স্ত্রীর প্রতি স্বামীর কর্তব্য নিয়ে পবিত্র কুরআন এবং হাদিসে অনেক আলোচনা করা হয়েছে যা আমরা অনেকেই জানি না। দাম্পত্য জীবনে স্বামীর কর্তব্য কি? এ ব্যাপারে ইসলাম কি বলে? এর উত্তর জানা প্রত্যেক মুসলিম পুরুষের উপর একান্তই জরুরী।
মহান আল্লহর নিকট কেবলমাত্র এবং একমাত্র গ্রহণযোগ্য ধর্ম হচ্ছে ইসলাম। মানব জীবনের এমন কোন বিষয় নেই যা ইসলামে নেই। ইসলাম শান্তির ধর্ম, ইসলাম অনুসারে জীবন পরিচালনা করলে উন্নত জীবন গঠন করা সম্ভব হয়।
সাংসারিক জীবন কিংবা দাম্পত্য জীবন কিভাবে পরিচালনা করলে সুখী দাম্পত্য জীবন লাভ করা যায়, এ নিয়ে বিশদ নির্দেশনা রয়েছে কুরআন এবং হাদিসে।
স্ত্রীর প্রতি স্বামীর কর্তব্য কি এবং দাম্পত্য জীবনে স্বামীর কর্তব্য নিয়ে ইসলামের নির্দেশনাসমুহ জেনে রাখা প্রত্যেক মুসলমানের একান্তই জরুরী।
সুখী দাম্পত্য জীবন লাভ করতে ইসলামের নির্দেশনার বিকল্প নেই। তাই আসুন জেনে নেই, স্ত্রীর প্রতি স্বামীর কর্তব্য কি?
সুচীপত্র
- স্ত্রীর প্রতি স্বামীর কর্তব্য
- ১. দেনমোহর পরিশোধ করা
- ২. স্ত্রীর ভরন-পোষণের ব্যবস্থা করা
- ৩. উত্তম আচরণ করা
- ৪. শারীরিক চাহিদা পূরণ
- ৫. বাসস্থানের ব্যবস্থা করা
- ৬. একাধিক স্ত্রীর ক্ষেত্রে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করা
- ৭. স্ত্রীর প্রতি দয়ালু হওয়া
- ৮. স্ত্রীর প্রতি যত্নশীল হওয়া
- ৯. স্ত্রীকে নিয়মিত হাতখরচ দেয়া
- ১০. হারাম কাজ থেকে বিরত রাখা
- ১১. ভালো কাজে উৎসাহ দেয়া
- ১২. প্রয়োজন অনুসারে শিক্ষার ব্যবস্থা করা
- ১৩. স্ত্রীর কথার গুরুত্ব ও মর্যাদা দেয়া
- ১৪. স্ত্রীকে হাসি খুশী রাখার চেষ্টা করা
- ১৫. স্ত্রীর পরিবারের লোকদের সম্মান করা
- ১৬. স্ত্রীকে মারধর করা যাবে না
- ১৭. স্ত্রীর ভালো কাজের প্রশংসা করা
- ১৮. স্ত্রীকে নিয়ে ঘুরতে যাওয়া
- ১৯. স্ত্রীর সাথে হাসি মুখে কথা বলা
- ২০. স্ত্রীর গোপনীয়তা রক্ষা করা
স্ত্রীর প্রতি স্বামীর কর্তব্য
ইতিপূর্বে আমরা স্বামীর প্রতি স্ত্রীর কর্তব্য নিয়ে জেনেছি। আজ স্ত্রীর প্রতি স্বামীর কর্তব্য কিংবা দাম্পত্য জীবনে স্বামীর কর্তব্য নিয়ে বিস্তারিত জানবো।
আসুন জেনে নেই ইসলামের আলোকে স্ত্রীর প্রতি স্বামীর কর্তব্য কি?
