পাপের কাজ করার মাধ্যমে মানুষ ক্ষণিকের জন্য সুখের সন্ধান করে থাকে। প্রকৃতপক্ষে পাপ কাজের মধ্যে কোন প্রকার সুখ কিংবা শান্তি নেই। পাপ কাজ করে, সুদ খেয়ে, দুর্নীতি করে, অপরাধমূলক কাজ করে কখনোই দুনিয়াতে শান্তি পাওয়া যায় না, সুখী হওয়া যায় না।
কেননা প্রতিটি পাপ কাজের মাঝেই রয়েছে সব ধরণের অশান্তি ও অস্থিরতা। কিছু কিছু পাপ কাজের কারণে মহান আল্লাহ তায়ালা পাপীকে দুনিয়াতেই অপদস্ত ও লাঞ্চিত করে থাকেন।
সূরাহ নিসার ১২৩ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,
“যে পাপ বা মন্দ কাজ করবে, তাকে সেই কাজের শাস্তি বা পরিণতি ভোগ করতে হবে।”
আমরা অনেকেই মনে করে থাকি যে, মহান আল্লাহ তায়ালা পাপের শাস্তি পরকালে দিবেন কিন্তু কিছু পাপ কাজের শাস্তি মহান আল্লাহ তায়ালা দুনিয়াতেই দিয়ে থাকেন।
মহান আল্লাহ তায়ালা সূরাহ সিজদার ২১ নম্বর আয়াতে বলেছেন,
“অবশ্যই আমি তাদেরকে কঠিন শাস্তির পূর্বে ছোট শাস্তি দেব যেন তারা ফিরে আসে”
এই আয়াতে ছোট শাস্তি বলতে রোগ, শোক এবং দুনিয়ার যেকোনো বিপদ আপদকে বুঝানো হয়েছে। আর কঠিন শাস্তি মানে পরকালের শাস্তির কথা বুঝানো হয়েছে।
পাপ কাজের কারণে নানা ধরণের বিপর্যয় কিংবা বিপদ আপদ দেখা দেয়।
এ ব্যাপারে সূরাহ রোমের ৪১ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,
“মানুষের কৃতকর্মের কারণে জলে স্থলে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে। মহান আল্লাহ তায়ালা তাদের কৃতকর্মের শাস্তি আস্বাদন করাতে চান, যেন তারা ফিরে আসে।”
এই আয়াতে বিপর্যয় বলতে মহামারি, বন্যা, নিরাপত্তাহীনতা, দুর্ভিক্ষ, অগ্নিকান্ড, যুদ্ধ ইত্যাদিকে বুঝানো হয়েছে। এমন কিছু কিছু পাপ কাজ রয়েছে, যা করলে তার শাস্তি মহান আল্লাহ তায়ালা দুনিয়াতেই দিয়ে থাকেন।
আসুন জেনে নেই, কোন কোন পাপের শাস্তি মহান আল্লাহ তায়ালা দুনিয়াতেই দিয়ে থাকেন।
সুচীপত্র
যেসব পাপের শাস্তি দুনিয়াতেই ভোগ করতে হয়
১. আল্লাহবিমুখ হওয়া
আল্লাহবিমুখ হলে মহান আল্লাহ তায়ালা আল্লাহ বিমুখ মানুষকে মানসিক অস্থিরতা এবং মানসিক যন্ত্রণা দিয়ে থাকেন। পাপ কাজে জড়িয়ে পড়ে যেসকল মানুষ আল্লাহর আদেশ নিষেধ সব ভুলে যায়, তাদেরকে হুঁশিয়ার করে মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনের সূরাহ ত্বহার ১২৪ নম্বর আয়াতে বলেছেন,
“যে আমার দেয়া রিজিক অস্বীকার করবে বা বিমুখ হবে, তার জীবন মান সংকীর্ণ হবে এবং আমি সে ব্যক্তিকে অন্ধ করে কিয়ামাতের দিন উত্থিত করবো।”
২. কুফর এবং শিরক করা
সমাজে বা দেশে যখন পাপ কাজের মাত্রা অনেক বেশি হতে থাকে তখন মানুষের জানের এবং মালের কোন প্রকার নিরাপত্তা থাকে না। যেসকল মানুষ এসব পাপ কাজে লিপ্ত থাকে তারা কখনোই শান্তিতে থাকতে পারে না। অস্বস্তি, অশান্তি তাদের পিছু ছাড়ে না।
তাদের মনের ভিতরে সবসমই একটা আতংক কাজ করে। মহান আল্লাহ তায়ালার সাথে কুফর করা এবং শিরক করা এমন মারাত্মক একটি অপরাধ, যা করার মাধ্যমে সমাজে আতংক এবং ভয়ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি হয়।
সূরাহ আল-ইমরানের ১৫১ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,
“আমি কুফরিকারীদের অন্তরে ভয় ঢুকিয়ে দেব, তারা মহান আল্লাহর সাথে শিরক করেছে।”
৩. অশ্লীলতা
একটি সমাজ বা একটি দেশের মানুষ যখন পাপ কাজের সীমা ছাড়িয়ে যাবে, এবং অধিকাংশ মানুষ অশ্লীলতাকে বিনোদন মনে করবে তখন মহান আল্লাহ তায়ালা সে জাতিকে দুরারোগ্য ব্যধিতে ভোগাবেন।
এ ব্যাপারে বিশ্ব নবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) বলেছেন,
