রোজা রাখার উপকারিতা জেনে নেয়ার পূর্বে শুরুতে কিছু কথা না বললেই নয়। কালিমা, নামাজ, রোজা, হজ্জ, যাকাত ইসলামের স্তম্ভ মোট ৫ টি।
এর মধ্যে রোজা আছে তিন নম্বরে। আরবি ১২ মাসের মধ্যে শ্রেষ্ঠ এবং তাৎপর্যপূর্ণ মাস হচ্ছে রমযান মাস।
এই মাসে মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের জন্য পবিত্র কুরআন নাযিল করেছেন। রমযান মাস হলো ট্রেইনিং নেয়ার মাস।
বাকি ১১ টি মাস একজন মুসলমান কিভাবে চলবে তার ট্রেইনিং হয় এই মাসে। এই মাসে মহান আল্লাহ তায়ালা রহমত, বরকত, এবং মাগফিরাত নাযিল করেন আমাদের উপর।
দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে আমরা ছোট বড় অনেক পাপ করে থাকি। এই পাপ মোচন করতে এবং মহান আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য লাভের জন্য উপযুক্ত মাস হচ্ছে রমযান মাস।
দীর্ঘ এক মাস রোজা পালন করলে তাকওয়া এবং ধৈর্য ধারণ করার উপযুক্ত শিক্ষা লাভ করা যায়।
মহান আল্লাহ তায়ালা এ ব্যাপারে পবিত্র কুরআনে বলেছেন,
“রমযান মাসই হল সে মাস, যাতে নাযিল করা হয়েছে কোরআন, যা মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সত্যপথ যাত্রীদের জন্য সুষ্পষ্ট পথ নির্দেশ আর ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী।
কাজেই তোমাদের মধ্যে যে লোক এ মাসটি পাবে, সে এ মাসের রোযা রাখবে। আর যে লোক অসুস্থ কিংবা মুসাফির অবস্থায় থাকবে সে অন্য দিনে গণনা পূরণ করবে।
আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান; তোমাদের জন্য জটিলতা কামনা করেন না যাতে তোমরা গণনা পূরণ কর এবং তোমাদের হেদায়েত দান করার দরুন আল্লাহ তা’আলার মহত্ত্ব বর্ণনা কর, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর।
[ সুরা বাকারা ২:১৮৫ ]”
পার্থিব জীবনে আমরা অনেক সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকি। অনেক ধরণের অসুস্থতা আমাদের গ্রাস করে থাকে প্রায়ই।
কিন্তু আপনি জানেন কি! রমযানের রোজা পালনের মাঝে আছে অনেক শারীরিক উপকারিতা?
রমযানের রোজা পালনের উপকারিতা নিয়ে বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এছেসে চাঞ্চল্যকর অনেক তথ্য।
পরকালীন মুক্তির পাশাপাশি রোজা রাখার শারীরিক উপকারিতা এবং রোজা রাখার মানসিক উপকারিতা রয়েছে।
এখান থেকে জেনে নিতে পারেন, নামাজের উপকারিতা কি?
চলুন জেনে নেই রোজা রাখার স্বাস্থ্যগত কিছু উল্লেখযোগ্য উপকারিতা।
সুচীপত্র
- রোজা রাখার শারীরিক উপকারিতা
- ১. শরীর থেকে টক্সিন দূর করে
- ২. হজমক্রিয়া জনিত সমস্যা দূর করে
- ৩. চর্মরোগ ও এলার্জি দূর করতে রোজার ভূমিকা
- ৪. ডায়াবেটিস প্রতিরোধে রোজা
- ৫. অতিরিক্ত ফ্যাট কিংবা চর্বি কমায়
- ৬. উচ্চরক্তচাপ কমায়
- ৭. নেশাদ্রব্য হতে মুক্তিলাভ
- ৮. অতিরিক্ত খাওয়ার অভ্যাস দূর হয়
- ৯. রক্তের কোলেস্টেরল কমায়
- ১০. ব্রেইনের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে
- রোজা রাখার মানসিক উপকারিতা
রোজা রাখার শারীরিক উপকারিতা
১. শরীর থেকে টক্সিন দূর করে
যত দিন যাচ্ছে ততই আমরা প্রক্রিয়াজাত খাবারের প্রতি ঝুঁকে পড়ছি। হাতে বানানো চালের আটা থেকে রুটি তৈরি করে বর্তমানে কে খায়?
