বাংলাদেশে নানা ধরণের দেশীয় ফল পাওয়া যায়। এর মধ্যে আম অন্যতম। আমকে বলা হয় ফলের রাজা। পুষ্টিগুণে ভরপুর থাকা এই ফলের দাম মানুষের হাতের নাগালে। গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়িতে কমপক্ষে একটি আমের গাছ থাকেই।
ক্রয়মূল্য হাতের নাগালে বলে ইচ্ছে মতো খাওয়া যায়। আম খাওয়ার উপকারিতা অনেক রয়েছে পাশাপাশি বেশি আম খাওয়ার অপকারিতাও রয়েছে।
আজকে আমরা পাকা আম খাওয়ার উপকারিতা এবং পাকা আম খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।
আসুন প্রথমেই জেনে নেই, পাকা আম খাওয়ার উপকারিতা
সুচীপত্র
- পাকা আম খাওয়ার উপকারিতা
- ১. ভিটামিনের অভাব পূরণ
- ২. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
- ৩. কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে
- ৪. চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখে
- ৫. হজম শক্তি বৃদ্ধি করে
- ৬. চিনির পরিবর্তে আম
- ৭. ক্যান্সার সেল ধংশ করে
- ৮. শরীরের শক্তি বৃদ্ধি করে
- ৯. হাড় মজবুত করে
- ১০. অ্যানিমিয়া প্রতিরোধ করে
- ১১. স্কার্ভি রোগ প্রতিরোধ করে
- ১২. ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে
- পাকা আম খাওয়ার অপকারিতা
পাকা আম খাওয়ার উপকারিতা
পাকা আম খাওয়ার বেশ কিছু স্বাস্থ্যগত উপকারিতা রয়েছে। নিচে পয়েন্ট আকারে কিছু পাকা আম খাওয়ার উপকারিতা তুলে ধরা হল।
১. ভিটামিনের অভাব পূরণ
পাকা আমে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান রয়েছে। যদিও ফল থেকে সরাসরি ভিটামিন পাওয়া যায় না কিন্তু এর মধ্যে থাকা বিটা-ক্যারোটিন সাধারনভাবে ভিটামিনের কাজ করে থাকে।
পাকা আমে প্রচুর পরিমাণে রয়েছে ভিটামিন সি, আয়রন, পটাশিয়াম। এসকল উপাদান শরীরকে সুস্থ ও সতেজ রাখতে সহায়তা করে।
২. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
একজন সুস্থ সবল মানুষের প্রতিদিন ৯০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি দরকার হয়। একটি ১০০ গ্রাম কাঁটা পাকা আমে প্রায় ৩৬.৪ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি রয়েছে।
যা ভিটামিন সি এর অনেক বড় উৎস হিসেবে কাজ করে। ভিটামিন সি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
৩. কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে
পাকা আমে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও উপকারী আন্টিওক্সিডেন্ট থাকায় পাকা আম নিয়মিত খেলে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রিত হয়।
যাদের হৃদরোগ আছে তাদের জন্য অনেক উপকারী। নিয়মিত এবং পরিমিত পাকা আম খেলে হার্ট সুস্থ এবং সতেজ থাকে।
৪. চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখে
একজন সুস্থ মানুষের প্রতিদিন ৭০০ আই সি ইউ ভিটামিন এ খাওয়া প্রয়োজন। প্রতিদিন আম খেলে প্রায় ১০% ভিটামিন এ এর চাহিদা পূরণ হয়। আমরা সকলেই জানি ভিটামিন এ এর অভাবে রাতকানা রোগ হয়।
এছাড়াও পাকা আমে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগুনী রশ্মি হতে চোখকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। তাই চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে পরিমিত পরিমাণে আম খাওয়া প্রয়োজন।
৫. হজম শক্তি বৃদ্ধি করে
হজম শক্তি বৃদ্ধি করার জন্য অনেকেই অনেক ওষুধ খেয়ে থাকে। সে ওষুধগুলো ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খাওয়া প্রয়োজন কারণ সেসব ওষুধেও থাকতে পারে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, যা আপনার আমার শরীরের জন্য ক্ষতিকর।
ওসব ওষুধের বিকল্প হতে পারে পাকা আম। পাকা আম হজম শক্তি বৃদ্ধি করে কারণ এতে রয়েছে প্রচুর আঁশ বা ফাইবার। পরিমিত আম খাওয়া আজ থেকেই শুরু করুন এবং হজম শক্তি বৃদ্ধি করুন।