“যখন কোন সম্প্রদায়ের বা সমাজের মানুষ প্রকাশ্যে অশ্লীলতায় লিপ্ত হবে, তখন ঐ সম্প্রদায় বা সমাজে এমন দুরারোগ্য রোগের সংক্রমণ হবে যা তাদের পূর্ববর্তী লোক জনের ছিল না।” (ইবনে মাজাহ- হাদিস নং ৮০১৯)
৪. সুদ খাওয়া
যখন কোন সম্প্রদায়ের মানুষজন সুদ দেয়া এবং নেয়াকে হালাল মনে করে, এবং সুদ দেয়া নেয়ার প্রবণতা ব্যাপক আকার ধারণ করে এবং সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে সুদের কালো থাবা পড়ে তখন মহান আল্লাহ তায়ালা সেই সম্প্রদায় কিংবা জাতিকে ধংশ করার নির্দেশ দিয়ে দেন।
এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনের সূরাহ বাকারার ২৭৬ নম্বর আয়াতে বলেছেন,
“তিনি সুদকে ধংশ করে দেন এবং সদকা কে বাড়িয়ে দেন।”
সুদের পতন বা ধংশ বিভিন্নভাবে হতে পারে। যেমন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, দুরারোগ্য ব্যাধি ইত্যাদির দ্বারা সুদের মাধ্যমে অর্জিত অর্থ সম্পদ বিনষ্ট হয়ে যেতে পারে। মানুষের হতে পারে এমন দুরারোগ্য ব্যাধি যা সুদ খোর ব্যাক্তিকে একটু একটু করে ধংশ করে দিতে পারে।
৫. মদ্যপান এবং জুয়া
মদ্যপান করা এবং খেলার মাধ্যমে টাকা আয় করা এ দুটিই শয়তানের কাজ।
এ ব্যাপারে সূরাহ মায়িদাহ এর ৯০ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,
“হে বিশ্বাসীগণ, মদ্যপান, জুয়া খেলা, মূর্তি পুজা করা, এবং ভাগ্য নির্ধারক শর এ সবকিছুই শয়তানের কাজ ছাড়া কিছুই নয়। সুতরাং এসব কাজ থেকে বিরত থাকো, যাতে করে তোমরা কল্যানপ্রাপ্ত হতে পারো।”
৬. ব্যভিচার
ছেলে এবং মেয়ে যদি জেনা ব্যভিচারে লিপ্ত হয় এবং তারা বিবাহিত হলে গলা পর্যন্ত মাটিতে পুতে পাথর দিয়ে আঘাত করার মাধ্যমে মৃত্যু নিশ্চিত করতে হবে।
অবিবাহিত হলে ১০০ বেত্রাঘাত করতে হবে এবং দেশ থেকে বের করে দিতে হবে। এটাই মহান আল্লাহ তায়ালার বিধান। জেনা ব্যভিচারের মাধ্যমে দেশে এবং সমাজে মারাত্মক অরাজকতা সৃষ্টি হয়।
৭. অন্যের সম্পদ আত্মসাৎ করা
অপরের সম্পদ গায়ের জোড়ে দখল করে ভোগ করার শাস্তি মহান আল্লাহ তায়ালা দুনিয়াতেই দিয়ে থাকেন। যারা অন্যের সম্পদ আত্মসাৎ করে তারা মানসিকভাবে কখনোই সুস্থ থাকে না। সর্বদাই অশান্তির মধ্যে থাকে।
৮. ওজনে কম দেয়া
ওজোনে কম দেয়া মানুষ সর্বদাই আতঙ্কে থাকে, দুশ্চিন্তা তাদের চিরসংগি হয়ে থাকে। মানসিক যন্ত্রণা সারাজীবন তাদের পিছু ছাড়ে না।
৯. খাদ্যে ভেজাল দেয়া
খাদ্যে ভেজাল দেয়া মানুষের শাস্তিও মহান আল্লাহ তায়ালা দুনিয়াতেই দিয়ে থাকেন। মানসিক কষ্টসহ বিভিন্ন রোগ বালাই দিয়ে থাকেন তাদের।
১০. বিচারে একমুখী নীতি অবলম্বন করা
বিচারে একমুখী নীতি অবলম্বন করলে মহান আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে দুনিয়াতেই লাঞ্চিত করেন।
১১. ওয়াদা ভংগ করা
কাউকে কথা দিয়ে কথা না রাখলে কিংবা ওয়াদা ভংগ করলে মহান আল্লাহ তায়ালা এর কিছু শাস্তি দুনিয়াতেই দিয়ে থাকেন। তারমধ্যে, মানসিক অশান্তি, রোগবালাই, ইত্যাদির মাধ্যমে মহান আল্লাহ তায়ালা তাদের শাস্তি দিয়ে থাকেন।
পরিশেষে বলা যায়, মহান আল্লাহ তায়ালা মুসলমানদের যেসব কাজ করতে নিষেধ করেছেন আমরা যেন সেসব কাজ থেকে বিরত থাকি। আমাদের মনে রাখা উচিৎ, পরিশ্রমে ধন আনে আর পুণ্যে আনে সুখ।
আরও পড়ুন,
১. ইবলিশ শয়তানের ১০ টি প্রধান কাজ
২. পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের শারীরিক উপকারিতা
৩. রাতে ঘুমানোর পূর্বে ইসলামের আলোকে কিছু কাজ
৪. জুমার দিনে যে কাজগুলোর মর্যাদা সবচেয়ে বেশি
নিচের বাটনে ক্লিক করে আপনার প্রিয়জনদের সাথে শেয়ার করুন