১. দেনমোহর পরিশোধ করা
বিয়ে বৈধ হওয়ার ক্ষেত্রে ইসলাম বেশ কিছু শর্ত আরোপ করে দিয়েছে, এই শর্তগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে দেনমোহর নির্ধারণ করা এবং তা যথাসময়ে পরিশোধ করা।
স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে সুসম্পর্ক তৈরি করার প্রথম ও প্রধান রাস্তা হল স্ত্রীর চাহিদা বা সন্তুষ্টি অনুযায়ী স্ত্রীর দেনমোহর পরিশোধ করা। দেনমোহোর পরিশোধ করার মাধ্যমে স্বামী ও স্ত্রী একে অপরের জন্য হালাল বা বৈধ বলে বিবেচিত হয়।
যদি কেউ স্ত্রীর দেনমোহর পরিশোধ না করে তবে সেই স্ত্রীর সাথে মেলামেশা করা বৈধ নয় এবং মেলামেশা করলে তা জেনা ব্যাবিচার বলে গন্য হবে।
দেনমোহরের ব্যাপারে পবিত্র কুরআনের সূরা নিসার ৪ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,
“আর তোমরা নারীদের সন্তুষ্টচিত্তে তাদের প্রাপ্য দেনমোহর দিয়ে দাও” (সূরা নিসা, আয়াত নং ০৪)
উপরোক্ত আয়াতে মহান আল্লাহ তায়ালা নারীদের দেনমোহর দিয়ে দেয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করেছেন, তাই দেনমোহর পরিশোধ করা স্ত্রীর প্রতি স্বামীর কর্তব্য।
এ ব্যাপারে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) বলেছেন,
“যে পুরুষ কোন নারীকে বিয়ের সময় দেনমোহর নির্ধারণ করে, তবে মহান আল্লাহ তায়ালা তার অন্তরের খবর ভালো করে জানেন যে, তার দেনমোহর আদায় করার নিয়ত নেই। ফলে সে ব্যক্তি ঐ নারীকে ধোঁকা দিল এবং ঐ নারীর লজ্জাস্থানকে অন্যায়ভাবে ভোগ করল। শেষ বিচারের দিন এমন ব্যক্তি একজন জেনাকারী হিসেবে মহান আল্লাহর সামনে হাজির হবে।” (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নং- ১৮৯৩২)
আমাদের সমাজে দেনমোহর পরিশোধ না করা ব্যক্তি অনেক রয়েছে। অনেকেই আবার স্ত্রীর কাছে ক্ষমা চেয়ে নেয়। এমনটা করা মোটেও উচিৎ নয়।
স্ত্রীর সাথে মেলামেশার পূর্বেই নির্ধারণকৃত দেনমোহর পরিশোধ করা স্ত্রীর প্রতি স্বামীর কর্তব্য। এতে সাংসারিক জীবন বা দাম্পত্য জীবন সুখের এবং বরকতপূর্ণ হয়।
দাম্পত্য জীবনে স্বামীর কর্তব্য হল দাম্পত্য জীবন সুখের করা, আর এই সুখ দান করবেন মহান আল্লাহ তায়ালা, এর জন্য প্রধান শর্ত হচ্ছে মোহোর পরিশোধ করা।
২. স্ত্রীর ভরন-পোষণের ব্যবস্থা করা
বিয়ের পর স্ত্রীর প্রতি স্বামীর কর্তব্যসমুহের মধ্যে দ্বিতীয় প্রধান কর্তব্য হল সামর্থ্য অনুযায়ী স্ত্রীর ভরন-পোষণের ব্যবস্থা করা। এখানে সামর্থ্য অনুযায়ী ভরন পোষণের কথা বলার কারণ হচ্ছে, এটির পরিমান নির্ধারিত নয়।
স্ত্রীর চাহিদা এবং স্বামীর রুজি রিজিকের উপর ভরন পোষণের পরিমাণ কম কিংবা বেশী হতে পারে। স্থান কিংবা কাল বিবেচনায়ও এর পরিমাণের কম বেশী হতে পারে।
স্ত্রীর ভরন পোষণের পরিমাণ নিয়ে মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনের সূরা তালাকের ৭ নম্বর আয়াতে বলেছেন,
“সম্পদশালী ব্যক্তি তার সম্পদ অনুযায়ী ব্যয় করবে। আর যে কম সম্পদের মালিক সে আল্লাহ প্রদত্ত কম সম্পদ হতে ব্যয় করবে। মহান আল্লাহ তায়ালা যাকে যে পরিমাণ সম্পদ প্রদান করেছেন, তার থেকে বেশী ব্যয় করার নির্দেশ দেন না।” (সূরা তালাক, আয়াত নং-৭)
ইসলামে স্ত্রীর উপর স্বামীর মর্যাদা হিসেবে স্ত্রীর ভরন পোষণের দায়িত্ব আরোপ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনের সূরা নিসা এর ৩৪ নং আয়াতে বলেছেন,
“পুরুষরা মহিলাদের উপর কর্তৃত্বশীল এ কারণে যে, আল্লাহ তাদের মধ্যে এককে অন্যের উপর মর্যাদা প্রদান করেছেন। এ কারণে পুরুষরা নিজের ধনসম্পদ হতে ব্যয় করে। ফলে নেককার স্ত্রীরা স্বামীর অনুগত থাকে এবং স্বামীর অনুপস্থিতিতে তারা তা হেফাজত করে, যা মহান আল্লাহ তায়ালা হেফাজত করার আদেশ দিয়েছেন।” (সূরা নিসা, আয়াত নং ৩৪)।