এখন তো আমরা খাই পাউরুটি, কেক, বিস্কুট ইত্যাদি। আগে মানুষ ঢেঁকিতে ধান মাড়াই করে সেই চালের ভাত খেত আর এখন আমরা খাই অটো মেইলের চিকন চাল।
এই চিকন চালে কোন ফাইবার থাকে না ফলে আক্রান্ত হচ্ছি ডায়াবেটিসের মতো রোগে।
বিভিন্ন প্রক্রিয়াজাত খাবার খেলে আমাদের শরীরে বিষাক্ত পদার্থ অর্থাৎ টক্সিন জমা হয়। যা দীর্ঘদিন শরীরে থাকলে অনেক জটিল জটিল রোগের সৃষ্টি হতে পারে।
যেমন, মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা হ্রাস পাওয়া, অকালে দাঁত পড়ে যাওয়া, দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া, কিডনি নষ্ট হয়ে যাওয়া, হৃদরোগ, অ্যাজমা ইত্যাদি।
জেনে নিন, কিডনি রোগের কারণ কি?
রমযান মাসে ৩০ দিন দিনের বেলায় না খেয়ে থাকতে হয় এর ফলে শরীরের ফ্যাট বা চর্বি কমে যায়।
বিভিন্ন ধরণের ক্ষতিকারক পদার্থ অর্থাৎ টক্সিন কিডনি লিভার ইত্যাদি দিয়ে শরীর হতে বের হয়ে যায়।
রোজা রাখার শারীরিক উপকারিতা গুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ দূর করা, যা মানব শরীরের জন্য অপরিহার্য।
২. হজমক্রিয়া জনিত সমস্যা দূর করে
রোজা রাখার উপকারিতা গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি উপকারিতা হচ্ছে হজমক্রিয়া জনিত সমসা দূর করে।
যেসব অঙ্গ খাবার হজম প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত তারা রমযান মাসে দীর্ঘ সময় বিরতি পায়। খাদ্য হজমের জন্য শরীর থেকে কিছু হরমোন নিঃসরণ হয়।
পেট খালি থাকলে এই হরমোন নিঃসরণ অনেকটা ধীর হয়ে যায়। ফলে রমযানের পরে এই ধীর গতিতে হরমোন নিঃসরণ অনেকদিন অপরিবর্তিত থাকে।
যার ফলে খাবারগুলো ধীরে ধীরে হজম হয়। দ্রুত হজম হলে স্বাস্থ্যের জন্য ভাল না। হজমে একটা ব্যাল্যান্স আনতে রমযানের রোজা পালনের বিকল্প নেই।
৩. চর্মরোগ ও এলার্জি দূর করতে রোজার ভূমিকা
বিভিন্ন গবেষণা প্রতিবেদন হতে জানা যায় যে অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে কিংবা আঘাতের কারণে মানুষের চর্ম রোগ কিংবা এলার্জির মতো রোগ দেখা দিতে পারে।
এক মাস ধরে রোজা পালন করলে এ ধরনের অ্যালার্জি কিংবা চর্ম রোগ হতে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
বিশেষজ্ঞ ডাক্তার গনের মতে পিত্তথলির রোগ আলসার ইত্যাদি নিরাময়েও রোজার ভূমিকা অনস্বীকার্য।
রোজা রাখার শারীরিক উপকারিতা গুলোর মধ্যে এটি হচ্ছে উল্লেখযোগ্য একটি উপকারিতা।
আরও পড়ুন, জুমার দিনের আমল
৪. ডায়াবেটিস প্রতিরোধে রোজা
প্রতিদিন নিয়মিত তিনবেলা করে খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরে অতিরিক্ত গ্লুকোজ ফ্যাট এবং বিভিন্ন উপাদান জমে থাকে।
সারাদিন ধরে না খেয়ে থাকলে দেহের ভেতর জমে থাকা অতিরিক্ত চর্বি কিংবা ফ্যাট অথবা গ্লুকোজ দ্রুত ভাঙতে শুরু করে এবং এগুলো ভেঙ্গে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় এনার্জি উৎপাদন করে।
যার ফলে ইনসুলেটর উৎপাদন কমে যায় এবং প্যানক্রিয়াস ইনসুলিন উৎপাদন থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে কিছুটা বিশ্রামে থাকতে পারে।
সারাদিন রোজা রাখার ফলে শরীরের মধ্যে অতিরিক্ত গ্লুকোজ ভেঙ্গে যায় এবং তা থেকে গ্লাইকোজেন তৈরি হয় যা রক্তে সুগারের পরিমাণ কমিয়ে দেয়।
এভাবে মূলত ডায়াবেটিস থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। সুতরাং ডায়াবেটিস থেকে মুক্তি লাভের জন্য রমযানের রোজা পালনের বিকল্প নেই।
রোজা রাখার উপকারিতা গুলোর মধ্যে এটি অন্যতম একটি উপকারিতা।
এখান থেকে জেনে নিন, ডায়াবেটিস কেন হয়?
