বেঁচে থাকার জন্য প্রধান উপাদানগুলোর মধ্যে অন্যতম পানি, তাই তো বলা হয়ে থাকে পানির অপর নাম জীবন। বর্তমানে পানি দুষিত হয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত তাই বলা হয়, বিশুদ্ধ পানির অপর নাম জীবন।
একজন মানুষের দেহের প্রায় ৬০-৭০ ভাগই পানি। পানি যেমন আমাদের জীবন বাঁচায় তেমনি পানি পানের সঠিক নিয়ম না জানলে হতে পারে মৃত্যু।
কি ভয়ানক কথা, পানি পান করলে তো জীবন বাঁচবে, মানুষ মরে যাবে কেন? বিজ্ঞানীরা এমনি একটি তথ্য দিয়েছেন, অনেক ক্ষেত্রে দাঁড়িয়ে পানি পান করলে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
এছাড়াও দাঁড়িয়ে পানি পান করার শারীরিক ক্ষতি নিয়ে গবেষণা এখনও চলছে। দাঁড়িয়ে পানি পান করার অপকারিতা নিয়ে আজকের লেখা।
চলুন জেনে নেই, দাঁড়িয়ে পানি পান করার অপকারিতা কি?
সুচীপত্র
দাঁড়িয়ে পানি পান করার অপকারিতা
আমরা যারা মুসলিম তারা অনেকেই জানি, দাঁড়িয়ে পানি পান করা হারাম, অর্থাৎ পুরোপুরি নিষেধ। মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) ১৪৫০ বছর পূর্বেই আমাদের দাঁড়িয়ে পানি পান করতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন।
বর্তমানে দাঁড়িয়ে পানি পান করার ব্যাপারে বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছেন এবং নিষেধও করেছেন। আসুন জেনে নেই, দাঁড়িয়ে পানি পান করার অপকারিতা বা দাঁড়িয়ে পান করলে শরীরের কি ক্ষতি হয়?
১. বদহজম
দাঁড়িয়ে পানি পান করলে পান করা পানি সরাসরি পাকস্থলীতে গিয়ে পড়ে। এর ফলে এসিড এবং বেস এর ব্যাল্যান্স নষ্ট হয়ে যায়। এসিড ও বেস এর অপর নাম অম্ল ও ক্ষার। এই ব্যাল্যান্স যখন ঠিক থাকে না তখনই খাবার হজম হতে চায় না।
ফলে নানা ধরনের পেটের অসুখের সম্মুখীন হতে হয়। এই বদহজম অনেক দিন ধরে থাকলে শরীরের অনেক বড় ধরণের ক্ষতি হতে পারে বলে বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে জানতে পেরেছেন। এটি দাঁড়িয়ে পানি পান করার অপকারিতা বা দাঁড়িয়ে পানি পান করার শারীরিক অপকারিতা।
২. GERD
দাঁড়িয়ে পানি পান করলে তা সরাসরি Esophagus এ প্রেসার দেয় ফলে Esophagus এবং Stomach এর মধ্যে থাকা সরু নালীটি ক্ষতিগ্রস্থ হয়ার সম্ভাবনা থাকে।
এর ফলে GERD এর সম্ভাবনা থাকে। GERD এর পূর্ণরূপ হচ্ছে, GastroEsophageal Reflux Disease. GERD রোগ সাধারণত দাঁড়িয়ে পানি পান করার কারনে হতে পারে।
৩. মানসিক ক্ষতি
আমরা শারীরিক স্বাস্থ্যকে যতটা গুরুত্ব দেই তার ১০০ ভাগের ১০ ভাগও মানসিক স্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দেই না। মানসিকভাবে ভাল থাকার উপায় অনেক রয়েছে তার মধ্যে একটি হচ্ছে দাঁড়িয়ে পানি পান না করা।
কারন দাঁড়িয়ে পানি পান করলে স্নায়ু দুর্বল হয়ে যেতে পারে এবং নার্ভের সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। নার্ভের প্রদাহের কারণে অহেতুক দুশ্চিন্তার সৃষ্টি হয় সাথে মানসিক চাপ বৃদ্ধি পেতে থাকে।
মানসিক চাপকে ইংরেজিতে বলা হয়ে থাকে Anxiety. তাই মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে চাইলে আজ থেকেই দাঁড়িয়ে পানি পান করা বন্ধ করে দিন।
৪. পাকস্থলীতে আলসার হয়
আমাদের পাকস্থলীতে HCL বা হাইড্রোক্লোরিক এসিড থাকে। এর পরিমান যখন প্রয়োজনের তুলনায় বেড়ে যায় তখন গ্যাস্টিক এর সমস্যা শুরু হয়, অর্থাৎ এসিডিটির সমস্যা হয়।
এটি নিয়ন্ত্রনের জন্য তখন ডাক্তারের পরামর্শ মতে ওষুধ সেবন করতে হয়। যদি এসিডিটি নিয়ন্ত্রন না করা হয় তবে পাকস্থলীতে ক্ষতের সৃষ্টি হতে পারে। সেটাকে আমরা আলসার বলে থাকি।
দাঁড়িয়ে পানি পান করার সাথে পাকস্থলীর এসিড এর একটি সম্পর্ক আছে। যখন দাঁড়িয়ে পানি করা হয় তখন সেই পানি সরাসরি পাকস্থলীতে গিয়ে পড়ে এবং এসিডের কর্মক্ষমতা কমে যায়।
এর ফলে বদহজম হতে পারে, পাশাপাশি পেট ব্যাথা ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে। দাঁড়িয়ে পানি পান করার ফলে পাকস্থলীর গায়ে আঘাত পায় এবং ধীরে ধীরে ক্ষত তৈরি করে। দাঁড়িয়ে পানি পান করার কুফল হল পাকস্থলীতে আলসার তৈরি।
৫. মূত্রথলীর ক্ষতি
দাঁড়িয়ে পানি পান করার অপকারিতার মধ্যে একটি হল মূত্রথলীর ক্ষতি হয়। কারণ দাঁড়িয়ে পানি পান করলে পানি প্রবাহ মাত্রা অনেক বেশি হয়ে থাকে যার ফলে শরীরের বজ্র পদার্থ খুব দ্রুত মূত্রথলীতে গিয়ে জমা হয়।
এ কারণে মূত্রনালীর সংক্রমনসহ কিডনির উপর মারাত্মক প্রভাব পড়ে। তাই দাঁড়িয়ে পানি পান করা থেকে সর্বদাই বিরত থাকা উচিৎ।
৬. কিডনির ক্ষতি
আমাদের শরীরের ভিতরে যতগুলো ভাইটাল অরগ্যান আছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে কিডনি। শরীরের রক্ত বজ্রমুক্ত করতে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে কিডনি।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, কিডনি রোগ একটি নিরব ঘাতক, যখন কিডনি রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায় তখন প্রায় ৫০-৬০ শতাংশ নষ্ট হয়ে যায়। দাঁড়িয়ে পানি পান করলে ক্ষতিকর এবং বজ্র পদার্থগুলো দ্রুত রক্তে মিশে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
রক্ত ছাকুনি দিতে গিয়ে এই বজ্র এবং বিশাক্ত পদার্থগুলোর মুখোমুখি হয় ফলে কিডনির উপর মারাত্মক প্রভাব পড়ে। এভাবে প্রতিনিয়ত দাঁড়িয়ে পানি পান করার ফলে ধীরে ধীরে কিডনি ড্যামেজ হয়ে যাওয়ার প্রবল সম্ভবনা থাকে।
তাই দাঁড়িয়ে পানি পান করার অপকারিতা জেনেও এই কাজটি করা থেকে বিরত থাকুন।
জেনে রাখুন, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করবে যেসব খাবার
৭. ফুসফুসের ক্ষতি
ভাইটাল অরগ্যানগুলোর মধ্যে ফুসফুস অন্যতম। আমাদের শ্বাস প্রশ্বাস যন্ত্রটির নামই হচ্ছে ফুসফুস। ফুসফুস হতে অক্সিজেন নিয়ে তা সারা শরিরে ছড়িয়ে দেয় রক্ত। এই ফুসফুসের যদি একটু সমস্যা দেখা দেয় তবে কি হতে পারে একটু চিন্তা করে দেখেন!
দাঁড়িয়ে পানি পান করলে বায়ু নালীতে অক্সিজেন সরবরাহে তারতম্য হতে পারে, এমনকি কিছুক্ষনের জন্য হলেও অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
এর ফলে ফুসফুসের পাশাপাশি হার্ট এর সমস্যা দেখা দিতে পারে। যাদের হার্ট এর সমস্যা রয়েছে, দাঁড়িয়ে পানি পান করা তাদের জন্য অনেক বেশি ভয়ংকর বলেছেন চিকিৎসকরা। তাই আজকেই দাঁড়িয়ে পানি পান করা বন্ধ করে দিন।
৮. আর্থ্রাইটিস বা জয়েন্টের ব্যাথা
আর্থ্রাইটিস জটিল একটি রোগ, একবার হয়ে গেলে সারাজীবন এ রোগে ভুগতে হয়। বিশেষ করে হাঁটুতে এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি থাকে।
দাঁড়িয়ে পানি পান করলে শরীরে উপকারী ভিটামিন বা রাসায়নিক উপাদান কমে যায় ফলে জয়েন্টের কর্মক্ষমতা ধীরে ধীরে কমে যেতে থাকে যা একসময় আর্থ্রাইটিসে রূপ নেয়।
দাঁড়িয়ে পানি পান করার অপকারিতা জেনেও আর ভুলেও এই কাজটি করবেন না।
৯. পর্যাপ্ত পানি পান করেও পিপাসা থেকে যায়
দাঁড়িয়ে পানি পান করার আরও একটি অপকারিতা হচ্ছে, প্রচুর পানি পান করার পরেও পিপাসা মিটে না, আরও পানি পানের আগ্রহ থাকে।
এর একটি কারণও বিজ্ঞানীরা বের করেছেন, বিজ্ঞানীরা বলেছেন, দাঁড়িয়ে পানি পান করলে পাকস্থলীতে পৌঁছতে অনেক জায়গায় বাধা পায় ফলে পানির পিপাসা পুরোপুরি নিবারণ হয় না, পিপাসা থেকেই যায়।
এরকমটি হওয়া স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি। এটিও একটি দাঁড়িয়ে পানি পান করার কুফল।
১০. এসিডের ব্যাল্যান্স ঠিক থাকে না
দাঁড়িয়ে পানি পান করলে পাকস্থলীতে এসিডের ব্যাল্যান্স ঠিক থাকে না। এতে পাকস্থলীর নানা ধরণের অসুখ হতে পারে। এর কারণে পাকস্থলীতে আলসারও হতে পারে।
আরও অনেক ধরণের সমস্যা যেমন এসিডিটি বৃদ্ধি পেতে পারে বা বদহজম হতে পারে ইত্যাদি। তাই দাঁড়িয়ে পানি পান করা থেকে বিরত থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
১১. মৃত্যু ঝুঁকি
দাঁড়িয়ে পানি পান করলে মৃত্যু ঝুঁকি থাকে? জী, আপনি ঠিকই শুনেছেন, দাঁড়িয়ে পানি পান করলে অনেক সময় মানুষের মৃত্যুও হতে পারে।
এক্ষেত্রে বিজ্ঞানীরা একটি অবস্থার করা উল্লেখ করেছেন, যদি কেউ অনেক পরিশ্রম করে এসে দাঁড়িয়ে পানি পান করে তবে তার মৃত্যু ঝুঁকি থাকে। আজ থেকেই সাবধান হয়ে যান, দাঁড়িয়ে পানি পান করা বন্ধ করে দিন।
১২. পানি পানের সঠিক নিয়ম, ইসলাম কি বলে?
আমাদের নবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) দাঁড়িয়ে পানি পান করতে নিষেধ করেছেন এবং খুব প্রয়োজন ছাড়া দাঁড়িয়ে পানি পান করা সুন্নত পরিপন্থী।
পানি পান করার সঠিক এবং সুন্নত পদ্ধতি হল, বসে পানি পান করা এবং এক গ্লাস পানি ৩ নিঃশ্বাসে পান করা সুন্নত। এভাবে পানি পান করা স্বাস্থ্যসম্মত এ ব্যাপারে বিজ্ঞানীরাও একমত পোষণ করেছেন।
বিজ্ঞানীরা আরও বলেছেন, খুব ক্লান্ত কিংবা হাঁপাতে হাঁপাতে পানি পান করা উচিৎ নয় এতে শ্বাস নালীর ভিতরে পানি ঢুকে যেতে পারে, অনেক সময় মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
তাই ক্লান্ত থাকলে একটু বিশ্রাম নিয়ে ধীরে সুস্থে পানি পান করা উচিৎ। দাঁড়িয়ে পানি পান করার কুফল সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞান রাখুন।
দাঁড়িয়ে পানি পান করার অপকারিতা গুলো আমাদের মাথায় রাখা প্রয়োজন, কারণ এই কাজটি আমরা কম বেশি সবাই করে থাকি যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
বসে পানি পান করলে সারা শরীরে পানির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত হয়, যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। তাই দাঁড়িয়ে পানি পান করা থেকে বিরত থাকুন। সবার স্বাস্থ্য ভাল থাকুক এটাই কামনা।
আরও পড়ুন,
*লেখাটি শেয়ার করার অনুরোধ রইলো*