সুস্থ থাকার পূর্ব শর্ত হলো ভালো ঘুম। পর্যাপ্ত ঘুম শরীরকে বিভিন্ন রোগ ব্যাধি হতে রক্ষা করে থাকে। সারাদিনের সমস্ত ক্লান্তি দূর করে শরীরে শক্তির জোগান দেয়। একারণে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা ভালো ঘুমের প্রতি সর্বদাই জোড় দিয়ে থাকেন।
যাদের ভালো ঘুম হয় না বা বিভিন্ন কারণে পর্যাপ্ত ঘুমাতে পারেন না, তারা মস্তিষ্ক বিভিন্ন রোগের মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে আছেন। পর্যাপ্ত ঘুম না হলে এবং দীর্ঘদিন এই অবস্থা থাকলে ব্রেইন স্ট্রোক কিংবা ব্রেইন হ্যামারেজ পর্যন্ত হতে পারে।
এছাড়াও দীর্ঘদিন অপর্যাপ্ত ঘুমের কারণে শরীরের ভিতরে নানা ধরণের জটিল জটিল রোগ বাসা বাঁধতে পারে। একারণে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারগণ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কম করে হলেও ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমানোর পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এমনও লোক আছে যারা অনেক্ষন ঘুমায় কিন্তু তাদের ঘুমের গভীরতা নেই। এমতাবস্থায় খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন নিয়ে আসা জরুরী।
সুচীপত্র
যেসব খাবার ভালো ঘুমের জন্য ওষুধের মতো কাজ করে
আসুন জেনে নেই, যেসব খাবার গ্রহণ করলে ভালো এবং পর্যাপ্ত ঘুম অবশ্যই হবে।
১. দানাদার শস্য
শস্য জাতীয় খাদ্য যেমন, শিম, গম, কলাই, ভুট্টা ইত্যাদি খাবার খেলে পর্যাপ্ত এবং গভীর ঘুম হয়। কারণ এসকল খাবার গ্রহণ করলে সেরোটোনিন হরমোনের নিঃসরণ বেড়ে যায়। এই সেরোটোনিন হরমোনকে শিথিলকরণ হরমোনও বলা হয়ে থাকে। এই শিথিলকরণ হরমোন এর নিঃসরণ যত বেশি হবে ঘুমের গভীরতা ততো বেশি হবে।
এটি ছাড়াও এসব খাবারে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম থাকে যা মানুষের দেহের মাংসপেশীকে শিথিল করতে সহায়তা করে। গভীর ঘুমের জন্য যা বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
২. পাকা কলা
পাকা কলায় অধিক পরিমাণে ট্রিপটোফিন, ম্যাগনেসিয়াম এবং পটাশিয়াম থাকে। এসকল খাদ্য উপাদান সেরোটোনিন হরমোনের নিঃসরণ বাড়িয়ে দিতে সহায়তা করে। তাই প্রতিদিন রাতে ঘুমাতে যাওয়ার পূর্বে পাকা কলা খেতে পারেন। এতে অবশ্যই ভালো ফলাফল পাবেন।
৩. ডার্ক চকলেট
ডার্ক চকলেটে প্রচুর পরিমাণে সেরোটোনিন রয়েছে যা দেহ মন দুটোকেই প্রশান্ত করতে সাহায্য করে। আর শরীর মন প্রশান্ত হলেই তো ভালো এবং পর্যাপ্ত ঘুম হতেই হবে।
৪. ওটস
পুষ্টিকর এবং খুবই উপকারী খাবারের একটি তালিকা যদি করা যায় তবে ওটস এর নাম অবশ্যই আসবে। এই খাবারে রয়েছে জটিল কার্বোহাইড্রেটস যা খাদ্য হজমে বেশ সময় লাগায় যার ফলে সারা রাত পেট ভরা মনে হবে ফলে ক্ষুধার অনুভূতি কমে যাবে এবং গভীর ঘুমের জন্য যথেষ্ট সহায়তা করবে।
তাই রাতের খাদ্য তালিকায় ওটস এর তৈরি খাবার কিংবা ওটস বিস্কুট রাখতে পারেন এবং নিয়মিত গ্রহণ করুন ও দেখুন এর চমৎকার ফলাফল।
৫. দুধ
রাতে বিছানায় যাওয়ার পূর্বে এক গ্লাস দুধ পান করলে রাতে অনেক ভালো ঘুম হয়। কারণ দুধে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম থাকে যা মেলাটোনিন হরমোনের নিঃসরণ বাড়িয়ে দেয়। এই মেলাটোনিন হরমোন মস্তিস্ককে ভালো এবং গভীর ঘুমের জন্য সহায়তা করে থাকে। ফলে রাতের ঘুম গাঢ়, ভালো, গভীর এবং পর্যাপ্ত হয় যা একজন মানুষকে সুস্থ থাকার জন্য জরুরী।