৫. অতিরিক্ত ফ্যাট কিংবা চর্বি কমায়
রোজা রাখার শারীরিক উপকারিতা গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি উপকারিতা হচ্ছে রোজা রাখলে শরীরের অতিরিক্ত চর্বি কমায়।
সারাদিন রোজা রাখলে রোজাদার ব্যক্তির শরীরের জমে থাকা গ্লুকোজ ভেঙ্গে শক্তি উৎপাদন করে। এভাবে গ্লুকোজের পরিমাণ অনেক কমে যায় ফলে শরীরের ভিতরে এক প্রকার রাসায়নিক প্রক্রিয়া শুরু হয়।
রাসায়নিক প্রক্রিয়াটিকে কেটসিস বলা হয়। এই কেটসিস প্রক্রিয়াটি শরীরের ফ্যাট বা চর্বি কমাতে সহায়তা করে থাকে।
সারাদিন না খাওয়ার ফলে শরীরে যে শক্তির প্রয়োজন হয় তা শরীরে জমে থাকা ফ্যাট থেকে উৎপন্ন হয়ে শরীরে শক্তির চাহিদা পূরণ করে।
৬. উচ্চরক্তচাপ কমায়
বর্তমানে উচ্চ রক্তচাপ একটি কমন রোগে পরিণত হয়েছে। রোজা রাখার উপকারিতা গুলোর মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য উপকারিতা হচ্ছে ব্লাড প্রেসার বা উচ্চ রক্তচাপ কমায়।
একবার এই রোগ হয়ে গেলে সারাজীবন একে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়। খেতে হয় বেশ কয়েক প্রকারের ওষুধ।
কিন্তু রোজা রাখার মাধ্যমে উচ্চ রক্তচাপ কমানো যায় বা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় এ ব্যাপারে আমরা অনেকেই জানি না।
একটানা রোজা রাখলে শরীরে জমে থাকা গ্লুকোজ ভেঙ্গে যায় এবং পরবর্তীতে শরীরে জমে থাকা ফ্যাট ভেঙ্গে তৈরি হয় প্রয়োজনীয় শক্তি।
রোজা রাখলে শরীরের ভিতরে স্টেস হরমোনের নিঃসরণ কমে যায়। রোজা রাখার সবচেয়ে বড় উপকার হলো শরীরের জমে থাকা ফ্যাট ভেঙ্গে শক্তি উৎপন্ন করে ফলে স্ট্রক কিংবা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি অনেক কমে যায়।
জেনে নিন, দাঁড়িয়ে পানি খেলে কি হয়?
