বিবাহ একটি পবিত্র বন্ধন। এর মাধ্যমে সমাজ থেকে জেনা ব্যবিচার থেকে সমাজকে রক্ষা করা সম্ভব হয়। একবার চিন্তা করে দেখুন, যদি বিয়ের ব্যবস্থা না থাকতো তবে সমাজে কি বিশৃঙ্খলাটাই না হত।
মেয়েদের বিয়েতে অভিভাবকের অনুমতি নেয়া কেন প্রয়োজন, অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া মেয়েদের বিয়ে শুদ্ধ হবে না কেন এ নিয়ে ইসলামের কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা পেশ করা হবে ইনশাআল্লাহ।
আসুন জেনে নেই, অলী ছাড়া বিয়ে অর্থাৎ মেয়ের অভিভাবক ব্যতীত কি বিয়ে ইসলামে বৈধ?
মেয়েদের বিয়েতে আভিভাবকের অনুমতি কেন প্রয়োজন
বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণে মেয়েদের বিয়েতে অভিভাবকের অনুমতি প্রয়োজন। নিচের কয়েকটি পয়েন্টে ইসলামের আলোকে আলোচনা করা হল।
১. মেয়ের বিয়ের হাদিস
সর্বশ্রেষ্ঠ মানব, মুসলমানদের নয়ন মণি হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) বলেছেন,
“অভিভাবক বা অলী ছাড়া বিয়ে সম্পন্ন হয় না।” তিরমিজি শরীফ, হাদিস নং- ১১০১, আবু দাউদ, হাদিস নং- ২০৮৩।
উপরোক্ত হাদিসের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, বিয়ের জন্য নারীদের পরামর্শ কিংবা জ্ঞান পরিপূর্ণ থাকে না এবং নারীদের চিন্তা ভাবনা অনেক সময় ভুল হয়ে থাকে।
তাই বিয়ের ক্ষেত্রে নারীদের চিন্তা বা পরামর্শ কখনো কখনো উত্তম ও কল্যাণকর নাও হতে পারে। এ কারণে মেয়েদের বিয়ের ব্যাপারে ইসলামে অভিভাবকদের অনুমতির প্রতি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
২. বংশ মর্যাদা রক্ষা
বিবাহের ক্ষেত্রে বংশ মর্যাদা অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। মেয়ে মানুষ অতি আবেগি হওয়ার কারণে বংশ মর্যাদা রক্ষার ব্যাপারে উদাসীন হতে পারে।
অনেক সময় বংশ মর্যাদার তোয়াক্কা না করে ভবিষ্যৎ না ভেবেই বিয়ের জন্য উৎসাহী হতে পারে। যদি এমনটা হয় তবে সেক্ষেত্রে বংশ মর্যাদা রক্ষা করা সম্ভব হয় না।
তাই মেয়েদের বিয়ের ব্যাপারে অভিভাবককে কিছুটা অধিকার দেয়া হয়েছে, যা পুরোটাই কল্যাণের জন্যই।
৩. নারীর উপর পুরুষের কর্তৃত্ব
মুসলিম সমাজে নারীদের পরিচালনা করতে পুরুষদের অধিকার দেয়া হয়েছে। এতে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয় না। সংসার পরিচালনার সকল দায়িত্ব পুরুষের হাতে ন্যাস্ত হয়।
এ কারণে মেয়েদের বিয়ের ক্ষেত্রে একজন পুরুষ অভিভাবকের মতামত অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
৪. অভিভাবকের সম্মান রক্ষা
একটি পরিবারের অভিভাবকের সম্মান অনেক গুরুত্বপূর্ণ। মেয়েদের বিয়েতে অভিভাবকের মতামতের বা অনুমতির শর্ত আরোপ করে অভিভাবকের সম্মান রক্ষার পথ তৈরি করে দেয়া হয়েছে।
এই সম্মান মেয়ের পরিবারের মাঝেও বিরাজ করবে যুগ যুগ ধরে।
৫. বিয়ের কথা প্রাচার
মেয়েদের বিয়ের কথা যত বেশী প্রচার হবে সমাজে বিশৃঙ্খলা হওয়ার সম্ভাবনা ততোই কমে আসবে। গোপন বিয়েতে বিশৃঙ্খলা হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশী থাকে।
আর মেয়েদের বিয়েতে অভিভাবকের অনুমতি ও উপস্থিতি সে প্রচারকে কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেয়, এবং এতে বিয়ের গুরুত্ব ফুটিয়ে ওঠে।
৬. অবহেলা থেকে রক্ষা
যেসকল বিয়ে অভিভাবক ছাড়া হয়ে থাকে তাদের সংসারে নারী অবহেলার স্বীকার হয়। সংসারে ঝগড়া বিবাদ লেগেই থাকে এবং অনেক সময় সংসার ভেঙ্গে যায়।
অপরদিকে অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া বিয়ে করলে মেয়ের অভিভাবক বিয়ে মানতে চায় না, এতে অভিভাবকের সাথে সরাসরি বিরোধের সৃষ্টি হয়। ইসলাম তা কখনই সমর্থন করে না।
তাই যেকোনো নারীর বিবাহের জন্য অবশ্যই অভিভাবকের অনুমতি নিতে হবে।
অভিভাবক হওয়ার শর্ত
অভিভাবক উপযুক্ত হওয়ার জন্য মোট ৬টি শর্ত রয়েছে। আসুন জেনে নেই কি সেই শর্ত?