প্রত্যেক পুরুষের দায়িত্ব হল তার নিজের স্ত্রীর ব্যয়ভার বা ভরন পোষণের ব্যবস্থা করা, তাদেরকে চাহিদামত খাবার প্রদান করা, স্ত্রিদের জন্য বাসস্থানের ব্যবস্থা করা, উন্নত পোশাক প্রদান করা ইত্যাদি।
মোদ্দাকথা একজন স্বামীর জন্য দায়িত্ব হল স্ত্রীর প্রতিদিনের চাহিদা সামর্থ্য অনুযায়ী পুরন করা।
এ ব্যাপারে মানবতার মুক্তির দিশারী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) বলেছেন,
“তুমি যা ভক্ষণ করবে তোমার স্ত্রীকেও তাই খাওয়াবে। তুমি পোশাক পরিধান করলে তোমার স্ত্রীকেও পোশাক পরিধান করাবে। তোমার স্ত্রীর মুখমণ্ডলে আঘাত করবে না, তাকে খারাপ ভাষায় গালাগালি করবে না। স্ত্রীকে আলাদা রাখতে হলে ঘরের ভিতরে আলাদা রাখবে।” (আবু দাউদ, হাদিস নং- ২১৪২)
স্ত্রীর অনেক ধরণের চাহিদা থাকতে পারে কিন্তু চাহিদা পূরণের ক্ষেত্রে মাথায় রাখতে হবে স্ত্রীর চাহিদা হালাল কি না। হালাল চাহিদা হলে তা অবশ্যই সামর্থ্য অনুযায়ী পূরণ করতে হবে এবং হারাম চাহিদা হলে পূরণ করা আবশ্যক নয়।
সূরা বাকারা এর ২৩৩ নং আয়াতে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,
“আর সন্তান জন্মদানকারী নারীরা তাদের সন্তানকে দুই বছর পর্যন্ত বুকের দুধ খাওয়াবে, যদি পূর্ণ দুই বছর মেয়াদ সম্পন্ন করতে চায়। আর পিতার উপর দায়িত্ব হল, নিয়ম অনুযায়ী সে সমস্ত নারীর ভরণ পোষণের ভার গ্রহণ করা। কোন ব্যাক্তিকে তার সামর্থ্যে বাইরে চাপ প্রয়োগ করা হয় না। সন্তানের ক্ষতি হয় এমন কাজ মাকে করা যাবে না। এবং যার সন্তান তাকেও তার সন্তানের কারণে ক্ষতিগ্রস্থ করা যাবে না। ওয়ারিশদের উপরেও একই দায়িত্ব। যদি মাতা পিতা ইচ্ছা পোষণ করে যে, দুই বছরের মধ্যে সন্তানের বুকের দুধ খাওয়ানো বন্ধ করে দিবে তাহলে দিতে পারে, এতে কোন প্রকার পাপ নেই। আর যদি তোমরা দুধ মাতার দ্বারা নিজের সন্তানকে দুধ খাওয়াতে চাও তবে তাকে তার বিনিময় দিয়ে দাও, এতে কোন প্রকার পাপ নেই। এবং আল্লাহকে ভয় কর এবং জেনে রাখ, মহান আল্লাহ তায়ালা তোমাদের সকল কাজ ভালো করেই পর্যবেক্ষণ করেন।” (সূরা বাকারা, আয়াত নং ২৩৩)
স্ত্রীদের বাসস্থানের ব্যবস্থা করে দেয়ার ব্যাপারে মহান আল্লাহ তায়ালা সরাসরি নির্দেশ প্রদান করেছেন। সূরা তালাক এর ৬ নং আয়াতে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,
“তোমরা তোমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী যেমন ঘরে বাস কর, তোমাদের স্ত্রীদেরকেও সেরূপ বাসস্থানের ব্যাবস্থা কর। তাদের কষ্ট দিয়ে সংকটাপন্ন করবে না। যদি তারা আন্তঃসত্তা হয়, তবে সন্তান জন্মগ্রহণ পর্যন্ত ব্যয়ভার বহন করবে।” (সূরা তালাক, আয়াত নং ৬)
অনেক স্ত্রীলোক আছে যারা স্বামীর সামর্থ্যের অতিরিক্ত দাবী করে থাকে। তাদের এমন দাবী বা চাহিদা পূরণ করা আবশ্যক নয়।
মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) বলেছেন,
“তুমি যখন খাবে, তাকেও খাওয়াবে। তুমি যখন পরবে, তাকেও পরাবে। তার মুখ মণ্ডলে আঘাত করবে না, তাদের সাথে খারাপ আচরন করবে না।” (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নং ১৮৫০১)
উপরের হাদিস থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, স্ত্রী যদি তার স্বামীর নিকট সামর্থ্যের বাইরে কিছু আবদার করে তবে তা পূরণ করা বাধ্যতামূলক নয়। তবে স্ত্রীর প্রতি স্বামীর কর্তব্য হল সামর্থ্য অনুযায়ী স্ত্রীর চাহিদা পূরণ করা।
৩. উত্তম আচরণ করা