৭. নেশাদ্রব্য হতে মুক্তিলাভ
আমাদের দেশে মাদকের ছড়াছড়ি এ ব্যাপারে আমরা সবাই জানি। দেশের যুব সমাজের অনেকেই আজ নেশায় আসক্ত।
কেউ ধূমপান, কেউ গাঁজা, কেউ মিষ্টি জাতীয় খাবারে আসক্ত, এছাড়া অনেকেই অনেক ভয়ঙ্কর নেশায়ও আসক্ত।
অনেকেই আছে নেশা ছাড়তে চায় কিন্তু পারছে না। তাদের জন্য সমাধান হলো রমযানের রোজা রাখা।
রোজা রাখলে সারাদিন না খেয়ে থাকার মাধ্যমে নেশাদ্রব্য হতে দূরে থাকা যায়। রোজা রাখার মানসিক উপকারিতা গুলোর মধ্যে এটিও একটি উপকারিতা।
৮. অতিরিক্ত খাওয়ার অভ্যাস দূর হয়
রোজা রাখার শারীরিক উপকারিতা অনেক রয়েছে এসব উপকারিতাগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মানুষের অতিরিক্ত খাওয়ার অভ্যেস দূর করে।
পেটুক নামটার সাথে আমরা কম বেশি সবাই পরিচিত। আমাদের সমাজে অনেক মানুষ আছে যারা খেতে অনেক পছন্দ করে।
কিন্তু তারা অনেকেই জানে না যে এই অতিরিক্ত মাত্রায় খাওয়া শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতি নিয়ে আসে। রমজান মাসে খাওয়ার পরিমাণ অনেক কমে যায়।
অতিরিক্ত পরিমাণে না খেতে খেতে পাকস্থলী অনেকটা সঙ্কুচিত হয়ে যায়। রমযানের রোজা রাখার মাধ্যমে শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়।
এখান থেকে জেনে নিন, ইসলামে খাবার খাওয়ার নিয়ম
৯. রক্তের কোলেস্টেরল কমায়
রোজা রাখার শারীরিক উপকারিতা কি এ নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে গবেষকরা জানতে পেরেছেন, রোজা রাখলে রক্তের কোলেস্টেরল কমে যায়।
একটি গবেষণায় দেখা গেছে রোজাদার ব্যক্তির রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা অনেক কম থাকে। কারণ সারাদিন না খেয়ে থাকার কারণে জমে থাকা কোলেস্টেরল ভেঙ্গে গিয়ে শক্তি উৎপন্ন করে।
আমরা জানি অতিরিক্ত মাত্রায় কোলেস্টেরলের কারণে হৃদরোগ, হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, ইত্যাদি হয়ে থাকে।
রমযানের রোজা পালন করলে এবং রামজান ছাড়াও অন্য মাসে রোজা রাখলে রক্তে কলেস্টেরলের মাত্রা কমে যায় এবং হৃদরোগ হতে মুক্তি পাওয়া যায়।
তাই হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে রোজা রাখার বিকল্প হতে পারেনা।
১০. ব্রেইনের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে
আপনি জানলে হয়তো আশ্চর্য হবেন যে, রোজা রাখার উপকারিতা গুলোর মধ্যে একটি প্রধান উপকারিতা হচ্ছে মস্তিষ্কের কার্য ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
রোজাদার ব্যক্তির শরীরে এবং মনে এক ধরণের পজিটিভ অনুভুতির সৃষ্টি হয় ফলে মস্তিষ্ক অনেক চঞ্চল থাকে।
সাম্প্রতি অ্যামেরিকার একদল বিজ্ঞানী জানিয়েছেন, রোজা রাখলে ব্রেইন এ নতুন নতুন কোষের জন্ম হয় যার ফলে সৃতিশক্তি এবং মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা অনেকাংশে বৃদ্ধি পায়।
রমজানে রোজা রাখলে স্ট্রেস হরমোনের নিঃসরণ কমে যায় ফলে মানসিক চাপ ও অনেক কম থাকে যা ব্রেইনের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
আরও পড়ুন, কর্মক্ষেত্রে সৃজনশীলতা বৃদ্ধি করার উপায়
রোজা রাখার মানসিক উপকারিতা
রোজা রাখার শারীরিক উপকারিতা নিয়ে বিস্তারিত জেনে নিলাম। রোজা রাখার শারীরিক উপকারিতার পাশাপাশি রয়েছে রোজা রাখার মানসিক উপকারিতা।
আসুন জেনে নিই, রোজা রাখার মানসিক উপকারিতা গুলো কি কি?
