Download Free FREE High-quality Joomla! Designs • Premium Joomla 3 Templates BIGtheme.net
Home » ইসলামের আলো » রাতে ঘুমানোর পূর্বে ইসলামের আলোকে কিছু কাজ

রাতে ঘুমানোর পূর্বে ইসলামের আলোকে কিছু কাজ

অন্য সব নফল ইবাদতের ন্যায় মুমিনদের জন্য ঘুমও একটি নফল ইবাদত। যদি কোন মুমিন বান্দা ইসলামের দেখানো নিয়ম অনুসারে নিদ্রা যাপন করে তাহলে ঐ ব্যাক্তি যতক্ষণ নিদ্রা যাপন করবে ততোক্ষণ তার আমল নামায় নেকী লেখা হতে থাকবে।

তাই আপনার ঘুমকে যদি ইবাদতে পরিনত করতে চান তবে কিছু কাজ গ্রহণ করতে হবে আবার কিছু কাজকে বর্জন করতে হবে। চলুন জেনে নেই ঘুমানোর পূর্বে করনীয় ও বর্জনীয় কাজ সম্পর্কে ইসলাম কি বলে?

Some important works before sleep to night according to islam

রাতে ঘুমানোর পূর্বে ইসলামের আলোকে কিছু কাজ

সারারাত ধরে নফল ইবাদতের নেকী লাভ করার জন্য ইসলামের আলোকে আপনাকে কিছু কাজ তো অবশ্যই করতে হবে। এই কাজগুলো সম্পর্কে জ্ঞান রাখা এবং তদানুযায়ী আমল করা প্রতিটি মুসলমানের উচিৎ। আসুন জেনে নেই, রাতে ঘুমানোর পূর্বে ইসলাম আমাদেরকে কি কি কাজ করতে বলে?

১. তাড়াতাড়ি ঘুমাতে যাওয়া

মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) কখনো রাতে দেরি করে ঘুমাতে যেতেন না। এশার নামাজের পর তিনি কখনো গভীর রাত পর্যন্ত গল্প গুজব করে সময় অপচয় করতেন না। এমনকি অহেতুক সময় নষ্ট না করে তাড়াতাড়ি ঘুমাতে যাওয়ার জন্য জোর দিতেন। 

তাই রাতের ঘুম নষ্ট করে কোন অহেতুক কাজ না করে তাড়াতাড়ি ঘুমাতে যাওয়া উচিৎ।

২. ঘরে একা একা না ঘুমানো

একটা ঘরে একা একা ঘুমানোর ব্যাপারে হাদিসে নিষেধ করা হয়েছে। হজরত ইবনে অমর (রাঃ) হতে বর্ণীত আছে যে,

“মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) কোন ঘরে একা একা রাত্রি যাপন করতে নিষেধ করেছেন, এবং একা একা কোন জায়গায় ভ্রমণ করতে নিষেধ করেছেন। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নং- ৫৬৫০)”

৩. খোলা জায়গায় রাত্রি যাপন না করা

খোলা জায়গা যেমন ছাদের উপর, কিংবা খোলা আকাশের নিচে রাত্রি যাপন করা যাবে না। মহানবী (সাঃ) বলেছেন,

“যে লোক খোলা আকাশের নিচে, বেষ্টনীবিহীন ছাদে ঘুমালো, তার বেপারে কোন জিম্মাদারি নাই। (আবু দাউদ, হাদিস নং- ৫০৪১)”

নিরাপদে রাত্রি যাপনের ক্ষেত্রে আমাদের নবি (সাঃ) কিছু দিক নির্দেশনা দিয়েছেন, যেগুলো মেনে চললে একদিকে যেমন সুন্নাত পালন করা হবে এবং অন্য দিকে বিপদ থেকেও রক্ষা পাওয়া যাবে।

৪. রাতে খাবারের পাত্রগুলো ঢেকে রাখা

রাতে ঘুমাতে যাওয়ার পূর্বে খাবার রাখার পাত্রগুলো ঢাকনা দিয়ে ভালোভাবে ঢেকে দিতে হবে। কারণ, গভীর রাতে তেলাপোকা, ইদুর, মাছি, ইত্যাদি খাবারে মুখ দিতে পারে এবং তা থেকে ছড়াতে পারে অনেক মারাত্মক রোগ।

ইতিহাস থেকে জানা যায় যে, ইঁদুরের দ্বারা ছড়ানো ভাইরাসে প্রয়া দশ কোটিরও বেশি লোক মারা গিয়েছিল, সে অধ্যায়টির নাম দেয়া হয়েছিল ব্ল্যাক ডেথ।

রাত যতই গভীর হয় ইঁদুরের চলাচলের মাত্রা ততোই বাড়তে থাকে তাই রাতে ঘুমিয়ে যাওয়ার আগে অবশ্যই খাবার রাখার পাত্র গুলো ঢেকে রাখা জরুরী।