১. বিবেক সম্পন্ন হওয়া
অভিভাবককে অবশ্যই বিচার বুদ্ধি এবং বিবেক সম্পন্ন লোক হতে হবে, তবেই উপযুক্ত অভিভাবক হওয়ার যোগ্যতা হতে পারবে। পাগল কিংবা আধা পাগল লোক উপযুক্ত অভিভাবক হতে পারবে না।
২. প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া
উপযুক্ত অভিভাবকের আরও একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া। অপ্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তি কোন নারীর বিয়েতে অভিভাবকত্ব করতে পারবে না এবং তার থেকে অনুমতি নেয়ার প্রয়োজনও নেই।
৩. স্বাধীন হওয়া
কোন নারীর বিয়েতে অভিভাবক হতে পারবে স্বাধীন ব্যক্তি। কোন পরাধীন ব্যক্তি, গোলাম বা ক্রীতদাস অভিভাবক হতে পারবে না।
৪. পুরুষ হওয়া
কোন নারীর বিয়েতে কোন নারী অভিভাবক হতে পারবে না। অভিভাবককে অবশ্যই পুরুষ হতে হবে।
৫. মুসলিম হওয়া
একজন মুসলিম নারীর অভিভাবক একজন কাফের ব্যক্তি হতে পারবে না। মুসলিম নারীর জন্য মুসলিম ব্যক্তি অভিভাবক হতে পারবে।
৬. অভিভাবক হওয়ার উপযুক্ত হওয়া
অভিভাবক হওয়ার উপযুক্ত হওয়া বলতে, পাত্র নির্বাচন, ভালো মন্দ বিচার, কল্যান অকল্যাণ সম্পর্কে জ্ঞান, ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ে পরিপূর্ণ জ্ঞান থাকা।
উপরোক্ত বৈশিষ্ট ব্যক্তি কেবল একজন নারীর অভিভাবক হিসেবে বিবেচিত হবে অন্যথায় অন্যদের অনুমতি গ্রহণযোগ্য হবে না।
মেয়ের বিয়েতে অভিভাবকের অনুমতি কেন প্রয়োজন এবং কারা অভিভাবক হতে পারবে বা অভিভাবক হওয়ার যোগ্যতা নিয়ে তো বিস্তারিত জানলাম। এখন জানা দরকার কোন মেয়ের অভিভাবক না থাকলে কারা অভিভাবক হতে পারবে?
কারা অভিভাবক হতে পারবে?
অনেকের বাবা মা নেই, বা মা আছে বাবা নেই, কারও মা বাবা চাচা কেউ নেই, তাদের ক্ষেত্রে কারা অভিভাবক হতে পারবে? অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশ্ন। আসুন জেনে নেই কারা অভিভাবক হতে পারবে?
ইসলামে অভিভাবকের অনুমতি নিয়ে বিয়ের করার ব্যাপারে অধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে আমাদের শেষ নবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) বলেছেন,
“অভিভাবক ছাড়া কোন বিয়ে নেই। তিনি আরও বলেন, যে মেয়ে নিজে নিজের বিয়ে সম্পন্ন করবে তার বিয়ে বাতিল বাতিল বাতিল। অভিভাবকরা যদি ঐ বিয়েতে বাঁধার সৃষ্টি করে তবে, যার ওলী বা অভিভাবক নেই, শাসক বা সুলতান তার অভিভাবক হবে।” (তিরমিযি, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, আহমাদ)।
বাবা না থাকলে বংশের যে কোন পুরুষ ব্যক্তি যার অভিভাবক হওয়ার যোগ্যতা আছে সে অভিভাবক হতে পারবে।
মেয়ের বিয়েতে শুধু অভিভাবকের মতামতকেই প্রাধান্য দেয়া হয়নি বরং যার বিয়ে তার মতামতকেও প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ অভিভাবক রাজি কিন্তু মেয়ে রাজি নয় এমন বিয়ে হবে না।
মেয়েদের বিয়েতে অভিভাবক থাকা কতটা জরুরী তা উপরের আলোচনা থেকে স্পষ্ট হয়েছে। ইসলামিক পদ্ধতিতে এই পবিত্র বন্ধনে সবাই আবদ্ধ হোক এটাই কামনা।
আজ এ পর্যন্ত, আগামীতে দেখা হবে নতুন কোন বিষয় নিয়ে, ততদিনে ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন। আল্লাহ হাফেজ।
আরও পড়ুন,
*লেখাটি ভালো লাগলে শেয়ার করার অনুরোধ রইল*