমস্যা দূর হয়। ডায়রিয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে পারে রসুন।
রসুন খাদ্য হজমে সহায়তা করে ফলে বদহজম দূর হয়। খালি পেটে রসুন খেলে খাওয়ার রুচি বেড়ে যায় এবং অ্যাসিডিটি সমস্যা কমিয়ে দেয়। এরকম অনেক পরিপাকতন্ত্রের সমস্যা দূর করে দিতে পারে রসুন।
৪. শরীরকে ডি-টক্সিফাই করে রসুন
অনেক বিশেষজ্ঞদের মতে, শরীরকে ডি-টক্সিফাই করতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে রসুন।
ক্যান্সার, কৃমি, বিশন্নতা, জ্বর, ডায়াবেটিস, রাগ ইত্যাদি মারাত্মক রোগের প্রতিশোধক হিসেবে বিশেষ ভূমিকা পালন করতে পারে এই রসুন।
৫. শ্বসন ক্রিয়া ঠিক রাখে
বিভিন্ন জটিল রোগ যেমন নিউমোনিয়া, হাপানি বা শ্বাসকষ্ট, কাশি, যক্ষ্মা ইত্যাদি রোগের প্রতিশোধক হিসেবে খুব ভালো কাজ করে রসুন। রসুনের মধ্যে এমন সব উপাদান রয়েছে যা কম বেশী সকল রোগ প্রতিরোধ করতে সক্ষম।
৬. যক্ষ্মা প্রতিরোধ করে
রসুনে এমন একটি কার্যকরী গুন রয়েছে, যদি কোন ব্যক্তি যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয় এবং সে যদি নিয়মিত রসুন খায় তাহলে যক্ষ্মা নির্মূল করা সম্ভব।
৭. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
প্রতিদিন সকালে নাস্তা করার পর এক কোয়া রসুন পানি দিয়ে গিলে খেলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বৃদ্ধি পায়। তবে রসুন চিবিয়ে খাওয়া যাবে না।
প্রতিদিন এক কোয়া রসুন খেলে ঋতু পরিবর্তনের ফলে শরীরে যে সমস্যা দেখা যায় তা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
৮. খাদ্য হজমে সাহায্য করে
হালকা ঘিয়ে ৪-৫ টি রসুনের কোয়া কুচি করে ভেজে নিয়ে খালি অথবা সব্জির সাথে খেয়ে নিন, এতে আপনার হজমের সমস্যা দূর হয়ে যাবে। এবং পাশাপাশি কোষ্ঠকাঠিন্য হতে মুক্তি পাবেন।
৯. সর্দি-কাশি দূর করে
সর্দি কাশি কিংবা জমে যাওয়া কফ থেকে পরিত্রাণ পেতে রসুনের বিকল্প নেই। প্রতিদিন ১-২ টি রসুনের কোয়া এক চামচ সরিষার তেলে ভেজে নিয়ে এর সাথে এক চামচ মধু মিশিয়ে নিয়মিত খেলে সর্দি কাশি এবং জমে থাকা কফ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
১০. হার্ট কে সুস্থ রাখে
হার্ট সুস্থ রাখতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে রসুন। রসুন রক্তের চর্বি কমাতে সাহায্য করতে পারে। এর ফলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি অনেক কমে যায়।
প্রতিদিন এক কোয়া রসুন কাঁচা অথবা আধা সিদ্ধ করে খেলে রক্তে চর্বির পরিমাণ অনেক কমে যায়। রসুন রক্তে গ্লুকোজ লেভেল ঠিক রাখতে সহায়তা করে। মনে রাখা দরকার যে, সিদ্ধ রসুনের তুলনায় কাঁচা রসুন বেশী কার্যকরী।
১১. যৌন শক্তি বৃদ্ধি করে
যৌন শক্তি বৃদ্ধিতে রসুন এর ব্যবহার প্রাচীনকাল থেকে চলে আসছে। প্রতিদিন দু এক কোয়া কাঁচা রসুন নিয়ম অনুযায়ী খেলে যৌন শক্তি বৃদ্ধি পায়।
প্রতিদিন ২ কোয়া কাঁচা রসুন সামান্য পরিমাণ ঘি দিয়ে ভেঁজে খেতে পারেন। খাওয়ার পর দুধ অথবা এক গ্লাস হালকা গরম পানি খাওয়া দরকার, এর ফলে ভালো কার্যকারিতা পাওয়া যাবে।