৫. ঘুমানোর আগে দরজা বন্ধ করা

বিছানায় যাওয়ার পূর্বে অবশ্যই ঘরের দরজা বন্ধ করা জরুরী, কারণ দরজা খোলা রেখে ঘুমালে রাতে ঘরের জিনিস পত্র চুরি হয়ে যাওয়ার আশংকা থাকে।

৬. ঘুমানোর পূর্বে ঘরের আলো নিভিয়ে দেয়া

রাতে ঘুমাতে যাওয়ার পূর্বে ঘরের আলোকে নিভিয়ে দেয়া উচিৎ। বিশেষ করে, কুপি, মোমবাতি, কয়েল ইত্যাদি, কারণ এসব থকে ঘটতে মারাত্মক অগ্নিকাণ্ড। এছাড়াও ঘরকে অন্ধকার রাখলে ঘুমের একটা পরিবেশ তৈরি হয় যা পর্যাপ্ত ঘুমের জন্য জরুরী।

রাতের কালো অন্ধকার মানব শরীরের মেলাটোনিন হরমোনের নিঃসরণ বৃদ্ধি করে, যার ফলে ভালো ঘুম হয়। মেলাটোনিন হরমোন মানুষের বুদ্ধি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে থাকে, পাশাপাশি মাথার বিভিন্ন কাজ করার ক্ষমতাও বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।

এছাড়াও এই হরমোনের আরও অনেক আশ্চর্য ক্ষমতা রয়েছে, যেমন, ক্যান্সারের মত মারাত্মক অসুখের ঝুকি কমিয়ে দেয়। উপরক্ত উপাকারিতা গুলোর কারনে অন্ধকার ঘরে ঘুমানো অত্যন্ত জরুরী।

৭. পবিত্র হয়ে ঘুমানো

পবিত্রতা অর্জন করে ঘুমানো সুন্নাত। আমাদের নবী (সাঃ) ইরশাদ করেছেন,

“যদি কোন মুমিন ব্যক্তি অজু করে পবিত্রতা অর্জন করে তারপর ঘুমাতে যায়, এবং জাগ্রত হয়ে আল্লাহর কাছে কোন কিছুর প্রার্থনা করলে মহান আল্লাহ তায়ালা তা কবুল করেন এবং দান করেন। (আবু দাউদ, হাদিস নং- ৫০৪২)”

৮. বিছানা ঝেড়ে নেয়া

ঘুমাতে যাওয়ার পূর্বে অবশ্যই বিছানা ঝেড়ে তারপর নিদ্রা যাপন করা উচিৎ। এ সম্পর্কে রাসুল (সাঃ) বলেছেন,

“তোমাদের মধ্যে যদি কেউ ঘুমাতে যায় তবে সে যেন তার বিছানা ভালোভাবে ঝেড়ে নেয়। কারণ সে জানে না যে, তার অনুপস্থিতিতে বিছানায় যন্ত্রণাদায়ক কোন বস্তু আছে কি না। তার পর নিচের দোয়াটি পড়বে, হে আমার প্রভু, আপনার জন্য আমি আমার শরীর বিছানায় রাখলাম ও আপনার জন্য আবার জেগে উঠবো। (বুখারি শরীফ, হাদিস নং- ৬৩২০)”

৯. ঘুমানোর পূর্বে দুই চোখে সুরমা লাগানো

রাতে ঘুমানোর পূর্বে দুই চোখে সুরমা লাগানোর ব্যাপারে একটি হাদিস রয়েছে যা হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,

“রাসুল (সাঃ) এর একটি সুরমাদানি ছিল এবং প্রতি রাতে ঘুমাতে যাওয়ার পূর্বে দুই চোখে তিনবার করে লাগাতেন। (শামায়েলে তিরমিযি, হাদিস নং- ৪১)”

চোখে সুরমা লাগালে বিভিন্ন ধরনের ছোঁয়াচে জীবাণু ধংশ হয়ে যায় যা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত। এছাড়াও দিনের বেলায় অনেক ধুলো বালি চোখের ভিতরে চলে যায়, চোখে সুরমা ব্যবহার করলে এসব ক্ষতিকর জিনিসগুলো বের করে দিতে সহায়তা করে। এমনকি দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। কারণ, সুরমা দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতে বাধা দান কারি জীবাণুকে ধংশ করে দিতে পারে এবং চোখে জ্বালাপোড়া হলে তা কমিয়ে দেয়।