১. পাপ থেকে মুক্তি
জীবনে চলার পথে জেনে বা না জেনে অনেক পাপ করে থাকি। এসব পাপ থেকে মুক্তি লাভ করার জন্য উপযুক্ত মাস হচ্ছে রমযান মাস।
রমযানের রোজা পালনের মাধ্যমে মহান আল্লাহর উপর ভয় বৃদ্ধি পায়। মহান আল্লাহর প্রতি ভয় বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে আমরা পাপ কাজ থেকে দূরে থাকতে চেষ্টা করি।
কেননা মনে আল্লাহর ভয় থাকলে কোন অবস্থায় খারাপ এবং পাপ কাজ করা একজন মানুষের পক্ষে সম্ভব হয় না।
এখান থেকে জেনে নিন, মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার উপায়
২. চরিত্রকে মজবুত করে
মানুষের চরিত্রকে মজবুত এবং শক্তিশালী করতে রোজা রাখার প্রতি গুরুত্ব দেয়া উচিৎ। রোজা রাখার মাধ্যমে অন্তরকে পরিশুদ্ধ করা যায় এবং মনকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা বৃদ্ধি করা যায়।
রোজা রাখলে সৃষ্টিকর্তার প্রতি ভালোবাসা অনেক বৃদ্ধি পায়। প্রায় সকল ধর্মে না খেয়ে থাকার নিয়ম রয়েছে। তবে ইসলাম ধর্মের মতো দীর্ঘ সময় না খেয়ে রোজা পালনের নিয়ম অন্য ধর্মে নেই।
আমরা অনেকেই না খেয়ে থাকাকে রোজা রাখা মনে করি। কিন্তু আসলে তা ভুল ধারণা। সুবহে সাদিক হতে সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত কোন প্রকার পানাহার থেকে বিরত থেকে এবং পৃথিবীর সকল ধরণের খারাপ কাজ হতে নিজেকে বিরত থাকার নামই রোজা।
যদি কোন ব্যক্তি ইসলামের নিয়ম অনুসারে রোজা রাখে তবে সেই ব্যক্তির চরিত্র অনেক মজবুত এবং শক্তিশালী হয়ে উঠবে।
মানুষের চরিত্রকে মজবুত করা রোজা রাখার মানসিক উপকারিতা গুলোর মধ্যে অন্যতম প্রধান একটি উপকারিতা।
৩. আত্ম পর্যালোচনা শেখায়
রমজান মাসে মানুষ কিভাবে চলবে, কিভাবে তার জীবনকে পরিচালনা করবে এসবকিছু নিয়ে ভাবে। কারণ রোজা রাখলে মানুষের মন অনেক নরম থাকে।
আর মন নরম থাকে বলে একজন মানুষ তার ভালো এবং খারাপ কাজ নিয়ে অনেক চিন্তা ভাবনা করে থাকে।
নিজেকে নিয়ে এই চিন্তা ভাবনার কারণে সে কোন পথে চলছে তা নিয়ে একটা ধারণা পেয়ে যায়, এবং সে ভবিষ্যতে নিজেকে কিভাবে চালাবে তারও একটা সঠিক ধারণা পেয়ে যায়।
এই ধারণাকে পুঁজি করে সে নতুনভাবে তার জীবনকে সাঁজাতে, গোছাতে পারবে। রমজান মাস একটি আধ্যাত্মিক মাস হওয়ার কারণে এই মাসে যেসব চিন্তা চেতনা মনের ভিতরে জাগ্রত হয় অন্যান্য মাসে সেই চিন্তা চেতনাগুলো মাথায় আসে না।
তাই নিজেকে সঠিকভাবে পরিচালনা করতে রমযানের গুরুত্ব অপরিসীম। এটি রোজা রাখার মানসিক উপকারিতা গুলোর মধ্যে একটি।
আরও পড়ুন, যেসব খাবার খেলে ভালো ঘুম হয়
৪. মনে দয়া মায়া বৃদ্ধি করে
রোজার একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হলো ধনী এবং গরীবের মাঝে সমতা প্রতিষ্ঠা করা। একজন ধনী ব্যক্তি যেমন সারাদিন না খেয়ে রোজা রাখে ঠিক একইভাবে একজন গরীব অভাবী মানুষও ঠিক তেমনি ভাবে রোজা রাখে।
ধনী ব্যক্তির অনেক টাকা পয়সা থাকার পরেও সারাদিন না খেয়ে থাকে এর ফলে সে বুঝতে পারে বা অনুভব করতে পারে যে, একজন অভাবী মানুষের কি কষ্ট!