এছাড়াও আরও একটি খাওয়ার নিয়ম রয়েছে, এক চামচ আমলকীর রসের সাথে ২ কোয়া রসুন বাটা খেতে পারেন। এতে করে পুরুষ কিংবা স্ত্রী উভয়েরই যৌন শক্তি বৃদ্ধি পাবে এবং যৌবন দীর্ঘস্থায়ী হবে।
১২. Anti-Coagulant হিসেবে কাজ করে
আমাদের অনেকেই হাইপার টেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে, যাদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে তাদের শিরা উপশিরার ভিতরে রক্ত প্লাগ জমতে পারে। নিয়মিত রসুন খেলে রক্তে প্লাগ জমতে বাধা প্রদান করে।
১৩. জয়েন্ট এর ব্যথা
একটু বয়স হয়ে গেলে অনেকেই জয়েন্ট কিংবা বাত ব্যথায় ভোগেন। এই বাতের ব্যথা নিরাময় করতে রসুন কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারে। নিয়ম করে দিনে দুই কোয়া করে কাঁচা রসুন খেলে বাত ব্যাথা কমে যাবে।
১৪. ফোঁড়া এর চিকিৎসায়
শরীরের কোন জায়গায় ফোঁড়া হলে কিংবা পুজ জমে থাকলে অনেক ব্যাথা হয়ে থাকে। এসব ফোঁড়া নিরাময় করতে ব্যবহার করতে পারেন রসুন।
শরীরের কোথাও ফোঁড়া হলে তাতে রসুনের রস লাগিয়ে নিন এবং ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এতে খুব তারাতারি ফোঁড়া ফেটে যাবে, এবং ফোঁড়ার যন্ত্রণার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।
এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগ যেমন- দাদ, চুলকানি ইত্যাদি থেকে মুক্তি পেতে রসুনের রস ব্যবহার করতে পারেন অনায়াসে।
১৫. ক্যান্সার প্রতিরোধে
নিয়মিত রসুন খেলে বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার যেমন গলব্লাডারের ক্যান্সার, লিভার ক্যান্সার, কোলন ক্যান্সার, স্তন ক্যান্সার, প্রোস্টেট ক্যান্সারের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
অনেক গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত রসুন খেলে শরীরে ক্যান্সার প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বৃদ্ধি পায়।
১৬. ব্রণ সমস্যায়
আমাদের অনেকেই ব্রণ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন। নিয়মিত রসুনের রস ব্যবহার করলে ব্রণ সমস্যা দূর হবে। আবার অনেকের আচিল হয়, আঁচিল দূর করতে নিয়মিত রসুনের রস লাগালে উপকার পাওয়া যাবে।
১৭. কৃমি নিরাময়ে
মানুষের শরীরের ভিতরে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর Bacteria এবং কৃমি সহজেই ধংশ করে দেয় রসুন। তাই নিয়মিত রসুন খাওয়া উচিৎ।
১৮. রক্ত পরিষ্কারে
প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ২ কোয়া কাঁচা রসুন এবং এক গ্লাস কুসুম গরম পানি খেলে শরীরের রক্ত পরিষ্কার হয়। সাথে ত্বক ও ভালো থাকবে।
শরীরের মেদ কমাতে চাইলে এর সাথে কিছু লেবুর রস মিশিয়ে খেতে পারেন।
১৯. ঠাণ্ডা জ্বরে রসুন
একটু আবহাওয়া পরিবর্তন হলেই অনেকে ঠাণ্ডা জ্বরে আক্রান্ত হন। এই ঠাণ্ডা জ্বরের জন্য কার্যকরী ওষুধ হিসেবে কাজ করে রসুন। ঠাণ্ডা জ্বর নিরাময় করতে প্রতিদিন নিয়ম করে ২-৩ কোয়া কাঁচা রসুন খেতে হবে।