১০. ডান কাত হয়ে শোয়া

ডান কাত হয়ে ঘুমাতে যাওয়ার অনেক উপকারীতা রয়েছে। যেমন, ডান কাত হয়ে ঘুমালে হৃদপিণ্ড, ফুসফুস, পাকস্থলী, ইত্যাদি স্বাভাবিক স্থানে থাকতে পারে। যা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত। তাই আমাদের ডান কাত হয়ে ঘুমানো উচিৎ।

১১. শোয়ার দোয়া পড়া

হাদিসে ঘুমানোর পূর্বে কয়েকটি দোয়া বর্ণনা করা হয়েছে। তার মধ্যে একটি হচ্ছে, “আল্লাহুম্মা বিসমিকা আমুতু অয়া আহইয়া” যার অর্থ হল- হে আল্লাহ! আমি তোমার নামে শয়ন করছি, এবং তোমার দয়াতেই জাগ্রত হব।

মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) বলেছেন,

“যে ব্যাক্তি বিছানায় শোয়ার পর মহান আল্লাহর নাম স্মরণ করে না, সে ব্যাক্তির জন্য লাঞ্ছনা নেমে আসবে আল্লাহর পক্ষ থেকে। (আবু দাউদ, হাদিস নং- ৪৮৫৬)”

১২. সূরা নাস, সূরা ইখলাস ও সূরা ফালাক পাঠ করা

হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেছেন,

“রাসুল (সাঃ) প্রতিদিন রাতে যখন বিছানায় ঘুমাতে যেতেন, তখন দুই হাত একত্রে করে সূরা নাস, সূরা ইখলাস ও সূরা ফালাক পাঠ করতেন এবং হাতে ফু দিতেন তারপর মাথা, মুখমণ্ডল থেকে শুরু করে দেহে দুই হাত বোলাতেন, যতদূর পর্যন্ত হাত যেত। (বুখারি শরীফ, হাদিস নং- ৫০১৭)”

১৩. আয়াতুল কুরছি পড়া

মহানবী (সাঃ) ইরশাদ করেছেন,

“যখন তুমি ঘুমাতে যাবে তখন আয়াতুল কুরছি পাঠ করবে। এতে করে মহান আল্লাহ তায়ালা তোমার জন্য একজন রক্ষক নিযুক্ত করবেন এবং সকাল না হওয়া পর্যন্ত ইবলিশ শয়তান তোমার ধারের কাছেও আসতে পারবে না। (বুখারি, হাদিস নং- ২৩১১)”

১৪. সূরা বাকারা এর শেষের ২ আয়াত তিলাওয়াত করা

কোন ব্যক্তি যদি সূরা বাকারা এর শেষের দুই আয়াত তিলাওয়াত করে তাহলে সে ব্যক্তির জন্য পুরো নিরাপত্তার চাঁদরে ঢাকা থাকবে। তার নিরাপত্তার জন্য আর কোন কিছুর প্রয়োজন হবে না। মহান আল্লাহ তায়ালা তার নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে দেবেন। এ সম্পর্কে রাসুল (সাঃ) বলেছেন,

“ঘুমানোর পূর্বে যদি কোন ব্যক্তি সূরা বাকারার শেষ ২টি আয়াত তিলাওয়াত করে তাহলে এটিই তার জন্য যথেষ্ট। (বুখারি, হাদিস নং ৫০৪০)”

১৫. সূরা মূলক তিলাওয়াত করা

মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) বলেছেন,

“পবিত্র কুরআন মাজিদে ৩০ আয়াতের একটি সূরা আছে, এটি যদি কারো পক্ষে সুপারিশ করে তাহলে তাকে ক্ষমা করে দেয়া হয়। সূরাটির নাম হলো- সূরা মূলক। (তিরমিজি, হাদিস নং- ২৮৯১)”

“আমাদের নবী (সাঃ) এই সূরা প্রতিদিন রাতে ঘুমাতে যাওয়ার পূর্বে তিলাওয়াত করতেন। (তিরমিজি, হাদিস নং-২৮৯২)”

উপরোক্ত কাজগুলো প্রত্যেক মুসলমানের পালন করা একান্তই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের নবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর দেখানো পথে রয়েছে পুরো মানবজাতির কল্যান।

আরও পড়ুন,

১. জুমার দিনে যে কাজগুলোর মর্যাদা সবচেয়ে বেশি

২. স্বামীর প্রতি স্ত্রীর কর্তব্য, ইসলাম কি বলে?

৩. রোজা রাখার শারীরিক ও মানসিক উপকারিতা

 

Check Also

How to increase provision, রিজিক বাড়ানোর আমল, রিজিক বৃদ্ধির আমল, টাকা পয়সা বৃদ্ধির আমল

রিজিক বাড়ানোর আমল – কুরআন ও হাদিসে কি বলা আছে?

আমরা মুসলমান জাতি, মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের স্রষ্টা। তিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন এবং তিনিই আমাদের …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!