আমরা মুসলমান জাতি, মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের স্রষ্টা। তিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন এবং তিনিই আমাদের রিজিক প্রদান করে থাকেন।
মহান আল্লাহ তায়ালার ৯৯টি গুণবাচক নামের মধ্যে একটি নাম হচ্ছে রাজ্জাক, যার বাংলা অর্থ হচ্ছে রিজিক দাতা। মহান আল্লাহ তায়ালা এবং আমাদের প্রিয় রাসূল (সাঃ) রিজিক বাড়ানোর আমল বলে দিয়েছেন।
আমরা সাধারণত খাবার, টাকা পয়সা, ধন দৌলত ইত্যাদিকে রিজিক মনে করে থাকি। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে রিজিকের পরিধি অনেক বড়। যেমন, স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, বুদ্ধি, বিবেচনা, মেধা, ছেলে মেয়ে, যত ধরণের কল্যাণ রয়েছে সবকিছুই রিজিকের অন্তর্ভুক্ত।
রিজিক কম কিংবা বেশি এ বিষয়টি একটি বড় রহস্য। কেউ অনেক টাকা পয়সার মালিক আবার কেউ ফকির, কেউ অতি তারাতারি বড়লোক হয়ে যায় আবার কেউ অনেক চেষ্টা পরিশ্রম করেও বড়লোক হতে পারে না।
জীবনকে সঠিকভাবে পরিচালনা করতে হলে রিজিকের বিকল্প নেই। তাই মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে রিজিকের অনুসন্ধান করতে বলেছেন।
পৃথিবীর সকল মানুষই চায় তার জীবনে স্বচ্ছলতা আসুক, রিজিক বৃদ্ধি হোক, কেউ কামনা বাসনা করে অন্তত বেঁচে থাকার জন্য যেটুকু রিজিক দরকার সেটি যেন তার আসে।
রিজিক কিভাবে বৃদ্ধি পায় এবং রিজিক বাড়ানোর আমল নিয়ে পবিত্র কুরআন এবং হাদিসে অনেক কথা বলা হয়েছে। আজকে আমি এমন কিছু কাজ বা আমলের কথা বলবো যেগুলো করলে রিজিক বৃদ্ধি পায়।
আসুন জেনে নেই, রিজিক বৃদ্ধির আমল কি অর্থাৎ টাকা পয়সা বৃদ্ধির আমল।
সুচীপত্র
- রিজিক বাড়ানোর আমল
- ১. তাকওয়া বা আল্লাহভীতি
- ২. তাওয়াক্কুল করা
- ৩. তওবা করা
- ৪. আত্মীয়তার সম্পর্ক ভেঙ্গে না ফেলা
- ৫. আল্লাহর পথে ব্যয় করা অর্থাৎ দান করা
- ৬. বেশি বেশি হজ এবং ওমরাহ করা
- ৭. অসহায় এবং দুর্বলদের প্রতি সদ্ব্যবহার করা
- ৮. ইবাদতের জন্য ঝামেলা মুক্ত হওয়া
- ৯. আল্লাহর পথে হিজরত করা
- ১০. মহান আল্লাহর শুকরিয়া করা
- ১১. রাসূল (সাঃ) এর উপর দরুদ পড়া
- ১২. অভাব মোচনের জন্য আল্লাহর নিকট সাহায্য চাওয়া
রিজিক বাড়ানোর আমল
রিজিক বাড়ানোর আমল নিয়ে পবিত্র কুরআন এবং হাদিসে অনেক কথা বলে হয়েছে, অনেক আয়াত এবং হাদিস রয়েছে। লেখাটিতে মূলত রিজিক বৃদ্ধির আমল বা কাজ এবং কিছু দোয়া আছে সেগুলো বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে।
আসুন ধাপে ধাপে জেনে নেয়া যাক রিজিক বৃদ্ধির আমল বা কাজ।
১. তাকওয়া বা আল্লাহভীতি
রিজিক বৃদ্ধির আমল গুলোর যদি একটি লিস্ট করা হয় তবে সবার প্রথমেই যে কথাটি আসবে তা হল তাকওয়া বা আল্লাহভীতি। তাকওয়া শব্দটি আরবি এর বাংলা অর্থ হল আল্লাহকে ভয় করা অর্থাৎ আল্লাহভীতি বা খোদাভীতি।