এভাবে কয়েকদিন খেলেই দূর হয়ে যাবে ঠাণ্ডা জ্বর, এর পাশাপাশি প্রতিরোধ ক্ষমতাও বৃদ্ধি পাবে।
২০. Anti-Bacterial হিসেবে
ব্যাক্টেরিয়া বিরোধী গুণাগুণ থাকার কারণে প্রাচীনকাল থেকেই রসুনের ব্যপক কদর রয়েছে। তাই নিয়মিত রসুন খেলে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
২১. ঘা সারাতে বা শুকাতে
শরীরের কোন আংশে কেটে গেলে ব্যবহার করতে পারেন রসুন। খত স্থানে রসুন লাগিয়ে ব্যান্ডেজ করে দিতে হবে, কয়েকদিনের মধ্যে কাটা ঘা শুকিয়ে যাবে।
২২. চোখের সুরক্ষায়
চোখে ছানি পড়া রোগের চিকিৎসায় রসুনের ব্যবহার প্রাচীনকাল থেকে হয়ে আসছে। এছাড়াও দাতের ব্যাথা দূর করতে রসুন সাহায্য কয়রে।
২৩. ত্বকের উজ্জ্বলতা ধরে রাখতে
রসুনকে ওষুধ হিসেবে মানুষ প্রাচীনকাল থেকেই ব্যবহার করে আসছে। রূপচর্চায়ও রয়েছে রসুনের চমৎকার ব্যবহার। ব্রণ কিংবা ব্রণের দাগ নিমেষেই দূর করে দিতে পারে রসুন।
ব্রণে এবং ব্রণের দাগে রসুনের রস নিয়মিত লাগালে ব্রণ উঠা বন্ধ হয়ে যাবে এবং ব্রণের দাগও দূর হয়ে যাবে। আর নিয়মিত রসুন খেলে ত্বক সতেজ থাকে।
মধু এবং রসুন একসাথে গ্রহণ করলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। এই মিশ্রণটি তৈরি করতে একটি কার্যকরী প্রণালী রয়েছে। আসুন জেনে নেই কিভাবে মিশ্রণটি সহজেই তৈরি করা যায়?
মিশ্রণটি তৈরিতে যা যা প্রয়োজন,
-
-
- একটি ছোট বা মাঝারি সাইজের প্লাস্টিক বা কাঁচের বয়াম
- খাঁটি মধু
- তিন থেকে ৪ টি খোসা ছড়ানো রসুন
-
যেভাবে তৈরি করতে হবে,
সবার প্রথমে রসুনের কোয়াগুলো বয়ামের মধ্যে নিতে হবে তারপর কোয়াগুলোকে থেতলে নিতে হবে। এরপর এতে পরিমাণ মত মধু মিশিয়ে নিতে হবে। এরপর বয়ামটির মুখ ভাবভাবে বন্ধ করে নরমাল ফ্রিজে রেখে দিতে হবে।
খাওয়ার নিয়ম
এই মিশ্রণটি খালিপেটে গ্রহন করলে সবচেয়ে বেশি উপকার পাওয়া যায়। প্রতিদিন ১ চামচ করে খেতে পারবেন। ঠাণ্ডা লাগলে, অর্ধেক চামচ করে দিনে ৫-৬ বার খেলে ঠাণ্ডা দূর হবে।
আরও কিছু প্রণালী
প্রণালী ১
শরীর ফিট রাখতে এবং শরীরে এনার্জির ঘাটতি দূর করতে এই টোটকাটি অনেক কার্যকরী। প্রথমে ৩ থেকে ৪ টি রসুনের কোয়া কুচি কুচি করে কেটে নিয়ে এর সাথে এক চামচ মধু ভালোভাবে মিশাতে হবে। রসুন এবং মধুর এই মিশ্রণটি প্রতিদিন তৈরি করে খেলে শরীরের এনার্জি ঘাটতি হবে না এবং শরীর ফিট থাকবে।
প্রণালী ২
যা যা প্রয়োজন
-
-
- একটি মাঝারি সাইজের অর্ধেক পেয়াজ কুচি
- পাঁচ কোয়া রসুন কুচি
- দুটি শুকনা মরিচ কুচি
- এক চামচ আদা কুচি
- একটি লেবুর রস
- অর্ধেক চামচ ভিনেগার
-
প্রথমে একটি পাত্রে আদা, রসুন, শুকনা মরিচ এবং পেয়াজ কুচি ভালোভাবে মেশাতে হবে এরপর এতে একটি লেবুর রস মেশাতে হবে।
সবকিছু মেশানো শেষ হলে তাতে ভিনেগার যোগ করতে হবে তারপর পুরো মিশ্রণটি ভালোভাবে মিশিয়ে পাত্রটি দেকে রাখতে হবে। ঠাণ্ডা, কাশি, সাধারণ জ্বর, এবং গলা ব্যাথাতে ব্যবহার করা যাবে।
রসুনের দুর্গন্ধ কিভাবে দূর করা যায়?