৬. মিষ্টি আলু
আমাদের সবার পরিচিত একটি সবজির নাম মিষ্টি আলু। বাজারে অনেক সস্তায় পাওয়া যায়। এই মিষ্টি আলুর রয়েছে অনেক গুণাগুণ। মিষ্টি আলুতে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম ও জটিল কার্বোহাইড্রেটস থাকে যা ভালো এবং পর্যাপ্ত ঘুম এনে দেয়। এছাড়াও মিষ্টি আলুর পটাশিয়াম শরীরের মাংসপেশী শিথিল করে দেয় ফলে রাতের ঘুম ভালো হয়। তাই রাতে পর্যাপ্ত এবং গভীর ঘুমের জন্য মিষ্টি আলুর বিকল্প নেই।
৭. পালং শাক
পালং শাক এর সাথে আমরা কম বেশি সবাই পরিচিত। বাজারেও অনেক সহজলভ্য। এই শাক এর অনেক গুণাগুণ রয়েছে। বিশেষ করে ভালো ঘুমের জন্য এই শাক এর রয়েছে অনেক কার্যকরী গুণ। পালং শাক এ ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন সি, ভিটামিন বি৬, ফোলেট, এবং গ্লুটামিন নামক অ্যামাইনো এসিড রয়েছে যা শান্তিপূর্ণ, পর্যাপ্ত এবং গভীর ঘুমের জন্য কাজ করে থাকে।
৮. বাদাম
বাদাম আমরা কে না চিনি? আমাদের দেশে বেশিরভাগ মানুষই বাদামের ভক্ত। যেকোনো ধরণের আড্ডাতে বাদাম না থাকলে যেন আড্ডা জমেই না। কিন্তু আপনি জানেন কি! ভালো এবং পর্যাপ্ত ঘুমের জন্য বাদাম আমাদের অনেক সাহায্য করতে পারে? হ্যাঁ তাই। ম্যাগনেসিয়াম এবং ট্রিপটোফ্যান নামক উপকারী উপাদান রয়েছে বাদামে।
শরীরের মাংসপেশী শিথিল করতে এ দুটি উপাদানের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ যার কারণে একজন মানুষ গভীর ও পর্যাপ্ত ঘুমাতে পারে। এছাড়াও হৃদযন্ত্রকে সচল এবং দৃঢ় রাখতে বাদাম সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।
৯. মধু
ছোট থেকে শুরু করে ৮০ বছরের বৃদ্ধ পর্যন্ত সবাই এক নামে মধু কে চিনি। মধু চেনে না এমন কোন মানুষকে আমাদের দেশে খুজে পাওয়া যাবে না। মধুর রয়েছে হাজারও গুণ যা বলে শেষ করা যাবে না। অনেক প্রাচীনকাল থেকেই মধুর ব্যবহার হয়ে আসছে চিকিৎসা বিজ্ঞানে। তেমনি ভালো ঘুমের জন্য মানুষ মধুকে ঘুমের ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করে থাকে।
মানুষের মস্তিস্ককে জাগিয়ে রাখে ওরেক্সিন নামক হরমোন এবং মস্তিস্ককে ঘুম পাড়িয়ে দেয় মেলাটোনিন নামক হরমোন। মধু এই ওরেক্সিন হরমোনের নিঃসরণকে কমিয়ে দেয় এবং মেলাটোনিন হরমোনের নিঃসরণকে বাড়িয়ে দেয় যা গভীর ঘুমের জন্য সহায়ক হিসেবে কাজ করে থাকে। তাই রাতে ঘুমোতে যাওয়ার পূর্বে ১ চামচ মধু রাখুন আপনার প্রতিদিনের রুটিনে।
পরিশেষে বলা যায়, আপনি যদি পর্যাপ্ত ও গভীর ঘুম পেতে চান তবে আজ থেকেই উপরের যে কোন একটি খাবার দিয়ে শুরু করতে পারেন। তবে অবশ্যই দুপুরের পর ক্যাফেইন আছে এমন খাবার বা পানীয় গ্রহণ করা থেকে দূরে থাকতে হবে। রাতের খাবার ঘুমোতে যাওয়ার অন্তত ২ ঘণ্টা আগে সেরে ফেলুন। এছাড়াও নিয়মিত ব্যায়াম করুন যা আপনাকে ভালো ঘুমের পাশাপাশি মানসিক চাপ থেকে মুক্তি দেবে।
আরও পড়ুন,
১. খালি পেটে পানি পান করার স্বাস্থ্যগত উপকারিতা
২. রোজা রাখার শারীরিক ও মানসিক উপকারিতা
*নিচের বাটনে ক্লিক করে আপনার প্রিয়জনদের সাথে শেয়ার করুন*