পৃথিবীর মোট জনসংখ্যা প্রায় ৭.৫৩ বিলিয়ন আর ফেসবুক ব্যবহার করে থাকে প্রায় ২.৪ বিলিয়ন মানুষ। বাংলাদেশে প্রায় ২৫-৩০ মিলিয়ন মানুষ ফেসবুক ব্যবহার করে যার মধ্যে প্রায় ৭২% পুরুষ এবং ২৮% মহিলা।
বাংলাদেশে লক্ষ লক্ষ মানুষ ফেসবুক ব্যবহার করে অহেতুক সময় নষ্ট করে। অনেকেই ফেসবুকের প্রতি চরম আসক্ত হয়ে পড়েছে। অনেক ছাত্র ছাত্রী পড়াশুনা বাদ দিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফেচবুক ব্যবহার করে সময় নষ্ট করে।
অনেক গৃহিণী আছে যারা ঘরে বসে থাকে ফেসবুক ব্যবহার করে সময় পার করে। মূলত তাদের জন্য এই লেখাটি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অহেতুক সময় নষ্ট না করে যদি ওই সময়টাতে ফেসবুক ব্যবহার করে টাকা আয় করা যায় তবে মন্দ হয় না।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ন্যায় আমাদের দেশেও ফেসবুক ব্যবহার করে টাকা আয় করছেন অনেকেই। চাইলে আপনিও ফেসবুক ব্যবহার করে টাকা আয় করতে পারেন সহজেই।
হ্যাঁ বন্ধুরা আজকে আমি কিভাবে ফেসবুক ব্যবহার করে সহজে আয় করা যায়, এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
আসুন জেনে নেই, কিভাবে ফেসবুক ব্যবহার করে প্রতি মাসে ১০ হাজার থেকে শুরু করে ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয় করা যায়?
সুচীপত্র
১. ফেসবুক পেজ
ফেসবুক পেজ তইরি করে ফেসবুক থেকে আয় করা একটি জনপ্রিয় মাধ্যমে পরিনত হয়েছে। ফেসবুকে ঢুকলেই শত শত ফেসবুক পেজ আমরা দেখতে পাই। ফেসবুক থেকে আয় করতে হলে প্রথমে আপনাকে একটি ফেসবুক পেজ তইরি করতে হবে।
আপনি আপনার ব্যবসার ধরন অনুযায়ী ফেসবুক পেজের নামকরন করতে পারেন। মনে রাখা জরুরী, একটি ভাল নাম আপনার সফলাতার পিছনে অনেক বড় ধরনের ভুমিকা পালন করতে পারে।
আপনার ব্যবসাকে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে আপনাকে প্রথমে আপনাকে গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করতে হবে। এই গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করতে হলে মান সম্মত কনটেন্ট পোস্ট করতে হবে।
এমন কোন কনটেন্ট পোস্ট করা যাবে না যার মাধ্যমে কোন জাতি বা গোস্টি বা দল আঘাত পায়। এমনটা হলে আপনার আয় হওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশে কমে যাবে। মনে রাখবেন আপনার ফেসবুক পেজের কনটেন্ট আপনার উজারকে যদি সারা জাগাতে পারে তবে আপনিও হতে পারেন একজন সফল উদ্যোক্তা।
ফেসবুক পেজ তৈরি, কনটেন্ট তৈরি ইত্যাদি থেকে শুরু করে আপনাকে কতোগুলো গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে হবে। আসুন জেনে নেই গুরুত্বপূর্ণ সেই কাজগুলি।
১। আপনি যে ফেসবুক পেজ তৈরি করেছেন সেটির জন্য আপনাকে একটি ফেসবুক পেজ সম্পর্কিত একটি ওয়েবসাইট তৈরি করতে হবে। ফেসবুক পেজের সাথে সাথে আপনার একটি মানসম্মত ওয়েবসাইট থাকা আপনার ব্যবসাকে অনেক বেশি বেগবান করবে।
আপনার ওয়েবসাইটটিতে আপনার কনটেন্ট এর বিশদ আলোচনা থাকবে। ওয়েবসাইট বানানোর জন্য আপনি ফ্রী ডোমেইন ব্যবহার করতে পারেন। যদি ফ্রী ডোমেইন ব্যবহার করতে না চান তবে ৪-৫ হাজার টাকা খরচ করে ডোমেইন হোস্টিং কিনে ওয়েবসাইট তৈরি করতে পারেন।
২। নিজস্ব ওয়েবসাইট থেকে আয় করার একটি জনপ্রিয় মাধ্যম হলো গুগল এডসেন্স। গুগল এডসেন্স হলো নিজের ওয়েবসাইটে অন্য কোম্পানির বিজ্ঞাপন প্রচার করা, এর বিনিময়ে গুগল আপনাকে কিছু টাকা প্রদান করবে।