যারা ঠিকমতো খেতে পারে না একমাত্র তারাই বুঝে তাদের কি কষ্ট, কিন্তু রোজা রাখলে সারাদিন না খেয়ে থাকতে হয় ফলে ধনী ব্যক্তিরা কিছুটা হলেও গরীব মানুষের কষ্ট অনুভব করতে পারে।
তাই গরীব অভাবী মানুষের প্রতি ধনী মানুষের মায়া মোহাব্বতের সৃষ্টি হয়। গরীবের প্রতি ধনীদের সহানুভূতি, দয়া ভালোবাসা বৃদ্ধি করতে পারে রমযানের রোজা।
মানুষের মনে দয়া মায়া বৃদ্ধি করা রোজা রাখার উপকারিতা গুলোর মধ্যে একটি। তাই রমযানের রোজা ছারাও অন্যান্য দিনেও রোজা রাখা উচিৎ।
৫. চিন্তা চেতনাকে উন্নত করে
চিন্তা চেতনাকে উন্নত করা রোজার রাখার মানসিক উপকারিতা গুলোর মধ্যে একটি। রোজা রাখলে সৃষ্টিকর্তার প্রতি মানুষের সচেতনতা বহুগুণ বৃদ্ধি পায়।
অন্যান্য দিনের তুলনায় সৃষ্টিকর্তার প্রতি আনুগত্য ও ভয় অনেক বেশি থাকে। রোজা রাখা অবস্থায় কোন মানুষের মাথায় খারাপ কোন চিন্তা আসলে সে সৃষ্টিকর্তার ভয়ে সেই খারাপ চিন্তা সাথে সাথে মাথা থেকে দূর করে দেয়।
খারাপ কাজ করার সময় তার মাথায় আসে যে সে রোজা আছে, খারাপ কাজ করা যাবে না।
এই রকম একটি অনুশীলন দীর্ঘদিন ধরে করলে তা মানুষের অভ্যাসে পরিণত হয় ফলে অন্যান্য মাসে কোন খারাপ কাজ করতে গেলে আপনাআপনি আল্লাহর ভয় চলে আসে এবং খারাপ কাজ থেকে মানুষ বিরত থাকতে পারে।
৬. কাজের প্রতি মনোযোগ বৃদ্ধি করে
আপনি জেনে অবাক হবেন যে, রোজা রাখার মানসিক উপকারিতা গুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে কাজের প্রতি মনোযোগ বৃদ্ধি করে।
মানুষ রোজা রেখে সাধারণত বেশি কথা বলা, অহেতুক তর্ক বিতর্ক করা, গান শোনা, আড্ডা দেয়া, সিনেমা দেখা ইত্যাদি কাজ থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করে থাকেন।
অহেতুক কাজে সময় নষ্ট না করে তারা নফল ইবাদতের দিকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন, বেশি বেশি দান সদকা করে থাকেন, কুরআন তিলাওয়াত করে থাকেন।
এসব কাজ যখন অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায় তখন অন্যান্য মাসগুলোতে যে কোন ভালো কাজের প্রতি মনোযোগ বৃদ্ধি পায়।
আরও পড়ুন, যেসব খাবার মানসিক বিষণ্ণতা বৃদ্ধি করে
৭. স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে
বিভিন্ন গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা যায় রোজা রাখলে শরীর থেকে অতিরিক্ত চর্বি বের হয়ে যায়, শরীরে জমে থাকা বিষাক্ত পদার্থ গুলো বের হয়ে যায় ফলে ঘুমের গভীরতা বৃদ্ধি পায়, চিন্তা চেতনা তীক্ষ্ণ হয়, স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়।
এছাড়াও বিভিন্ন জটিল জটিল রোগ হতে মুক্তি পাওয়া যায়। রোজা রাখার মানসিক উপকারিতা গুলোর মধ্যে এটি অন্যতম।
আরও পড়ুন, মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার উপায়
পরিশেষে বলা যায়, মানবজাতির কল্যানের জন্যই মহান সৃষ্টিকর্তা রমযানের রোজা পালন করা বাধ্যতামূলক করে দিয়েছেন।
বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে শত শত উপকারিতা জানতে পেরেছেন। রোজা রাখলে মানুষের শারীরিক এবং মানসিক উভয় ধরণের উপকার হয়ে থাকে। তাই রোজা পালন করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
WOW just what I was looking for. Came here by searching
for website
রোজা নিয়ে লেখাটি অনেক তথ্যপুর্ন, এমন অনেক কিছুই আমি জেনেছি যা আগে জানতাম না। এমন একটি লেখা আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য helptunebd কে অনেক অনেক ধন্যবাদ!
আপনার মূল্যবান মতামতের জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ!
নতুন নতুন লেখা পেতে আমাদের সাথেই থাকুন।