এ ব্যাপারে মহান রাব্বুল আলামীন পবিত্র কুরআনের সূরাহ আত-তালাকের ২ এবং ৩ নম্বর আয়াতে বলেছেন,
“আর যে ব্যক্তি সৃষ্টিকর্তাকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্য উত্তরনের রাস্তা তৈরি করে দেন। আর তিনি তাকে এমন রিজিক প্রদান করবেন যা সে কখনো কল্পনা করতে পারবে না। আর যে আল্লাহর উপর ভরসা করবে তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। আল্লাহ তার উদ্দেশ্য অবশ্যই পূরণ করে দেবেন। প্রত্যেক বিষয়ের উপর আল্লাহ তায়ালা একটি নির্দিষ্ট সময় সীমা বেঁধে দিয়েছেন।” (সূরাহ আত-তালাক, আয়াত নং- ২ ও ৩)
পবিত্র কুরআনের উল্লেখিত আয়াত থেকে এটাই বুঝা যায় যে, রিজিক বৃদ্ধির আমল এর মধ্যে একটি প্রধান আমল হচ্ছে মহান আল্লাহ তায়ালাকে মন থেকে ভয় করা।
একমাত্র মহান আল্লাহর উপরেই ভরসা করা এবং তার কাছেই উত্তম রিজিকের জন্য মুনাজাত করা। এর ফলে তার রিজিক বৃদ্ধি হবেই এবং এমন এমন জায়গা থেকে তার রিজিক আসবে তা সে কখনো বুঝতে পারবে না বা কখনো কল্পনাও করতে পারবে না।
সবারই মনে রাখা উচিৎ একমাত্র হালাল জীবিকা নির্বাহ করা এবং হারাম জীবিকা ত্যাগ করার মাধ্যমেই তাকওয়া কিংবা আল্লাহভীতি ফুটে উঠে।
আমাদের সবারই বেঁচে থাকার জন্য রিজিকের প্রয়োজন তাই রিজিক বাড়ানোর আমল এর মধ্যে আল্লাহকে ভয় করা এবং একমাত্র আল্লাহর উপরই ভরসা করা অর্থাৎ তাকওয়াকে যুক্ত করে দেয়া প্রয়োজন। তবেই আমরা সফলতার মুখ দেখতে পারবো ইশাআল্লাহ।
২. তাওয়াক্কুল করা
তাওয়াক্কুল শব্দটি আরবি শব্দ, এর বাংলা অর্থ হচ্ছে, আল্লাহর উপর ভরসা করা এবং তাঁর উপর ভরসা করেই কোনকিছু পাওয়ার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করা।
এ ব্যাপারে প্রথম পয়েন্টে যে আয়াত উল্লেখ করা হয়েছে, কুরআনের সেই আয়াতে বিষয়টি ফুটে উঠেছে।
আয়াতটিতে বলা হয়েছে,
“আর যে আল্লাহর উপর ভরসা করবে তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। আল্লাহ তার উদ্দেশ্য অবশ্যই পূরণ করে দেবেন। প্রত্যেক বিষয়ের উপর আল্লাহ তায়ালা একটি নির্দিষ্ট সময় সীমা বেঁধে দিয়েছেন।”
তাই মহান আল্লাহ তায়ালার উপরে বিশ্বাস রেখে, তাঁর উপর নির্ভর করে রিজিকের সন্ধান করা উচিৎ এবং এটি একটি ফরজ কাজ।
আপনি তাওয়াক্কুল বা আল্লাহর উপর ভরসা করে জীবিকা নির্বাহ করেন তো? যদি একটুও ঘাটতি থেকে থাকে তবে আজকেই রিজিক বাড়ানোর আমল এর লিস্টে তাওয়াক্কুল বা আল্লাহর উপর ভরসা যুক্ত করে দিন। আপনার রিজিক বৃদ্ধি হবে ইনশাল্লাহ।
৩. তওবা করা
আপনি কি জানেন! মহান আল্লাহ তায়ালা তওবাকারীকে সবচেয়ে বেশি পছন্দ করেন। আবার যে বেশি বেশি তওবা করবে মহান আল্লাহ তায়ালা তার রিজিক বাড়িয়ে দেবেন। তাই তওবা করাটা হতে পারে রিজিক বাড়ানোর আমল।
তওবা শব্দটি একটি আরবি শব্দ। এর বাংলা অর্থ হচ্ছে ফিরে আসা, প্রত্যাবর্তন করা বা ক্ষমা প্রার্থনা করা। পবিত্র কুরআন এবং হাদিসে পাপ কাজ থেকে বিরত থাকা এবং পুণ্যের কাজ করতে এগিয়ে আসা অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।