কথায় আছে “সংসার সুখী হয় রমণীর গুণে, গুণবান পতি যদি থাকে তার সনে। একজন ভালো স্বামীর প্রধানবৈশিষ্ট্য হচ্ছে, সে তার স্ত্রীর সাথে ভালো আচরণ করবে।
কোন স্বামী যদি তার স্ত্রীর সাথে ভালো আচরণ করে তবে স্ত্রীর মনে স্বামীর প্রতি অফুরন্ত মহাব্বত তৈরি হয়। এতে সংসার হয়ে উঠে এক টুকরা জান্নাত।
নিজের স্ত্রীর সাথে কেমন আচরণ করা উচিৎ, এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনের সূরা নিসা এর ১৯ নম্বর আয়াতে বলেছেন,
“আর তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের সাথে উত্তম আচরণ কর। আর যদি তাকে তোমার পছন্দ না হয়, তবুও তুমি যা অপছন্দ করছ, আল্লাহ তাতে অফুরন্ত কল্যান দিয়ে দেবেন।” (সূরা নিসা, আয়াত ১৯)
স্ত্রী যদি অপছন্দ হয়, কারো ভালো না লাগে বা দেখতে সুন্দর নয় তবুও তার সাথে খারাপ আচরন করা যাবে না। এ ব্যাপারে মানবতার মুক্তির দিশারী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) বলেছেন,
“কোন ইমানদার পুরুষ কোন ইমানদার নারীর উপর রাগান্বিত হবে না, কারণ স্ত্রীর যদি কোন খারাপ দিক থেকে থাকে তাহলে তার এমনও গুণও থাকবে যার উপর সে সন্তুষ্ট হতে পারবে।” (মুসলিম, হাদিস নং- ১৪৬৯)
অন্য এক হাদিসে রাসূল (সাঃ) বলেছেন,
“তোমরা নারীদের প্রতি উত্তম আচরন কর” (বুখারি, হাদিস নং-৫১৮৪)
দুনিয়াতে ভালো মানুষের বেশ কিছু গুণ রয়েছে, তারমধ্যে একটি গুণ হচ্ছে, ভালো মানুষ তার স্ত্রীদের সাথে উত্তম আচরন করে।
এ ব্যাপারে রাসূল (সাঃ) বলেছেন,
“তোমাদের মধ্যে উত্তম ব্যক্তি তারাই, যারা তাদের স্ত্রীদের সাথে উত্তম আচরন করে।” (তিরমিজি, হাদিস নং- ১১৬২)
উপরের আলোচনা থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, স্ত্রী দেখতে অসুন্দর হলেও তাদের সাথে খারাপ আচরন করা যাবে না। তাই স্ত্রী সুন্দর হোক কিংবা অসুন্দর হোক সর্বাবস্থায় তাদের সাথে উত্তম আচরন করা স্ত্রীর প্রতি স্বামীর কর্তব্য।
৪. শারীরিক চাহিদা পূরণ
মানুষের চাহিদার শেষ নেই, সামাজিক, পারিবারিক চাহিদার পাশাপাশি শারীরিক চাহিদাও রয়েছে, যাকে আমরা যৌন চাহিদা বা জৈবিক চাহিদা বলে থাকি।
এই জৈবিক চাহিদা পূরণের হালাল মাধ্যম হল বিবাহ। তাই স্ত্রীর প্রতি স্বামীর কর্তব্য হল স্ত্রীর জৈবিক চাহিদা পূরণ করা।
এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনের সূরা বাকারা এর ২২৩ নং আয়াতে বলেছেন,
“তোমাদের স্ত্রীগণ তোমাদের জন্য শস্য ক্ষেত্র। তোমরা তোমাদের ইচ্ছা অনুযায়ী তাদেরকে ব্যবহার কর। নিজেদের জন্য ভবিষ্যতের ব্যবস্থা কর এবং মহান আল্লাহকে ভয় কর। অবশ্যয়ই মনে রেখ যে, আল্লাহর সাথে তোমাদের সাক্ষাত করতেই হবে। আর ইমানদারদের সুসংবাদ দাও” (সূরা বাকারা, আয়াত ২২৩)
স্ত্রীর জৈবিক চাহিদা পূরণের ব্যাপারে ইসলাম অনেক বেশী গুরুত্ব দিয়ে থাকে। হযরত ওমর (রাঃ) বিবাহিত পুরুষদের নির্দেশ প্রদান করেছিলেন যে, কোন বিবাহিত পুরুষ ৪ মাসের বেশী তার স্ত্রীর থেকে আলাদা থাকতে পারবে না।
৫. বাসস্থানের ব্যবস্থা করা
স্ত্রীর নিরাপত্তা এবং ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্ত্রীর প্রতি স্বামীর কর্তব্য হল, স্ত্রীর জন্য নিরাপদ বাসস্থানের ব্যবস্থা করা।
স্ত্রীকে এমন একটি কক্ষ প্রদান করা যেখানে তার অনুমতি ব্যতীত অন্য কেউ প্রবেশ করতে পারবে না, এমনকি নিজের মা বাবা ভাই বোনও নয়।
স্ত্রীর ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে স্বামী ছাড়া অন্য কেউ নাক গলাতে পারে না। এ ব্যাপারে ইসলামে কঠোরতা রয়েছে।
স্ত্রীর নিরাপত্তার জন্য স্বামী চাইলে তালা চাবিও ব্যবহার করতে পারে। স্ত্রীর ব্যবহৃত জিনিসপত্র স্বামী ছাড়া অন্য কেউ দেখতে পারবে না বা তল্লাশি করতে পারবে না।
স্ত্রীর আচার আচরনে মা বাবা যদি অসন্তুষ্ট থাকেন তবে তাকে বুঝাতে হবে, তারপরেও যদি তার পরিবর্তন না হয় তবে সেই স্ত্রীর জন্য সামর্থ্য অনুযায়ী আলাদা ঘর নির্মাণ করে দিতে হবে।
পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,
“তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের জন্য তোমাদের শক্তি সামর্থ্য অনুযায়ী আপন বাড়িতে বাসস্থানের ব্যবস্থা কর।” (সূরা তালাক, আয়াত নং- ৬)
৬. একাধিক স্ত্রীর ক্ষেত্রে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করা
ইসলামে সর্বোচ্চ ৪ জন স্ত্রী রাখার অনুমতি দিয়েছে। যদি কোন ব্যক্তি একের অধিক স্ত্রী গ্রহণ করে তবে তাদের মধ্যে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করতে হবে এবং স্ত্রীদের মধ্যে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করা বাধ্যতামূলক করে দেয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেছেন,
“তোমরা একজন স্ত্রীর প্রতি ঝুঁকে পড়ো না যাতে অন্য স্ত্রীরা ঝুলন্ত হয়ে পড়ে।” (সূরা নিসা, আয়াত নং- ১২৯)
একাধিক স্ত্রী রাখার ব্যাপারে ইসলামে কোন বাধ্যবাধকতা নেই এবং যদি কোন ব্যক্তি যদি মনে করে যে, একাধিক স্ত্রী থাকলে সে ন্যায় বিচার করতে পারবে না তবে তার জন্য একজন স্ত্রীই রাখবে।
পবিত্র কুরআন এ মহান আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,
“হ্যাঁ, যদি তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করার ব্যাপারে আশঙ্কা থাকে, তবে তোমরা একজন স্ত্রীই রাখবে।” (সূরা নিসা, আয়াত নং- ৩)
উপরের আলোচনা থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, একাধিক স্ত্রীর ক্ষেত্রে স্ত্রীর প্রতি স্বামীর কর্তব্য হল ন্যায়বিচার বা ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করা, যদি কেউ ইনসাফ করতে না পারে বা ইনসাফ করতে পারবে না এমন আশঙ্কা করে তবে তার জন্য একজন স্ত্রীই যথেষ্ট।
৭. স্ত্রীর প্রতি দয়ালু হওয়া
স্ত্রীর প্রতি স্নেহশীল ও দয়ালু হওয়া উত্তম স্বামীর বৈশিষ্ট্য। স্ত্রীর ছোট ছোট ভুলে তাদের সাথে খারাপ আচরন করা ঠিক নয় বরং সহনীয় ভুলগুলোকে ক্ষমা করে দেয়া এবং ধৈর্যধারণ করা উচিৎ।
মানুষের জীবনে ছোট খাটো ভুল ভ্রান্তি থাকেই। যদিও ইসলাম নারীদের অনেক মর্যাদা দিয়েছে তবুও পরিপূর্ণভাবে সংশোধিত হওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না।
এ ব্যাপারে মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) বলেছেন,
“তোমরা নারীদের ব্যাপারে কল্যানকামী হও। কারণ, তাদের সৃষ্টি করা হয়েছে পাজরের হাড় দিয়ে। পাজরের উপরের হাড়টি সবচেয়ে বেশী বাঁকা। তোমরা একে সোজা করতে চাইলে ভেঙ্গে যাবে আবার ঐ অবস্থায় রেখে দিলে বাঁকাই থেকে যাবে। তাই তোমরা স্ত্রীদের ব্যাপারে কল্যাণকামী হও এবং তাদের ব্যাপারে উত্তম উপদেশ গ্রহণ কর।” (বুখারি)
৮. স্ত্রীর প্রতি যত্নশীল হওয়া
প্রতিটি বিষয়ে স্ত্রীর প্রতি যত্নশীল হওয়া এবং তাদের ব্যাপারে সতর্ক থাকা প্রতিটি স্বামীর কর্তব্য। স্ত্রীদের সুপথে পরিচালিত করা, তাদেরকে হেফাজত করা স্বামীর কর্তব্য।
স্ত্রীর প্রতি যত্নশীল হওয়ার কারণ হচ্ছে, নারীদের সৃষ্টিগতভাবে দুর্বল এবং অনেক ক্ষেত্রে স্বামীর অমনোযোগী বা উদাসীনতায় স্ত্রী নিজেও ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে সাথে স্বামীও ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে।
এ ব্যাপারে মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) বলেছেন,
“আমার মৃত্যুর পর বা আমার অবর্তমানে পুরুষদের জন্য নারীদের থেকে বেশি ফেতনা রেখে আসিনি” (বুখারি, হাদিস নং- ৪৭০৬)
উপরের হাদিস থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, নারীদের বা স্ত্রীদের ব্যাপারে মনযোগী না হলে ফেতনা সৃষ্টির আশংকা থাকে। তাই তাদের ভালো মন্দ এবং সু পথে পরিচালিত করা স্ত্রীর প্রতি স্বামীর কর্তব্য।
৯. স্ত্রীকে নিয়মিত হাতখরচ দেয়া
স্ত্রীকে থাকার ঘর দিলাম, তিন বেলা ভালো খাবার দিলাম তাতেই শেষ? না, তাতেই শেষ না। স্ত্রীকে নিয়মিত হাত খরচ দেয়া জরুরী।
এমন কিছু বিষয় আছে যা কারো কাছে বলতে বা চাইতে লজ্জা কাজ করে তাই চাইতে পারে না। স্ত্রীকে হাত খরচ দিলে গোপনীয় বা লজ্জাকর চাহিদাগুলো সে পূরণ করতে পারে।
তবে মাথায় রাখা জরুরী, এতে যেন অপচয় না হয় এবং তা সামর্থ্য অনুযায়ী হয়।
১০. হারাম কাজ থেকে বিরত রাখা
সকল ক্ষেত্রে স্ত্রীদের সাথে উত্তম আচরণের পাশাপাশি তারা যেন হারাম কাজের প্রতি ঝুঁকে না পড়ে সেদিকে মনোযোগী হতে হবে।
স্ত্রীর থেকে শরীয়াহ বিরোধী বা হারাম কাজ দেখতে পেলে তা ভালবাসার সাথে শুধরে দিতে হবে পাশাপাশি কঠোরতাও থাকবে।
তবে ভালোবাসার ঘাটতি থাকা চলবে না। স্ত্রীকে হারাম বা শরিয়াহ বিরোধী কাজ থেকে বিরত রাখা স্ত্রীর প্রতি স্বামীর কর্তব্য।
এ ব্যাপারে আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) বলেছেন,
“মনে রেখ, তোমাদের সবারই দায়িত্ব রয়েছে, তোমাদের দায়িত্বগুলো সম্পর্কে তোমাদেরকে জিজ্ঞেস করা হবে। রাজাদেরকে তার প্রজার হকের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হবে, পুরুষ তার পরিবার পরিজনের ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবে।” (বুখারি, হাদিস নং ৮৯৩)
১১. ভালো কাজে উৎসাহ দেয়া
স্ত্রী যদি কোন ভালো কাজ করে তবে তার কাজের বিরোধিতা করা যাবে না বরং আরও বেশি বেশি উৎসাহ প্রদান করতে হবে।
এ ব্যাপারে হাদিসে এসেছে,
“রাসূল (সাঃ) রমজানের শেষ দশ দিন রাত জেগে ইবাদত করতেন এবং নিজের পরিবারের লোকজনকেও জাগিয়ে দিতেন।” (বুখারি, হাদিস নং- ২০২৪)
অন্য এক হাদিসে বর্ণিত আছে,
“ঐ সকল পুরুষকে মহান আল্লাহ তায়ালা রহম করুন, যে পুরুষ রাতের বেলা ঘুম থেকে উঠে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করে এবং তার স্ত্রীকেও ঘুম থেকে তুলে নামাজ পড়ায়। যদি সে উঠতে না চায় তখন তার চোখে ভালবাসা এবং কোমলতার সাথে পানি ছিটিয়ে দেয়। ঐ নারীদের মহান আল্লাহ তায়ালা রহম করুন যে নারী রাতের বেলা ঘুম থেকে উঠে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করে এবং তার স্বামীকেও ঘুম থেকে উঠিয়ে নামাজ পড়ায়, যদি সে উঠতে না চায় তখন তার চোখে ভালবাসা এবং কোমলতার সাথে পানি ছিটিয়ে দেয়।” (আবু দাউদ, হাদিস নং- ১৩০৮)
১২. প্রয়োজন অনুসারে শিক্ষার ব্যবস্থা করা
স্ত্রীর প্রতি স্বামীর কর্তব্য হচ্ছে স্ত্রীকে প্রয়োজন অনুসারে দ্বীন-দুনিয়াবী শিক্ষার ব্যবস্থা করা। ইসলামে শিক্ষার গুরুত্ব অনেক।
স্ত্রী যদি কম শিক্ষিত হয় তবে তাকে শিক্ষার ব্যবস্থা অবশ্যই করে দিতে হবে যদি সামর্থ্য থাকে। আর যদি সামর্থ্য না থাকে তবে অবসর সময়ে নিজের স্ত্রীকে নিজেই শিক্ষা প্রদান করবে।
মহান আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,
“তোমরা নিজেকে এবং তোমাদের পরিবার পরিজনকে জাহান্নামের কঠিন আজাব থেকে রক্ষা কর।” (সূরা তাহরিম, আয়াত নং- ৬)
উপরের আয়াত থেকে এটাই বলা যায়, যেহেতু নিজের স্ত্রী পরিবারের একজন তাই জাহান্নামের কঠিন আজাব থেকে রক্ষা করার জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষার ব্যবস্থা করা প্রতিটি স্বামীর একান্তই কর্তব্য।
১৩. স্ত্রীর কথার গুরুত্ব ও মর্যাদা দেয়া
যদিও স্ত্রীকে স্বামীর অধিনস্ত করে দেয়া হয়েছে তবুও প্রত্যেক স্বামীর কর্তব্য হচ্ছে স্ত্রীর কথা বা মতামতের গুরুত্ব ও মর্যাদা দেয়া। স্ত্রীর ন্যায্য দাবীগুলোকে মূল্যায়ন করতে হবে।
প্রতিটি স্বামীর মনে রাখতে হবে, স্ত্রী হল একজন স্বামীর অর্ধাংশ। স্ত্রী ছাড়া একজন পুরুষ পরিপূর্ণতা পায় না আবার স্বামী ছাড়া একজন নারী পরিপূর্ণতা পায় না।
১৪. স্ত্রীকে হাসি খুশী রাখার চেষ্টা করা
শরীয়তের সীমার ভিতরে থেকে যতটুকু সম্ভব স্ত্রীকে হাসি খুশী রাখার চেষ্টা করা স্ত্রীর প্রতি স্বামীর কর্তব্য গুলোর মধ্যে একটি। স্ত্রীর মনকে প্রফুল্ল রাখতে স্বয়ং রাসূল (সাঃ) নির্দেশ প্রদান করেছেন।
এ ব্যাপারে রাসূল (সাঃ) বলেছেন,
“মুসলমানদের জন্য সব ধরণের খেলা নিষিদ্ধ, তবে, ধনুক থেকে তীর চালনা, ঘোড়া চালনা, স্বামী-স্ত্রী একে অপরের সাথে রসিকতা করা, ইত্যাদি বৈধ। কারণ, এসবকিছু ন্যায়সংগত।” (তিরমিজি, হাদিস নং- ১৬৩৭)
হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেছেন,
“একদা একটি মসজিদের সামনে হাবশি ছেলেরা যুদ্ধের অস্ত্র নিয়ে খেলা করছিল। রাসূল (সাঃ) আমাকে আড়াল করে দাঁড়িয়ে ছিলেন, আর আমি তাদের খেলা দেখছিলাম, যতক্ষণ না আমার খেলা দেখার শখ পূর্ণ হয়েছে, রাসূল (সাঃ) ততক্ষন কষ্ট করে আমার জন্য দাঁড়িয়ে ছিলেন। তোমরা চিন্তা করে দেখ, একজন অল্প বয়সী মেয়ের শখ কতক্ষণে পূর্ণ হতে পারে?” (বুখারি, হাদিস নং- ৫২৩৬)
১৫. স্ত্রীর পরিবারের লোকদের সম্মান করা
স্ত্রীর মাতা-পিতা, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজনদের প্রতি ভালো আচরণ করা এবং যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা প্রতিটি স্বামীর কর্তব্য। স্ত্রীর আত্মীয়-স্বজনদের সাথে ভালো সম্পর্ক রাখা একটি অপরিহার্য বিষয়।
কেননা স্বামীর আচার আচরণে স্ত্রীর পরিবারের কেউ কষ্ট পেলে সেই কষ্ট তার স্ত্রীর অন্তরেও আঘাত হানতে পারে। স্বামী যদি স্ত্রীর পরিবারের লোকদের সাথে ভালো আচরণ করে, সম্মান করে তাহলে স্ত্রীও স্বামীর পরিবারের লোকজনদের সাথে ভালো আচরণ এবং সম্মান করতে উৎসাহিত হবে।
এ ব্যাপারে রাসূল (সাঃ) বলেছেন,
“বিশ্বাসীদের মধ্যে ঐ ব্যাক্তি পরিপূর্ণ বিশ্বাসী যে তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি চরিত্রবান। তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যাক্তি উত্তম, যে ব্যাক্তি তার স্ত্রীর কাছে ভালো।” (তিরমিযী, হাদিস নং -১/২১৭-১৮, আবূ দাঊদ হাদিস নং-. ৪৬৮২)
১৬. স্ত্রীকে মারধর করা যাবে না
আমাদের সমাজে স্ত্রীকে পেটানো অনেক স্বাভাবিক একটি বিষয়। কিন্তু এটি করা ইসলাম মোটেও সমর্থন করে না।
স্ত্রীর পরিবারের লোকজন তাদের মেয়েটিকে একজন পুরুষের হাতে তুলে দিয়েছে তাকে দেখে শুনে রাখার জন্য, তাকে ভালো রাখার জন্য।
স্ত্রীর জন্য একজন স্বামী হচ্ছে রক্ষাকর্তা। একজন রক্ষক কখনো একজন ভক্ষকের দায়িত্ব পালন করতে পারে না।
কোন কারণে যদি স্ত্রীকে মারধর করার প্রয়োজন পড়ে তবে অবশ্যয়ই তা ইসলামের বিধান অনুসারে মারতে হবে। স্ত্রীর মুখ মণ্ডলে আঘাত করা পুরোপুরি হারাম অর্থাৎ নিষিদ্ধ।
এ ব্যাপারে হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেছেন,
“রাসূল (সাঃ) কখনো তাঁর খাদেমকে অথবা কোন স্ত্রীকে মারধর করেননি, এবং কখনো নিজ হাতে অপরকে আঘাত করেননি।” (বুখারী, হাদিস নং- ৩৫৬০, ৬১২৬, ৬৭৮৬, ৬৮৫৩, মুসলিম, হাদিস নং- ২৩২৮, আবূ দাউদ, হাদিস নং- ৪৭৮৫, ৪৭৮৬)
১৭. স্ত্রীর ভালো কাজের প্রশংসা করা
নারীদের খুশী রাখার একটি পরীক্ষিত মাধ্যম হচ্ছে তার কাজের প্রশংসা করা। তবে অবশ্যই ভালো কাজের প্রশংসা করতে হবে পাশাপাশি অন্যায় কাজের বাধা দিতে হবে এবং বুঝাতে হবে।
স্ত্রীর কাজ যেমন, রান্না, সৌন্দর্য, সন্তান লালন পালন ইত্যাদি কাজের প্রশংসা করা। সাংসারিক কাজে স্ত্রীর কষ্টের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। এই কাজগুলো করলে আত্মার বন্ধন তৈরি হয়, এবং ভালবাসা মজবুত হয়।
সুখী সংসার গড়তে স্ত্রীর প্রতি স্বামীর কর্তব্য হল স্ত্রীর সমস্ত ভালো কাজের প্রশংসা করা এবং সাংসারিক কাজে কষ্টের জন্য তার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা।
১৮. স্ত্রীকে নিয়ে ঘুরতে যাওয়া
স্ত্রী সর্বদাই বাসা বাড়িতে থাকবে এমন ধারনা মোটেও ঠিক নয়। সারাজীবন ঘরের মধ্যে আবদ্ধ করে রাখা যাবে না। এতে করে স্ত্রীর মন এক ঘিয়েমি হওয়ার পাশাপাশি মানসিক রোগও বাসা বাঁধতে পারে।
মানসিকভাবে ভালো থাকার জন্য আত্মীয়দের বাসায় ঘুরতে নিয়ে যাওয়া বা দর্শনীয় জায়গায় বেড়াতে নিয়ে গেলেও মন্দ হয় না। এতে করে স্ত্রীর মন মেজাজ প্রফুল্ল থাকে এবং মনে সতেজতা আসে।
১৯. স্ত্রীর সাথে হাসি মুখে কথা বলা
স্ত্রীর সাথে হাসি মুখে কথা বলা পুণ্যের কাজ। স্ত্রীর সাথে শরিয়াতের বিধান মোতাবেক খেলাধুলা করা, হাসি তামাসা করা যেতে পারে। আমাদের নবী সর্বদাই তাঁর স্ত্রীদের সাথে হাসি মুখে কথা বলতেন।
হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেছেন,
“নির্জন জায়গায় রাসূল (সাঃ) এর সাথে আমি দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করি এবং আমি ওনাকে অতিক্রম করি।” (আবূ দাউদ, হাদিস নং- ২৫৭৮)
২০. স্ত্রীর গোপনীয়তা রক্ষা করা
স্ত্রীর প্রতি স্বামীর কর্তব্য গুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, স্ত্রীর গোপনীয়তা রক্ষা করা। স্বামী স্ত্রীর মাঝে কি হচ্ছে, এ বিষয়গুলো অন্যের সামনে প্রকাশ করা যাবে না।
শুধু স্বামীকেই গোপন রাখতে হবে বিষয়টা এমন নয়, স্বামী তার স্ত্রীর গোপনীয়তা রক্ষা করবে এবং স্ত্রীও তার স্বামীর গোপনীয়তা রক্ষা করবে।
পরিশেষে বলা যায়, ইসলামের আইনের মধ্যেই স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক সীমাবদ্ধ নয়। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক হচ্ছে মন ও আত্মার সম্পর্ক। আইনের উপর নির্ভর করে এই সম্পর্ক টিকে রাখা সম্ভব হয় না। মনের বা আত্মার সম্পর্ক তৈরি করা স্ত্রীর প্রতি স্বামীর কর্তব্য। তাহলেই একটি জান্নাতি সংসার উপভোগ করা সম্ভব হবে।
আরও পড়ুন,
*লেখাটি শেয়ার করার অনুরোধ রইলো*
Have you ever considered about adding a little bit more than just your articles?
I mean, what you say is valuable and all. However just imagine if you added
some great visuals or video clips to give your posts more, “pop”!
Your content is excellent but with pics and videos, this blog could certainly be one of the most beneficial
in its niche. Awesome blog!
Every weekend i used to pay a quick visit this website,
as i wish for enjoyment, as this this web site conations genuinely fastidious funny stuff too.
My spouse and I absolutely love your blog and find the majority of your post’s to be just
what I’m looking for. Would you offer guest writers to
write content for you personally? I wouldn’t mind producing a
post or elaborating on a lot of the subjects you write
related to here. Again, awesome web log!