৬. চিনির পরিবর্তে আম
হ্যাঁ আপনি ঠিকই পড়েছেন। চিনির পরিবর্তে আম খেতে পারেন। যেহেতু আম মিষ্টি তাই চিনির অভাব সহজেই পূরণ করা সম্ভব। কারণ সরাসরি চিনি খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
বিভিন্ন ধরণের জুস, বা খাবার যেগুলোতে চিনি ব্যবহার করা হয় সেগুলোতে ব্যবহার করা যেতে পারে পাকা আম। ডায়াবেটিস রুগীদের পাকা আম খাওয়া একেবারেই নিষিদ্ধ নয় তবে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খেতে পারবেন।
৭. ক্যান্সার সেল ধংশ করে
যেহেতু আম অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর একটি উল্লেখযোগ্য উৎস আর আমের মধ্যে বিদ্যমান থাকা এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের মধ্যে থাকা ফ্রি র্যাডিক্যালকে ধংশ করে।
ফ্রি র্যাডিক্যাল ক্যান্সার কোষ সৃষ্টির জন্য দায়ী। তাই ক্যান্সার কোষ ধংশ করতে নিয়ম করে পরিমিত পাকা আম খাওয়া জরুরী।
৮. শরীরের শক্তি বৃদ্ধি করে
পাকা আমে প্রচুর পরিমাণে ক্যালোরি থাকে। প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা আম হতে প্রায় ১০ ক্যালোরি শক্তি পাওয়া যায়। সুতরাং বলা যেতে পারে, শরীরের শক্তি বৃদ্ধিতে আম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে, তবে পরিমিত খেতে হবে।
কেননা অধিক বেশি হারে আম খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতি ডেকে নিয়ে আসতে পারে।
৯. হাড় মজবুত করে
পাকা আমে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়। ১০০ গ্রাম আম হতে প্রায় ১৬ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়। আর আমরা জানি ক্যালসিয়াম আমাদের শরীরের হাড় এবং দাঁত মজবুত করে।
একজন সুস্থ মানুষের প্রতিদিন প্রায় ৬০০-১২০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম প্রয়োজন হয়। তাই ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণ করতে পরিমিত আম খাওয়া প্রয়োজন।
১০. অ্যানিমিয়া প্রতিরোধ করে
রক্ত অল্পতা আমাদের শরীরের জন্য মারাত্মক হুমকি। রক্ত বৃদ্ধি করার জন্য আমরা অনেকেই আয়রন জাতীয় ওষুধ খেয়ে থাকি। এসব ওষুধে নানা ধরণের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে।
যদি প্রাকৃতিক খাবারের মাধ্যমে আয়রন গ্রহণ করা যায় তবে সেটাই হবে উত্তম পন্থা। একটি ১০০ গ্রাম পাকা আম থেকে প্রায় ১.৩ মিলিগ্রাম পরিমাণ আয়রন পাওয়া যায়, যা আমাদের আয়রনের ঘাটতি পূরণে সাহায্য করতে পারে।
একজন সুস্থ মানুষের জন্য প্রতিদিন প্রায় ৮-১০ মিলিগ্রাম আয়রন গ্রহণ করা উচিৎ।
১১. স্কার্ভি রোগ প্রতিরোধ করে
আমরা পূর্বেই জেনেছি পাকা আমে ভিটামিন সি রয়েছে। এই ভিটামিন সি স্কার্ভি রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। ১০০ গ্রাম পাকা আমে প্রায় ৩৬.৪-৪১ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি পাওয়া যায়।
যা আমাদের ভিটামিন সি এর ঘাটতি দূর করতে সহায়তা করতে পারে।
১২. ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে
ত্বক উজ্জ্বল করতে আমরা কি না করি? নানা ধরণের কসমেটিকের ব্যবহার তো আছেই। তবে প্রাকৃতিক উপায়ে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে খেতে পারেন পাকা আম।
কারণ আমার মধ্যে থাকা ভিটামিন সি শরীরের লোমকূপগুলোকে পরিষ্কার রাখতে সহায়তা করে এবং ব্রণের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে থাকে।
পাকা আম খাওয়ার অপকারিতা
পরিমিত পাকা আম খেলে যেমন উপকার হয় ঠিক তেমনি অতিরিক্ত পরিমাণে পাকা আম খেলে তার অপকারিতাও রয়েছে। আসুন জেনে নেই, বেশি পরিমাণে পাকা আম খেলে কি হয়?
১. শরীরে Glucose মাত্রা বৃদ্ধি করে
বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা বলে থাকেন পাকা আম খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো কিন্তু বেশি মাত্রায় পাকা আম খেলে রক্তে গ্লুকজের পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে পারে কারণ এতে রয়েছে উচ্চমাত্রার চিনি যা গ্লুকজের অন্যতম একটি উৎস।
রক্তে গ্লুকজের মাত্রা বৃদ্ধি পেলে অসুস্থ হয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই বেশি পরিমাণে পাকা আম খাওয়া মোটেও স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো ফল নিয়ে আসবে না।
উচ্চমাত্রায় চিনি থাকার কারণে ডাক্তাররা অনেক সময় ডায়াবেটিস রোগীদের পাকা আম খেতে নিষেধ করে থাকেন।
২. অ্যাজমা বা হাঁপানি বাড়িয়ে দেয়
যাদের অ্যাজমা বা হাঁপানি রয়েছে তাদের পাকা আম খেতে নিষেধ করে থাকেন বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা। কারণ কাঁচা আম পাকাতে অসাধু ব্যবসায়ীরা ক্যালসিয়াম কার্বাইড নামক বিষাক্ত এক প্রকার ক্যামিক্যাল ব্যবহার করে থাকেন, যা অ্যালার্জি বৃদ্ধির পাশাপাশি অ্যাজমা বা হাঁপানি বাড়িয়ে দিতে পারে।
সুতরাং যাদের অ্যালার্জি, অ্যাজমা বা হাঁপানি রয়েছে তাদের পাকা আম খাওয়ার পূর্বে ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিৎ।
৩. শরীরের ওজোন বৃদ্ধি করে
পাকা আমে অধিক মাত্রায় শর্করা থাকায় তা শরীরের ওজন বৃদ্ধি করতে পারে। তাই মোটা ব্যাক্তির জন্য অধিক মাত্রায় পাকা আম খাওয়া উচিৎ নয়।
৪. ডায়রিয়া
পাকা আমে অধিক মাত্রায় আঁশ বা ফাইবার থাকে তাই বেশি পরিমাণে পাকা আম খেলে ডাইরিয়া বা পাতলা পায়খানা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
তাই প্রতিদিন পরিমাণমত একটি অথবা দুটি আম খাওয়াই যথেষ্ট। এতে ডাইরিয়া হওয়ার ঝুঁকি থাকবে না।
৫. কিডনি রোগীদের জন্য ক্ষতিকর
অনেক সময় চিকিৎসকরা কিডনি রোগীকে পাকা আম খেতে নিষেধ করে থাকেন। কারণ ক্যালসিয়াম কার্বাইড দিয়ে পাকানো আম তাদের জন্য অনেক ক্ষতি ডেকে নিয়ে আসতে পারে।
তাই যারা কিডনি রোগী পাকা আম খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খাওয়া প্রয়োজন।
ফলের রাজা আমকে নিয়ে আজ আমরা অনেক কিছুই জানলাম শিখলাম। পাকা আম খাওয়ার উপকারিতা অনেক সাথে সাথে পাকা আম খাওয়ার অপকারিতাও রয়েছে।
কথায় আছে অতিরিক্ত কোন কিছুই ঠিক না, তাই অতিরিক্ত পাকা আম খাওয়াও উচিৎ না। পরিমিত পাকা আম খান এবং সুস্থ থাকুন।
আরও পড়ুন,
- ডায়াবেটিস রোগীদের যেসব খাবার খাওয়া নিষিদ্ধ
- যে কারণে ত্বকের সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যায়
- যে কাজগুলো করলে মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকে
*পোস্টটি শেয়ার করার অনুরোধ রইলো*