কেউ কেউ বলেছেন, পাপ কাজ করে অনুতপ্ত হয়ে মহান আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করা, আর কখনো উক্ত পাপ কাজ না করার জন্য মহান আল্লাহর কাছে ওয়াদাবদ্ধ হওয়া অর্থেও এই শব্দটি ব্যবহার হয়ে থাকে।
এখন মূল প্রশ্ন হল, কেন তওবা করাকে রিজিক বৃদ্ধির আমল বলা হয়েছে? এই প্রশ্নের উত্তর হিসেবে আপনি পবিত্র কুরআনের নিচের আয়াতটি লক্ষ্য করতে পারেন।
মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনের সূরাহ নূহ এর ১০, ১১, এবং ১২ নম্বর আয়াতে বলেছেন,
“অতঃপর বলেছি, তোমরা তোমাদের সৃষ্টিকর্তার কাছে তওবা কর (অর্থাৎ ক্ষমা প্রার্থনা কর), নিশ্চয়ই তিনি পরম ক্ষমাশীল। (যদি তোমরা আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাও বা তওবা কর) তিনি তোমাদের উপরে অবিরাম বারীধারা বর্ষণ করবেন (অর্থাৎ মুষলধারে বৃষ্টি বর্ষণ করবেন)। আর তোমাদের ছেলে মেয়ে, ধন সম্পদ, বহুগুণে বৃদ্ধি করে দেবেন। এবং তোমাদের জন্য নদী নালা এবং বাগান তৈরি করে দেবেন।” (সূরাহ নূহ, আয়াত নং- ১০, ১১ ও ১২)
উপরের আয়াত হতে আমরা জানতে পারলাম যে, যদি মহান আল্লাহ তায়ালার নিকট ক্ষমা চাওয়া হয় তাহলে তিনি বৃষ্টি বর্ষণ করবেন, নদী নালা এবং বাগান তৈরি করে দেবেন।
এখানে মহান আল্লাহ তায়ালা বাগান তৈরি করে দেবেন বলেছেন, যা রিজিকের একটি বড় মাধ্যম। আমাদের সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) সুযোগ পেলেই তওবা করতেন এবং আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করতেন।
প্রসিদ্ধ সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, শেষ নবী হজরত মুহাম্মাদ (সাঃ) বলেছেন,
“যে ঘন ঘন মহান আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করবে অর্থাৎ ইস্তেগফার করবে মহান আল্লাহ তায়ালা তার সব ধরণের বিপদ থেকে রক্ষা করবেন। সব ধরণের মানসিক দুশ্চিন্তা দূর করে দেবেন। এবং তাকে এমন সব জায়গা থেকে রিজিক দেবেন যা সে আগে কখনো কল্পনাও করেনি।” (আবু দাউদ, হাদিস নং ১৫২০, তাবরানী, হাদিস নং ৬২৯১, ইবনে মাজা, হাদিস নং ৩৮১৯)
উপরোক্ত আলোচনা থেকে বুঝা গেল রিজিক বাড়ানোর আমল এর মধ্যে তাওবা করা একটি আমল। এর মাধ্যমে আমাদের ছোট পাপ গুলো যেমন ঝড়ে পড়ে পাশাপাশি মহান আল্লাহ তায়ালা তাঁর ওয়াদা অনুযায়ী রিজিক বৃদ্ধি করে দেন।
৪. আত্মীয়তার সম্পর্ক ভেঙ্গে না ফেলা
রিজিক বাড়ানোর আমল এর মধ্যে একটি অন্যতম আমল হচ্ছে আত্মীয়তার সম্পর্কে ভেঙ্গে না ফেলা অর্থাৎ আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা।
এ ব্যাপারে প্রসিদ্ধ সাহাবী হযরত আনাস (রাঃ) বর্ণীত একটি হাদিস রয়েছে। তিনি বলেন, আমি রাসূল (সাঃ) কে বলতে শুনেছি,