রসুনের ঝাঁঝাল গন্ধের কারণে অনেকে রসুন খেতে পারে না। তবে এই দুর্গন্ধ দূর করার জন্য কিছু কার্যকরী উপায় রয়েছে। আসুন জেনে নেই রসুনের ঝাঁঝাল গন্ধ কিভাবে দূর করা যায়?
কিছু রসুনের কোয়া খোসা ছড়িয়ে টুকরো টুকরো করে নিতে হবে এবং ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা টক দইয়ের মধ্যে চুবিয়ে রাখতে হবে। ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা পর খেয়ে দেখবেন রসুনের ঝাঁঝালো গন্ধ দূর হয়ে গেছে এবং এতে রসুনের গুনাগুণ নষ্ট হয় না।
রসুনের অপকারিতা
রসুনের যেমন উপকারিতা রয়েছে তেমনি রয়েছে ক্ষতিকর দিক। কিছু কিছু রোগে রসুন খেলে মারাত্মক ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। তাই রসুনের ক্ষতিকর দিক গুলো জেনে নেয়া দরকার। আসুন জেনে নেই, রসুন ব্যবহারে কি কি সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়?
-
- দিনে দুই কোয়ার বেশি কাঁচা রসুন খাওয়া উচিৎ না। রান্নায়ও ২ কোয়ার বেশি রসুন ব্যবহার করা উচিৎ না।
- কারো যদি রসুন খেলে এলারজি হয় কিংবা এলারজি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তবে তার কাঁচা রসুন খাওয়া ঠিক হবে না।
- কাঁচা রসুন খেলে যদি কারো মাথা ব্যাথা হয় তবে খাওয়া যাবে না।
- কাঁচা রসুন খেলে যদি কেউ বমি করে কিংবা সারাদিন ধরে বমি বমি ভাব থাকে তবে তাকে কাঁচা রসুন খাওয়া যাবে না।
- অতিরিক্ত পরিমাণে কাঁচা রসুন খেলে মুখে দুর্গন্ধ হয়, তাই বেশি পরিমাণে রসুন না খাওয়াই উত্তম।
- কারো শরীর সামান্য কেটে গেলে সহজে রক্ত বন্ধ হয় না, এমন ব্যক্তির কাঁচা রসুন খাওয়া যাবে না, কারণ কাঁচা রসুন খেলে তার রক্ত ঝরা সহজে বন্ধ হবে না। কারণ রসুনে Anti-Coagulant Activity রয়েছে। যা রক্তকে জমাট বাঁধতে বাধা প্রদান করে।
- কাঁচা রসুন খেলে যদি পাকস্থলীতে অসস্তি বোধ হয় তবে তা খাওয়া উচিৎ না।
- যে নারী তার বাচ্চাকে দুধ পান করায় তার কাঁচা রসুন খাওয়া উচিৎ না, কারণ বুকের দুধের সাথে বাচ্চার পেটে গিয়ে বাচ্চার পেটের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- রসুনের গাঁয়ে নীল দাগ পড়লে কিংবা রসুন নরম হয়ে গেলে সে রসুন খাওয়া যাবে না।
রসুনের অনেকগুলো উপকারিতা আমরা জানলাম সাথে কিছু অপকারিতা বা সাবধানতাও জানলাম। এখানে অপকারিতার থেকে উপকারিতাই অনেক বেশি।
তাই বলে অহেতুক বেশি বেশি রসুন খাওয়াও ঠিক না। সঠিক নিয়ম মেনে রসুন খাওয়া উচিৎ। তাহলে রসুনের কার্যকারিতা পুরোপুরি পাওয়া যাবে।
আরও পড়ুন,
*লেখাটি ভালো লাগলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন*