কোমল পানীয় বা সফট ড্রিংকস বলতে আমরা বুঝি ফানটা, কোকাকোলা, সেভেন আপ, পেপসি ইত্যাদি। ইংরেজিতে সোডা ওয়াটার নামে পরিচিত।
সোডা নামের সাথে অনেকেই পরিচিত, আর আমরা এটাই পান করছি প্রতিনিয়ত। পিলে চমকে যাওয়ার মতো কথা না! হ্যাঁ তাই, সোডা বা সোডা ওয়াটার বলতে পারি কোমল পানীয় স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
কিন্তু আমরা অধিকাংশ মানুষ জানিনা এই কোমল পানীয় ঠিক কী পরিমাণ ক্ষতি করতে পারে। কোমল পানীয়র ক্ষতিকর দিক জানলে তো আপনি শুধু অবাকই হবেন না সাথে কি করে এই অভ্যাস ত্যাগ করবেন সেটার পরিকল্পনা আঁটবেন।
সফট ড্রিংকস এর অপকারিতা বা কোমল পানীয়র ক্ষতিকর দিকগুলো জানার পূর্বে আসুন আগে জেনে নেই সফট ড্রিংকস বা কোমল পানীয়তে আসলে কি কি থাকে?
সুচীপত্র
- কোমল পানীয় বা সফট ড্রিংকস-এ কি থাকে?
- কোমল পানীয় কেন স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর?
- ১. শরীরের ওজন দ্রুত বৃদ্ধি করে
- ২. ফ্যাটি লিভার রোগ
- ৩. পেটের মেদ বাড়ায়
- ৪. ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স হতে পারে
- ৫. টাইপ ২ ডায়াবেটিস হতে পারে
- ৬. লেপ্টিন হরমোন রেজিস্ট্যান্স করে
- ৭. কোমল পানীয়তে আসক্তি
- ৮. হৃদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়
- ৯. ক্যান্সারের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়
- ১০. দাঁতের ক্ষতি
- ১১. Gout রোগ হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়
- ১২. স্মৃতিশক্তি কমে যায়
কোমল পানীয় বা সফট ড্রিংকস-এ কি থাকে?
এক বোতল কোমল পানীয়তে ৯.৫ চা চামচ চিনি থাকে। একবার ভাবুন তো এক গ্রাস সরবত বানাতে কি এতো পরিমাণ চিনি কেউ ব্যবহার করে?
এটা জানলে সত্যিই অবাক হবেন যে, এই চিনি কিন্তু সাধারণ চিনি নয়। এই চিনির নাম হচ্ছে ফ্রুক্টোজ কর্ন সিরাপ। এ ধরণের উচ্চমানের ফ্রুক্টোজ কর্ন সিরাপ দামেও অনেক সস্তা।
দামে অনেক সস্তা হওয়ার কারণে কোমল পানীয় প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলো অনায়াসে ব্যবহার করে থাকে অধিক মুনাফা লাভের আশায়।
এছাড়াও আরও অনেক কেমিক্যাল আছে যা শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। যেমন, সোডা, কার্বন ডাই অক্সাইড, রঙ, ফ্লেভার, সাইট্রিক অ্যাসিড, অধিক মাত্রায় ক্যাফেইন, ভ্যানিলা ইত্যাদি।
আসুন এবার জেনে নেয়া যাক, কোমল পানীয়র ক্ষতিকর দিক বা সফট ড্রিংকস এর অপকারিতা গুলো কি কি?
জেনে নিন,
কোমল পানীয় কেন স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর?
সফট ড্রিংকস বা কোমল পানীয়ের ক্ষতিকর দিক নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে ইতিমধ্যে। প্রায় সব গবেষণায় বিজ্ঞানীরা এটাই প্রমাণ করেছেন যে, সফট ড্রিংকস বা কোমল পানীয়ের শারীরিক কোন উপকারিতা নেই বললেই চলে।
বরং কোমল পানীয় পান করলে শরীরের মারাত্মক ক্ষতি হয়ে থাকে। আসুন জেনে নেই, কোমল পানীয় কেন স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর?
১. শরীরের ওজন দ্রুত বৃদ্ধি করে
আমরা সাধারণত কার্বোহাইড্রেট বেশি গ্রহণ করে থাকি যা বাংলায় শর্করা নামে পরিচিত। এই কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ করার পর পেটে গিয়ে তা গ্লুকোজে পরিণত হয়।
আমাদের শরীরে একটি হরমোন আছে যার কারণে আমরা ক্ষুধা অনুভব করি। গ্লুকোজ ঘ্রেলিন হরমোনের মাত্রা কমিয়ে দেয়। তাই আমাদের ক্ষুধা ভাব দূর হয়ে যায় এবং মনে হয় পেট ভরা আছে।
যদি আমরা ফ্রুকটোজ গ্রহণ করি তাহলে গ্রেলিন হরমোনের মাত্রা কমায় না। তাই ক্ষুধা ভাব থেকেই যায়। আর আমরা জানি, ফ্রুকটোজ উচ্চ মাত্রার চিনি তাই এটিও শরীরের মধ্যে জমা হচ্ছে সাথে ক্ষুধা মেটাতে অতিরিক্ত খাবারও গ্রহণ করছি।
এমনটা হলে তো শরীরের ওজন বৃদ্ধি পাবেই। গবেষকরা জানিয়েছেন, যারা কোমল পানীয় পান করেন তারা অতিরিক্ত ১৭ শতাংশ ক্যালরি শরীরে জমা করে।
শরীরে অতিরিক্ত ক্যালরি জমা হওয়ার কারণে ধীরে ধীরে ওজন বৃদ্ধি পেতে থাকে। সাথে স্থুলতা হয়ে থাকে। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে তো এটি আরও ভয়ঙ্কর।
একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব শিশুরা অতিরিক্ত কোমল পানীয় পান করে তাদের অতিরিক্ত মোটা বা স্থুলতার ঝুঁকি ৫০-৬০ শতাংশ বৃদ্ধি পায়।
জেনে রাখুন,
২. ফ্যাটি লিভার রোগ
আমরা প্রতিদিন যে চিনি খাই বা গ্রহণ করি তা মূলত সুক্রোজ। গ্লুকোজ এবং ফ্রুকটোজ মিলে গঠিত হয় সুক্রোজ। গ্লুকোজ শরীরের প্রায় সব অঙ্গ দ্বারাই বিপাকিত বা মেটাবোলাইজড হয়ে থাকে।
কিন্তু সুক্রোজ বিপাকিত হয় বা মেটাবোলাইজড হয় শুধুমাত্র লিভারের মাধ্যমে। লিভার এই সুক্রোজকে মেটাবোলাইজড করতে গিয়ে কিছু পরিমাণ চর্বিতে রূপান্তরিত করে ফেলে।
এই চর্বি থেকে কিছু পরিমাণ চর্বি বা ফ্যাট লিভারে জমা হতে থাকে। তবে স্বাভাবিক মাত্রায় চিনি গ্রহণ ততটা ক্ষতি না করলেও অতি উচ্চ মাত্রার চিনি যেমন ফ্রুক্টোজ কর্ন সিরাপ মারাত্মক ক্ষতি করে থাকে।
আমরা পূর্বেই জেনেছি কোমল পানীয়তে উচ্চ মাত্রার চিনি থাকে। যাকে আমরা ফ্রুক্টোজ কর্ন সিরাপ হিসেবে জানি।
নিয়মিত কোমল পানীয় পান করলে তাই লিভারে ফ্যাট জমা হবেই, এতে কোন সন্দেহ নেই। এভাবে ধীরে ধীরে ফ্যাট বা চর্বি জমা জমা হতে হতে এক সময় ফ্যাটি লিভার ডিজিজে পরিণত হয়।
৩. পেটের মেদ বাড়ায়
পেটের চর্বি বা মেদ নিয়ে অনেকেই দুশ্চিন্তা করে থাকেন, অনেকেই নিয়মিত শরীরচর্চা করেন। কিন্তু আমরা এটা জানি না যে আসলে কি কারণে পেটের চর্বি বা মেদ বৃদ্ধি পায়?
এই প্রশ্নের উত্তরটা জানা থাকলে নিশ্চয়ই পেটের মেদ কমাতে বা পেটের মেদ বৃদ্ধি হওয়া রোধ করতে আর বেগ পেতে হবে না।
এটা সত্যি যে, অতিরিক্ত চিনি পেটের মেদ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে থাকে। আর উচ্চ মাত্রার চিনি হলে তো কোন কথায় নেই।
উচ্চ মাত্রার চিনি রয়েছে কোমল পানীয় বা সফট ড্রিংকস এ। যাকে আমরা ফ্রুক্টোজ কর্ন সিরাপ হিসেবে জানি। কোমল পানীয়ের ক্ষতিকর দিক গুলোর মধ্যে পেটে মেদ জমা অন্যতম।
প্রতিনিয়ত কোমল পানীয় পান করলে শুধু পেটেই চর্বি জমে না। পেটের আশে পাশেও মেদ জমাতে সহায়তা করে। পেটের চর্বিকে বলা হয়ে থাকে ভিসেরাল ফ্যাট।
৩২ জন সুস্থ মানুষের উপর একটি গবেষণা করে দেখা গেছে, যাদের গ্লুকোজের কোমল পানীয় পান করানো হয়েছিল তাদের ত্বকে চর্বি পাওয়া গেছে।
কিন্তু যাদের ফ্রুকটোজের কোমল পানীয় পান করানো হয়েছিল তাদের পেটের চর্বি অনেক বেশি বৃদ্ধি পেয়েছিল।
এটাও প্রমাণিত হয়েছে যে গ্লুকোজের কোমল পানীয় খাওয়ার ফলে মেটাবলিক রোগ থেকে দূরে থাকা যায়। কিন্তু কোমল পানীয়তে থাকে ফ্রুকটোজ। তাই সফট ড্রিংকস স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
আরও পড়ুন,
৪. ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স হতে পারে
দীর্ঘদিন কোমল পানীয় পানের ফলে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স হতে পারে আর এটি সফট ড্রিংকস এর অপকারিতা গুলোর মধ্যে অন্যতম।
প্রশ্ন আসতে পারে কিভাবে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স হয়? এর উত্তর জানার পূর্বে ইনসুলিনের কাজ সম্পর্কে হালকা জেনে নিলে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বিষয়টা সহজ হবে।
আমাদের প্রতিদিনের খাবার গ্রহণের পর কার্বোহাইড্রেট গুলো ভেঙ্গে গ্লুকোজ এ রূপান্তরিত হয়। এই গ্লুকোজগুলো রক্তের সাথে মিশে যায় এবং সারা শরীরে ছড়িয়ে যায়।
গ্লুকোজকে রক্তের মাধ্যমে সারা শরীরে অর্থাৎ প্রতিটি কোষে পৌঁছিয়ে দেয়ার জন্য সহায়তা করে ইনসুলিন। এই ইনসুলিন উৎপন্ন হয় অগ্নাশয় থেকে।
শরীরে যদি ইনসুলিনের অভাব হয় অথবা ইনসুলিন এর কার্যক্ষমতা কমে গেলে রক্তে থাকা গ্লুকোজ কোষে প্রবেশ করতে পারে না। এর ফলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যায়। এই অবস্থাকে বলা হয়ে থাকে ডায়াবেটিস।
আর ইনসুলিন কাজ না করাটাকে বলা হয় ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স। কোমল পানীয় পান করলে শরীরের কোষগুলো ইনসুলিনের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।
এই ঘটনার ফলে অগ্নাশয়ে আরও বেশি বেশি ইনসুলিন উৎপন্ন হয় এর ফলে শরীরে ইনসুলিন এর পরিমাণ অনেক বেশি বৃদ্ধি পায়।
এই ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটতে থাকলে এক সময় ইনসুলিনের কর্মক্ষমতা কমতে কমতে শূন্যের কোঠায় চলে আসে। এভাবেই মূলত টাইপ ২ ডায়াবেটিস হয়ে থাকে।
কোমল পানীয় পান করার ক্ষতিকর দিক গুলোর মধ্যে এটি সবচেয়ে মারাত্মক। তাই গবেষকরা কোমল পানীয় পান করা থেকে বিরত থাকতে বলেন সবসময়।
৫. টাইপ ২ ডায়াবেটিস হতে পারে
বর্তমানে কোটি কোটি মানুষ টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। ইতিমধ্যে আমরা জেনেছি যে, উচ্চ মাত্রার চিনি তথা ফ্রুকটোজ গ্রহণের ফলে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স হয়ে যায়।
এই ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স এর কারণেই মূলত টাইপ ২ ডায়াবেটিস হতে পারে বলে বহু গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে।
কোমল পানীয়র অপকারিতা হচ্ছে এটি ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স ঘটায়। কোমল পানীয় বা সোডা তাই টাইপ ২ ডায়াবেটিসের জন্য দায়ী।
চিনি এবং ডায়াবেটিস এ দুটোর মধ্যে সম্পর্ক কেমন এটা নিয়ে একদল গবেষক একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেন।
তারা সেখানে উল্লেখ করেছেন, প্রতিদিন ১৪০ থেকে ১৫০ ক্যালরি চিনি খেলে টাইপ ২ ডায়াবেটিস এ আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ১ শতাংশ থেকে ১.৫ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়।
জেনে রাখুন,
৬. লেপ্টিন হরমোন রেজিস্ট্যান্স করে
আমাদের শরীরে যে চর্বি আছে সেখানে এক ধরণের হরমোন তৈরি হয় সেটাকে লেপ্টিন হরমোন বলা হয়। আমরা কি পরিমাণ ক্যালরি গ্রহণ করছি এবং হজম বা বার্ন করছি তা এই হরমোন নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
খাওয়ার উপর নির্ভর করে লেপ্টিন হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে আবার কমেও যেতে পারে। এই লেপ্টিন হরমোনকে ক্ষুধার হরমোনও বলা হয়ে থাকে।
যদি উচ্চ মাত্রার চিনি অর্থাৎ ফ্রুকটোজ গ্রহণ করা হয় তবে লেপ্টিন হরমোন রেজিস্ট্যান্স হতে পারে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, সফট ড্রিংকস এর অপকারিতা গুলোর মধ্যে এটি অন্যতম।
কিছু ইঁদুরের উপরে বিজ্ঞানীরা একটি গবেষণা করেন, ইঁদুরগুলোকে উচ্চ মাত্রার চিনি বা ফ্রুকটোজ খেতে দিলে তাদের লেপ্টিন হরমোনের রেজিস্ট্যান্স দেখা যায়। আবার সাধারণ খাবার খাওয়ালে ঠিক হয়ে যায়।
৭. কোমল পানীয়তে আসক্তি
একটি গবেষণায় দেখা গেছে, কোমল পানীয় পান করলে মস্তিস্কে ডোপামিন নামক কেমিক্যাল অতিরিক্ত নিঃসরণ হয়। যা সুখী ভাব দিয়ে থাকে।
ইঁদুরের উপর গবেষণা করে বিজ্ঞানীরা পেয়েছেন, ইঁদুরকে কোমল পানীয় পান করালে তাদের মস্তিস্কে ডোপামিন ক্যেমিক্যাল নিঃসরণ হয় এবং তারা সুখী ভাব অনুভব করে।
চিনি কিংবা উচ্চমাত্রার চিনির উপর অনেক গবেষণা হয়েছে। প্রায় প্রত্যেক গবেষণা প্রতিবেদনে এটাই প্রতীয়মান হয়েছে যে, চিনি বা উচ্চ মাত্রার চিনি মস্তিস্ককে মাদক দ্রব্যের মতো প্রভাবিত করতে পারে।
প্রাথমিক দিকে কোমল পানীয়ের অপকারিতাটি প্রভাব বিস্তার করতে না পারলেও একটা সময়ে ঠিকই এর প্রতি আসক্ত হয়ে যাবে।
জেনে নিন,
৮. হৃদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়
দীর্ঘদিন কোমল পানীয় পান করার কারণে হৃদরোগ হতে পারে তা বহুকাল ধরে বিজ্ঞানীরা বলে আসছেন।
আমাদের অনেকেরই জানা যে, কোমল পানীয় পান করলে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়, শরীরের মধ্যে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পায়।
২০ বছর ধরে চলা ৪০০০০ হাজার মানুষের উপর একটি গবেষণা প্রতিবেদন হতে জানা যায় যে, যারা প্রতিদিন এক গ্লাস বা এক ক্যান কোমল পানীয় পান করে থাকেন তাদের হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুর সম্ভাবনা প্রায় ২০-২২ শতাংশ বেশী।
৯. ক্যান্সারের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়
প্রায় ৬০০০০ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের উপর একটি গবেষণা পরিচালনা করে বিজ্ঞানীরা পেয়েছেন, যে সমস্ত মানুষ ২ সপ্তাহ বা তার বেশী মিষ্টি বা কোমল পানীয় পান করেছেন তাদের প্যানক্রিয়াটিক ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশী।
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন যারা কোমল পানীয় পান করেন না তাদের তুলনায় প্রায় ৮৫ শতাংশ থেকে ৮৭ শতাংশ বেশী প্যানক্রিয়াটিক ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
অপর একটি গবেষণায় দেখা গেছে যাদের পায়ু পথের ক্যান্সার হয়েছে এবং চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ জীবন যাপন করছেন, তারা যদি কোমল পানীয় পান করেন তবে পায়ু পথে আবারও ক্যান্সার হতে পারে। এমনকি রোগীর মৃত্যুর সম্ভাবনা অনাকাংশে বেড়ে যায়।
আরও পড়ুন,
১০. দাঁতের ক্ষতি
আমরা ইতিমধ্যে জেনেছি, কোমল পানীয়তে অতিমাত্রায় চিনি এবং সোডা রয়েছে। কিন্তু আপনি জানেন কী! সোডাতে আসলে কি থাকে?
সোডাতে ফসফরিক এসিড এবং কার্বনিক এসিড থাকে। এই এসিড সাধারণত ঝাঁঝাল টাইপের হয়ে থাকে এবং দাঁতকে ধীরে ধীরে ক্ষয় করতে পারে।
সোডাতেই এতো ক্ষতি! আবার উচ্চ মাত্রার চিনি এবং সোডা যদি একসাথে হয় তবে ক্ষতির পরিমাণ কয়েকগুণ পর্যন্ত বেড়ে যায়।
কোমল পানীয়ের ক্ষতিকর দিকগুলোর মধ্যে দাঁতের ক্ষতি হচ্ছে উল্লেখযোগ্য এবং মারাত্মক একটি দিক।
১১. Gout রোগ হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়
হাত পায়ের আঙ্গুলে জ্বালাপোড়া, হাড়ের জয়েন্ট-এ ব্যাথা এই রোগটিকে মূলত গাউট রোগ বলা হয়ে থাকে। রক্তে ইউরিক এসিড থাকে এই এসিড কোন কারণে স্ফটিকে পরিণত হয়।
যদি অতিরিক্ত মাত্রায় ইউরিক এসিড স্ফটিকে পরিণত হয় তবে গাউট রোগ হয়। আর কোমল পানীয় পান করলে রক্তে ইউরিক এসিডের মাত্রা বৃদ্ধি পায় ফলে এই এসিড স্ফটিকে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনাও বৃদ্ধি পায়।
এর কারণ হিসেবে বিজ্ঞানীরা বলেছেন, কোমল পানীয়তে উচ্চ মাত্রার ফ্রুক্টোজ থাকে আর এ কারণেই রক্তে ইউরিক এসিডের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। অবশেষে গাউট রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।
১২. স্মৃতিশক্তি কমে যায়
ডিমনেশিয়া কিংবা আলঝাইমার্স রোগ সাধারণত ৫০-৬০ বছরের মানুষের মাঝে দেখা দিয়ে থাকে।
কিন্তু একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যারা প্রতিনিয়ত সফট ড্রিংকস পান করে থাকেন তাদের এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা উল্লেখিত বয়সের আগেই দেখা দিতে পারে।
এর কারণ হিসেবে বিজ্ঞানীরা বলেছেন, সফট ড্রিংকস এ অতিরিক্ত মাত্রায় চিনি থাকে আর এই চিনির কারণেই স্মৃতিশক্তি কমে যায়।
ইঁদুরের উপর একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যে সকল ইঁদুরকে উচ্চ মাত্রার চিনি খাওয়ানো হয়েছিল তাদের স্মৃতিশক্তি, উপস্থিত বুদ্ধি এবং সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা কমে যায়।
আরও পড়ুনঃ
সফট ড্রিংকস এর অপকারিতা অনেক রয়েছে, কারণ কোমল পানীয়তে রয়েছে শুধু চিনি আর চিনি। কোন প্রকার উপকারী উপাদান নেই। যেমন ভিটামিন, ফাইবার, মিনারেল ইত্যাদি।
কোমল পানীয়ের অপকারিতা বা ক্ষতিকর দিক এটাই যে, এসব শুধু মানব শরীরে চিনির পরিমাণ বৃদ্ধি করে এবং অতিরিক্ত ক্যালরি যোগ করে।
সফট ড্রিংকস এর এতো অপকারিতা আগে তো জানতাম না।
ধন্যবাদ এমন উপকারী একটি লেখা আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।
এমন সচেতনতামুলক লেখা আরও বেশী বেশী চাই।
একি!
বিষ খাচ্ছি আমরা?
এইডা আমি কি পড়লাম, আগে তো জানিনি?