“যে লোক আশা করে যে তার যেন রিজিক বৃদ্ধি পায় এবং আশা করে যে তার যেন হায়াত বৃদ্ধি পায় তবে সে যেন অবশ্যয়ই আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা (অর্থাৎ আত্মীয়দের সাথে সুসম্পর্ক রাখে)।” (বুখারি শরীফ, হাদিস নং- ৫৯৮৫, মুসলিম শরীফ, হাদিস নং- ৪৬৩৯)
রুজি রিজিক বৃদ্ধির আমল এর মধ্যে আত্মীয়দের সাথে সুসম্পর্ক রাখা একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল যা উপরোক্ত হাদিস থেকে প্রতীয়মান হয়।
যদি কারো কোন আত্মীয়ের সাথে ভালো সম্পর্ক না থাকে তবে তার উচিৎ হবে ঐ আত্মীয়ের সাথে সুসম্পর্ক স্থাপন করা। কারণ আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা একটি রিজিক বাড়ানোর আমল।
কোন আত্মীয় যদি আপনার সাথে কোন অন্যায় বা ভুল করে থাকে তবে অবশ্যয়ই তাকে ক্ষমা করে দেয়া উচিৎ কারণ যদি ক্ষমা না করেন তবে ধীরে ধীরে সেই আত্মীয়ের সাথে আপনার কোন সম্পর্ক অবশিষ্ট থাকবে না।
এতে করে রিজিক বৃদ্ধির আমল থেকে একটি আমল আপনি করতে পারবেন না অর্থাৎ একটি আমল আপনার হাতছাড়া হয়ে যাবে, যা কারোরই কাম্য নয়।
৫. আল্লাহর পথে ব্যয় করা অর্থাৎ দান করা
আপনি কি আল্লহর পথে বা আল্লাহর রাস্তায় দান করেন? গরীব দুখীদের সাহায্য সহযোগিতা করেন? যদি না করে থাকেন তবে আজ থেকেই আপনার সাধ্যমত দান-সদকা করুন। কারণ, রিজিক বাড়ানোর আমল এর মধ্যে এটি অন্যতম আমল।
এ ব্যাপারে মহা রাব্বুল আলামীন পবিত্র কুরআনের সূরাহ বাকারাহ এর ২৪৫ নম্বর আয়াতে বলেছেন,
“কে আছে এমন ব্যক্তি যে আল্লাহকে ঋণ প্রদান করবে? সর্বোত্তম ঋণ; যাতে আল্লাহ তায়ালা তার সম্পদ দ্বিগুণ-বহুগুণ বাড়িয়ে দেবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা (রিজিক) সংকুচিত করেন এবং তিনিই তা প্রসারিত করেন এবং তাঁরই নিকট তোমরা সবাই প্রত্যাবর্তন করবে।” (সূরাহ বাকারাহ, আয়াত নং- ২৪৫)
পবিত্র কুরআনের সূরাহ আস-সাবা এর ৩৯ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ তায়ালা আরও বলেছেন,
“হে রাসূল (সাঃ), আপনি বলুন, নিশ্চয়ই আমার প্রতিপালক তাঁর বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা তার রিজিক বাড়িয়ে দেন এবং যাকে ইচ্ছা তার রিজিক সংকুচিত করেন। আর তোমরা যা কিছু মহান আল্লাহর জন্য ব্যয় কর, তিনি তার বিনিময় দেবেন এবং তিনিই সর্বোত্তম রিজিক প্রদানকারী।” (সূরাহ আস-সাবা, আয়াত নং- ৩৯)
রিজিক বৃদ্ধি করতে চাইলে অবশ্যই রিজিক বৃদ্ধির আমল করা একান্তই প্রয়োজন। এ কারণে অবশ্যই আপনাকে আপনার সাধ্যমত আল্লাহর রাস্তায় দান করতে হবে।
যেমন হতে পারে ফকির মিসকিন কে দান করা, তাদের খাওয়ানো, মুসাফিরকে সাহায্য করা, অসহায়ের পাশে দাঁড়ানো, ঋণগ্রস্থ ব্যক্তিকে সাহায্য করা যেন সে ঋণমুক্ত হয়, আল্লাহর রাস্তায় যারা যুদ্ধ করে তাদের আর্থিক সহায়তা করা ইত্যাদি।
আল্লাহর রাস্তায় দান করলে মহান আল্লাহর ওয়াদা অনুযায়ী আপনার রিজিক বৃদ্ধি হবেই। আর সর্বজনবিদিত একটি কথা সব সময় মাথায় রাখা উচিৎ, “দানে ধন বাড়ে”।
জেনে নিন, মহান আল্লাহ তায়ালা যেসব পাপের শাস্তি দুনিয়াতেই দিয়ে থাকেন
৬. বেশি বেশি হজ এবং ওমরাহ করা
যাদের সামর্থ্য আছে মহান আল্লাহ তাদের উপর জীবনে একবার হলেও হজ্ব পালন করা ফরজ করে দিয়েছেন। যাদের বেশি বেশি হজ্ব পালন করার সামর্থ্য আছে তারা যেন বেশি বেশি হজ্ব পালন করে।
কেননা বেশি বেশি হজ্ব ও ওমরাহ পালন করা রিজিক বাড়ানোর আমল। এ ব্যাপারে তিরমিযি শরিফে একটি হাদিস রয়েছে।
প্রসিদ্ধ সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদ (রাঃ) বর্ণনা করেন, মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) বলেছেন,
“তোমরা পরপর হজ্ব এবং ওমরাহ পালন করতে থাকো, কারণ তা তোমাদের অভাব অনটন দূর করে দেয় এবং ধন সম্পদের পরিমাণ বৃদ্ধি করে দেয়, যেভাবে কামারের হাপর লোহা, সোনা, ও রুপার ময়লা আবর্জনাকে দূর করে দেয়।” (তিরমিযি, হাদিস নং- ৮১৫)
যাদের সামর্থ্য আছে তাদের রিজিক বৃদ্ধি করার জন্য এবং মহান আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য লাভের জন্য বেশি বেশি হজ্ব পালন করা উচিৎ।
৭. অসহায় এবং দুর্বলদের প্রতি সদ্ব্যবহার করা
রিজিক বাড়ানোর আমল এর মধ্যে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল হচ্ছে দুর্বল এবং অসহায় মানুষের সাথে উত্তম আচরণ করা এবং বিপদে আপদে তাদের পাশে দাঁড়ানো।
এটি একটি সামাজিক ইবাদত। মন থেকে অসহায়দের পাশে দাঁড়ালে মহান আল্লাহ তায়ালা রিজিক বৃদ্ধি করে দেন। এ ব্যাপারে বুখারি শরীফে একটি হাদিস বর্ণীত আছে।
মুসআব ইবনে সাদ (রাঃ) যুদ্ধে জয়ী হয়ে মনে মনে ভাবলেন, তার শক্তি ক্ষমতা, বীরত্ব অন্যদের থেকে অনেক বেশি এবং বেশি মর্যাদাবান।
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) বলেন,
“তোমাদের মাঝে যারা দুর্বল আছে তাদের কারণে তোমাদেরকে কেবল সাহায্য করা হয় এবং রিজিক দান করা হয়।” (বুখারি শরীফ, হাদিস নং- ২৮৯৬)
তাই সর্বাবস্থায় অসহায়দের পাশে থাকা প্রত্যেক মুসলমানের কর্তব্য এবং এটি একটি সামাজিক ইবাদতও বটে।
৮. ইবাদতের জন্য ঝামেলা মুক্ত হওয়া
আমরা অনেকেই কোলাহলপূর্ণ জায়গায় ইবাদত করে থাকি, এতে মনোযোগের ব্যাঘাত ঘটে থাকে যা অনেক সময় ইবাদতকে নষ্ট করেও দিতে পারে।
এ ব্যাপারে প্রসিদ্ধ সাহাবী হজতর আবু হোরায়রাহ (রাঃ) হতে বর্ণীত একটি হাদিস আছে। তিনি বলেন, মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) বলেছেন,
“মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, হে আদম সন্তান, আমার ইবাদত করার জন্য তুমি ঝামেলা বা কোলাহল মুক্ত হও, আমি তোমাদের অন্তরকে প্রাচুর্য দিয়ে ভরপুর করে দেব আর তোমাদের অভাব মোচন করে দেব। আর তোমরা যদি সেরকম না কর, তবে তোমাদের হাত ব্যস্ততায় ভরপুর করে দেব এবং তোমাদের দারিদ্রতা দূর করে দেব না।” (তিরমিযি শরীফ, হাদিস নং- ২৬৫৪, মুসনাদ আহমদ, হাদিস নং- ৮৬৮১, ইবনে মাজাহ, হাদিস নং- ৪১০৭)
ইবাদত করার সময় বা ইবাদতের মধ্যে ঝামেলা থাকলে মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের অভাব দূর করে দেবেন না বরং ব্যস্ততা আরও বাড়িয়ে দেবেন। তাই রিজিক বৃদ্ধির আমল এর মধ্যে এই বিষয়টি নিয়ে আসা অনেক জরুরী।
৯. আল্লাহর পথে হিজরত করা
হিজরত শব্দটি আরবি এর বাংলা অর্থ হচ্ছে, দেশ ত্যাগ করা, পরিত্যাগ করা, ছেড়ে দেয়া ইত্যাদি। আল্লাহর কাজের জন্য কিংবা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য যদি কেউ দেশ ত্যাগ করে তবে মহান আল্লাহ তায়ালা সেই ব্যক্তির রিজিক বৃদ্ধি করে দেন।
এ ব্যাপারে সূরাহ নিসার ১০০ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন,
“আর যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে হিজরত করবে, সে জমিনে অনেক জায়গা পাবে আশ্রয়ের জন্য এবং সচ্ছলতা পাবে। আর যে আল্লাহ এবং তার রাসূলের জন্য মুহাজির হয়ে নিজ ঘর থেকে বের হয় এবং সে বের হওয়া অবস্থায় জরি মৃত্যু বরন করে, তাহলে আল্লাহর উপর তার প্রতিদান দেয়া অবধারিত হয়ে যায়।” (সূরাহ নিসা, আয়াত নং ১০০)
তাই আসুন, রিজিক বৃদ্ধির আমল এর মধ্যে এই ইবাদতের কাজটিকে যুক্ত করে দেই।
১০. মহান আল্লাহর শুকরিয়া করা
কোন ব্যক্তি কাউকে সাহায্য করলে সাহায্যপ্রাপ্ত ব্যক্তিটি সাহায্যকারী ব্যক্তির উপর কৃতজ্ঞ হয় এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। আর যদি কেউ সাহায্য পেয়েও কৃতজ্ঞতা স্বীকার না করে তাহলে আমরা তাকে বলে থাকি অকৃতজ্ঞ।
আমরা অনেকেই মহান আল্লাহ তায়ালার কৃতজ্ঞতা স্বীকার করি না, অকৃতজ্ঞ থেকে যাই। এতে মহান আল্লাহ তায়ালা অসন্তুষ্ট হন।
আপনি কি জানেন? মহান আল্লাহ তায়ালার শুকরিয়া করলে বা কৃতজ্ঞতা স্বীকার করলে তিনি খুশি হন এবং রিজিক বৃদ্ধি করে দেন।
এ ব্যাপারে সূরাহ ইব্রাহীম এর ৭ নং আয়াতে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,
“যখন তোমাদের প্রভু ঘোষণা করলেন যে, তোমরা শুকরিয়া আদায় কর (কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর) তাহলে তোমাদের আরও দেব, এবং যদি শুকরিয়া আদায় না কর (অকৃতজ্ঞ হও) আমার শাস্তি হবে অনেক ভয়ানক।” (সূরা ইব্রাহীম, আয়াত নং- ৭)
স্পষ্ট আয়াত থেকে আমরা জানতে পারলাম, আমরা যদি মহান আল্লাহর শুকরিয়া আদায় না করি তাহলে তিনি আমাদের অনেক ভয়ানক শাস্তি দেবেন। আর শুকরিয়া আদায় করলে মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের আরও অনেক দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
শুধু রিজিক বৃদ্ধির আমল এর জন্য নয় বরং সর্বাবস্থায় মহান সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করা বা শুকরিয়া আদায় করা উচিৎ।
১১. রাসূল (সাঃ) এর উপর দরুদ পড়া
আমাদের শেষ নবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর উপর দরূদ পাঠ করার অনেক নিয়ামতের একটি নিয়ামত হল এটি রিজিক বৃদ্ধির আমল। এ ব্যাপারে তিরমিযি শরীফে একটি হাদিস বর্ণীত আছে।
হযরত তোফায়েল ইবনে উবাই এবনে কাব (রাঃ) হতে বর্ণীত, তিনি বলেন-
“আমি রাসূল (সাঃ) কে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসুল আমি আপনার উপর অনেক অনেক দরূদ পড়তে চাই, তবে আমার দুয়ার মধ্যে কতটুকু আপনার দরূদের জন্য রাখবো? উত্তরে রাসূল (সাঃ) বললেন, তুমি যতটুকু পাও। আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম, এক চতুর্থাংশ রাখতে চাই। উত্তরে রাসূল (সাঃ) বললেন, তুমি যতটুকু পাও। তবে যদি তুমি বেশি পাঠ কর তাহলে সেটা তোমার জন্য উত্তম হবে। আমি বললাম, অর্ধেক? রাসূল (সাঃ) বললেন, তুমি যতটুকু পাও। তবে যদি তুমি বেশি পাঠ কর তাহলে সেটা তোমার জন্য উত্তম হবে। আমি বললাম, তিন ভাগের দুই ভাগ? রাসূল (সাঃ) বললেন, তুমি যতটুকু পাও। তবে যদি তুমি বেশি পাঠ কর তাহলে সেটা তোমার জন্য উত্তম হবে। আমি বললাম, আমি দোয়ার পুরো অংশ জুড়ে আপনার উপর দরূদ পাঠ করতে চাই। রাসূল (সাঃ) বললেন, তাহলে তোমার ঝামেলা এবং প্রয়োজন বা রিজিকের জন্য যথেষ্ট হবে এবং তোমার গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে।” (তিরমিযি শরীফ, হাদিস নং- ২৬৪৫)
উপরোক্ত হাদিস থেকে এটাই প্রমাণ হয় যে আল্লাহর রাসূলের উপর দরূদ পাঠ করলে আমাদের গুনাহ মাফ হবে পাশাপাশি ঝামেলা মুক্ত হতে পারবো এবং আমাদের প্রয়োজনগুলো মিটে যাবে অর্থাৎ রিজিক বৃদ্ধি হবে।
তাই রিজিক বাড়ানোর আমল এর মধ্যে এই আমলটি থাকা জরুরী।
১২. অভাব মোচনের জন্য আল্লাহর নিকট সাহায্য চাওয়া
আপনি অভাবে আছেন? একমাত্র মহান আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করুন। কেননা মহান আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দাকে খালি হাতে ফিরিরে দেন না।
পবিত্র কুরআনে সূরা মুমিনের ৬০ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,
“তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সারা দেব।” (সূরাহ মুমিন, আয়াত নং- ৬০)
তাই আমাদের যা কিছু প্রয়োজন, সবকিছুই চাইবো একমাত্র মহান আল্লাহর নিকট। কেননা মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের ডাকে সারা দেন এবং খালি হাতে ফিরিয়ে দেন না।
পরিশেষে বলা যায়, উপরোক্ত সবগুলো আমলই হচ্ছে রিজিক বাড়ানোর আমল। কুরাআন এবং হদিস দ্বারা প্রত্যেকটি আমলই প্রমাণিত। তাই আজ থেকেই উল্লেখিত রিজিক বাড়ানোর আমলগুলো করতে পারেন।
আজ এ পর্যন্ত, আগামীতে নতুন কোন বিষয় নিয়ে হাজির হব আপনাদের সামনে। ততদিনে ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। আল্লাহ আপনাদের রিজিক বাড়িয়ে দিন, এবং হেফাজতে রাখুন। আল্লাহ হাফেজ।
আরও পড়ুন,
**লেখাটি শেয়ার করার অনুরোধ রইলো**