আমরা পরবর্তীতে গুগল এডসেন্স নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো ইনশাআল্লাহ। ফেসবুক পেজ থেকে সহজেই আপনার ওয়েবসাইটের জন্য ভিজিটর পেতে পারেন।
৩। আপনার ফেসবুজ পেজটিতে আপডেট কনটেন্ট রাখা বা পোস্ট করা অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। আপনি যত বেশি আপডেট কনটেন্ট পোস্ট করবেন আপনার ফেসবুক পেজ এর ভিজিটর ততো বেশি বাড়তে থাকবে। সেই সাথে আপনার পোস্ট বা কনটেন্ট এর লাইক শেয়ার কমেন্ট ও বৃদ্ধি পেতে থাকবে।
৪। একটি বিষয় সবসময় মাথায় রাখতে হবে, আপনার কনটেন্ট বা পোস্ট যেন অন্য কারো কনটেন্ট বা পোস্টের সাথে মিলে না যায়, অর্থাৎ আপনার কনটেন্ট যেন অন্যের কনটেন্ট থেকে কপি করা না হয়। মনে রাখবেন প্রতিটি ব্যবসার জন্য তাদের নিজস্ব কপিরাইট থাকে।
জেনে নিন,
২. বিজ্ঞাপন প্রচার
বিজ্ঞাপন প্রচার অর্থাৎ অ্যাডভারটাইজিং করার মাধ্যমে ফেসবুক থেকে সহজেই আয় করা যেতে পারে। আপনারা হয়তো অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর নাম অনেকেই শুনে থাকবেন।
ফেসবুক ব্যবহার করে অ্যাফিলিয়েট অ্যাডভারটাইজিং করে বর্তমানে হাজার ডলার পর্যন্ত মানুষ আয় করছেন। এতে আপনাকে কিছু প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে। আসুন জেনে নেই প্রক্রিয়াগুলো কি কি?
১। প্রথমে আপনাকে অ্যাফিলিয়েট অ্যাডভারটাইজিং প্রোগ্রাম খুঁজে বের করতে হবে তারপর সেখানে সাইনআপ করে আপনার একটি অ্যাকাউন্ট খুলে নিতে হবে। অ্যাকাউন্ট করা হয়ে গেলে তারা আপনাকে একটি আইডি দেবে এবং কিছু গাইডলাইন দেবে। সে অনুযায়ী আপনাকে কাজ করতে হবে।
যখন আপনি তাদের দেয়া প্রোডাক্ট লিংক নিয়ে কাজ শুরু করবেন তখন আপনার ফেসবুক আইডি কিংবা ফেসবুক পেজের মাধ্যমে তারা মোটামুটি সংখ্যক ভিজিটর পাবে আর আপনি যত বেশি ভিজিটর নিয়ে এসে তাদেরকে দিতে পারবেন আপনার অ্যাকাউন্টে ততো টাকা জমা হতে থাকবে।
২। অ্যাফিলিয়েট প্রোডাক্ট অ্যাডভারটাইজিং করার জন্য সবচেয়ে ভালো হয় আলাদা একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট তৈরি করা। এতে করে ভিজিটররা তাদের পছন্দমতো প্রোডাক্ট ক্রয় করতে পারবে এবং সাথে সাথে আপনার আয়ও বাড়তে থাকবে।
প্রতিটি প্রডাক্টের জন্য যদি আলাদা আলাদা অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে পারেন তবে তা আপনার জন্যও অনেক সুবিধা হবে তেমনি উজারদের জন্যও অনেক সুবিধা হবে।
৩। মনে রাখবেন আপনার বিজ্ঞাপন যত বেশি মানুষের কাছে পৌঁছাবে ততই আপনার আয় বাড়বে। এজন্য আপনাকে অবশ্যই বিজ্ঞাপন প্রচারের দিকে অনেক বেশি মনোযোগী হতে হবে।
আপনার পোস্ট এ ক্লিক করে কোন ভিজিটর যদি কোন প্রোডাক্ট কিনে তবেই আপনার আয় শুরু হবে।
আরও পড়ুন,
৩. ফ্রিল্যান্সিং
বর্তমানে সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি পেশার নাম ফ্রিল্যান্সিং। আজকাল ছাত্র ছাত্রী থেকে শুরু করে বেকার যুবক যুবতী এমনকি গৃহবধূ পর্যন্ত ফ্রিল্যান্সিং পেশার সাথে জড়িত।
ফেসবুক ব্যবহার করেও ফ্রিল্যান্সিং খুব সহজেই করা যায়। ফ্রিল্যান্সিং করতে গিয়ে বর্তমানে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো কাজ না পাওয়া। অনেক ফ্রিল্যান্সার আছে যারা অনেক ভালো কাজ জানে কিন্তু যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ খুঁজে পায় না।
ফেসবুকে অনেক ফ্রিল্যান্সিং গ্রুপ আছে সেখান থেকে খুঁজে নিতে পারেন আপনার পছন্দ মতো অনেক কাজ।
৪. অনলাইন প্রতিযোগিতা
আমাদের অনেক বড় বড় কোম্পানি আছে যারা তাদের প্রোডাক্ট প্রোমোট করার জন্য ফেসবুক এ বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজন করে থাকে।
এসব প্রতিযোগিতার মাধ্যমে কোম্পানিগুলো খুব সহজেই তাদের প্রোডাক্ট এর প্রচার করতে পারে। এসব প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে তাদের প্রোডাক্ট প্রোমোশন করে খুব সহজেই আয় করা যায়।
এসব প্রতিযোগিতায় পুরষ্কার হিসেবে বিভিন্ন অংকের টাকা এমনকি পার্টটাইম চাকুরীরও তারা দিয়ে থাকে।
৫. অনলাইন মার্কেটিং
অনলাইন মার্কেটিং করে আয় করার সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি প্লাটফর্ম হলো ফেসবুক। ফেসবুককে কেন্দ্র করে হাজার হাজার প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। তারা আয় করছে লাখ টাকারও উপরে। অনলাইন শপ কিংবা অনলাইন মার্কেটিং অন্য সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মতো নয়।
অনলাইনে আপনি বিভিন্ন প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করতে পারেন যেমন, পোশাক, কসমেটিকস, বই, ইত্যাদি। এই কাজ শুরু করার পূর্বে আপনাকে একটি ফেসবুক পেজ তৈরি করতে হবে তারপর আপনার পেজটিতে আপনার প্রোডাক্টের ছবি, মূল্য, কালার ইত্যাদি উল্যেখ করতে হবে।
এক্ষেত্রে আপনাকে মাথায় রাখতে হবে কোনভাবেই যেন ভুল তথ্য উপস্থাপন করা না হয়। মনে রাখবেন একবার যদি আপনার শপ থেকে প্রোডাক্ট কিনে কোন গ্রাহক খুশি না হয় তবে সে গ্রাহক তো আপনার শপ থেকে প্রোডাক্ট কিনবেই না বরং তার বন্ধুদেরও সেখান থেকে প্রোডাক্ট কিনতে বাঁধা প্রদান করবে।
আরও পড়ুন,
৬. ফেসবুক অ্যাপ
আপনি কি একজন ওয়েব ডিজাইনার? আপনি কি গেম ডেভেলপার? আপনি কি প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ জানেন? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর যদি হয় হ্যাঁ তবে আপনার জন্য রয়েছে অপার সম্ভাবনা।
ফেসবুক অ্যাপ তৈরি করে টাকা আয় করার সুযোগ করে দিয়েছে ফেসবুক। নিজের মনের মতো করে অ্যাপ তৈরি করে অনায়াসে আয় করতে পারেন মোটা অংকের টাকা।
আপনার তৈরি করা অ্যাপ যদি বহু সংখ্যক মানুষ ব্যবহার করে তাহলে আপনার আয়ের অংকটাও হেলদি হবে। আর যদি কম সংখ্যক মানুষ ব্যবহার করে তাহলে আয়ের অংকটাও কম হবে।
গেম এর ক্ষেত্রেও একই কথা, আপনার তৈরি করা গেম যদি জনপ্রিয়তা পায় তবে মোটা অংকের টাকা আয় করা আপনার জন্য কোন ব্যাপারই না।
এর জন্য আপনাকে গেম তৈরি করে ফেসবুকের গেম প্লাটফর্মে আপলোড করতে হবে এবং ইউজার সংখ্যা বাড়ানোর জন্য কাজ করতে হবে।
৭. অ্যাকাউন্ট বিক্রি করা
একটি অ্যাকাউন্ট বা একটি ফেসবুক পেজ অথবা হতে পারে বড় একটি গ্রুপ বিক্রি করেও টাকা আয় করা সম্ভব। অনেকগুলো অ্যাকাউন্ট খুলে রেখে, বা বেশ কিছু পেজ খুলে ২-৩ বছর পর বিক্রি করলে মোটা অংকের টাকা খুব সহজে আয় করা সম্ভব।
বর্তমানে পুরাতন ফেসবুক অ্যাকাউন্ট কিংবা ফেসবুক পেজের অনেক মূল্য। এর একটা কারণ হচ্ছে আপনার পেইজের যদি ১ লাখ ফলোয়ার থাকে তবে সেই ১ লাখ ফলোয়ার এই পেজটির সাথে পরিচিত।
তেমনিভাবে ফেসবুক গ্রুপের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। তবে মূল্য বেশী পাওয়া যাবে যদি গ্রুপটি পুরাতন হয় এবং অনেক বেশী মেম্বার থাকে।
জেনে নিন,
তো বন্ধুরা আজ আমরা জেনে নিলাম, কিভাবে ফেসবুক ব্যবহার করে টাকা আয় করা যায়। ফেসবুক ব্যবহার করে টাকা আয় করার সহজ উপায় গুলো ভালোভাবে জেনে আজই শুরু করে দিন আপনার প্রচেষ্টা। আর হ্যাঁ লেখাটি শেয়ার করতে ভুলবেন না কিন্তু!