কিডনি রোগের কারণ কি? বা কি কি কারণে কিডনি রোগ হয় বা কিডনি কেন নষ্ট হয়? এই প্রশ্ন গুলোর উত্তর জানার জন্য মানুষ উঠে পড়ে লেগেছে। কারণ বাংলাদেশের একটি সমিক্ষায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের প্রায় ২ কোটি মানুষ কিডনি রোগে আক্রান্ত।
কিডনি রোগ এমন একটি মারাত্মক রোগ, যাকে বলা হয়ে থাকে নিরব ঘাতক। এমন নামকরনের কারণ হচ্ছে কিডনির প্রায় ৭০-৮০ ভাগ নষ্ট হয়ে যাওয়ার পর সাধারনত কিডনি রোগের লক্ষণ গুলো প্রকাশ পেয়ে থাকে।
কোন মানুষের কিডনি যদি ২০ থেকে ৩০ ভাগও কাজ করে তাহলে চিকিৎসার মাধ্যমে সেই মানুষটি সুস্থভাবে বেচে থাকতে পারবে কিন্তু যদি ভয়ঙ্কর রূপ ধারন করে তাহলে জীবন বাঁচানো সম্ভব হয়ে ওঠেনা।
কিডনি নিরব ঘাতক হওয়ায় কিডনি রোগের কারণ অনেকেই জানার চেষ্টা করেন। অবশ্য প্রত্যেক সচেতন মানুষকেই কিডনি নষ্ট হওয়ার কারণ গুলো সম্পর্কে সাম্যক জ্ঞান রাখা জরুরী।
আসুন জেনে নেই কিডনি রোগের কারণ অর্থাৎ কি কি কারণে কিডনি রোগ হয়?
সুচীপত্র
- কিডনি নষ্ট হওয়ার কারণ / কিডনি রোগের কারণ
- ১. দীর্ঘ সময় প্রসাব ধরে রাখা
- ২. কম পরিমাণ পানি পান করা
- ৩. অতিমাত্রায় লবন গ্রহণ করা
- ৪. অতিমাত্রায় প্রোটিন গ্রহণ
- ৫. নিয়মিত ব্যথানাশক ওষুধ সেবন
- ৬. কোমল পানীয় গ্রহণ
- ৭. ধূমপান করা
- ৮. অতিমাত্রায় ক্যাফেইন গ্রহণ
- ৯. রাতে কম ঘুমানো
- ১০. অতিমাত্রায় সোডা গ্রহণ করা
- ১১. অতিমাত্রায় অ্যালকোহল গ্রহণ
- ১২. মাত্রাতিরিক্ত পরিশ্রম করা
- ১৩. শরীরচর্চা না করা
- ১৪. ম্যাগনেসিয়ামের অভাব
- ১৫. ভিটামিন বি-৬ এর অভাব
- ১৬. হাই ব্লাড প্রেসার (উচ্চ রক্তচাপ)
- ১৭. ডায়াবেটিস
- ১৮. নেফ্রাইটিস
- ১৯. বংশগত কারণ
- ২০. সঠিক সময়ে চিকিৎসা না নেয়া
কিডনি নষ্ট হওয়ার কারণ / কিডনি রোগের কারণ
কিডনির প্রধান প্রধান কাজ গুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে শরীরে হরমোন উৎপাদন করা, রক্ত পরিশোধন করা, শরীর থেকে বজ্র বা অপ্রয়োজনীয় পদার্থ ছাকুনির মাধ্যমে বের করে দেয়া, ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ করা, শরীরে খনিজ লবনের ভারসাম্য রক্ষা করা ইত্যাদি।
ভাইটাল অরগ্যান গুলোর মধ্যে কিডনি অন্যতম এবং বেশ কিছু কারণে কিডনি নষ্ট হয়ে যেতে পারে। আর কথা না বাড়িয়ে জেনে নেয়া যাক, কিডনি রোগ কেন হয়?
১. দীর্ঘ সময় প্রসাব ধরে রাখা
কিডনি নষ্ট হওয়ার কারণ গুলোর মধ্যে অন্যতম কারণ হচ্ছে দীর্ঘ সময় ধরে প্রসাব ধরে রাখা। প্রসাবের চাপ আসা সত্তেও অনেকেই প্রসাব না করে দীর্ঘ সময় ধরে রাখে এতে কিডনির উপর মারাত্মক চাপের সৃষ্টি হয়।
প্রতিনিয়ত প্রসাব ধরে রাখলে কিডনি বিকল বা নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাই প্রসাবের বেগ আসার সাথে সাথে বিলম্ব না করেই প্রসাব করা উচিৎ।
২. কম পরিমাণ পানি পান করা
একজন সুস্থ মানুষের দৈনিক ৩ থেকে ৪ লিটার পানি পান করতে হয়। নিয়মিত পানি পান করার উপকারিতা রয়ছে অনেক, যা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত।
আবার পরিমাণে কম পানি করলে হতে পারে নানান ধরণের শারীরিক সমস্যা। বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে কিডনি সমস্যা। কিডনি রোগের কারণ গুলোর মধ্যে পানি কম পান করা একটি অন্যতম প্রধান কারণ।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কেন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা প্রয়োজন? এই প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে, শরীরের মধ্যে জমে থাকা বজ্র এবং অপ্রয়োজনীয় ক্ষতিকর পদার্থ কিডনি দিয়ে বের হয়ে যায়।
যদি পর্যাপ্ত পানি পান না করা হয় তবে শরীর থেকে বজ্র বের হতে পারে না এবং পাশাপাশি কিডনির কার্যকারিতা ধীরে ধীরে কমে যেতে শুরু করে, এক সময় কিডনির ফিল্টারের বজ্র অপসারন ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়।
৩. অতিমাত্রায় লবন গ্রহণ করা
কিডনি নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণ গুলোর মধ্যে অন্যতম কারণ হচ্ছে বেশি বেশি লবন গ্রহণ করা। অনেকেরই তরকারিতে কিংবা খাবারের সাথে অতিরিক্ত লবন খাওয়ার অভ্যাস রয়েছে। যা শরীরের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ।
অনেকেই প্রশ্ন করতে পারেন, শরীর সুস্থ রাখতে লবন বা সোডিয়ামের তো প্রয়োজন আছে, অবশ্যই আছে, কিন্তু তার পরিমাণ ৫.৮ গ্রাম অর্থাৎ একজন সুস্থ মানুষের প্রতিদিন ৫.৮ গ্রামের বেশি লবন গ্রহণ করা উচিৎ নয়।
এখন জেনে নেয়া যাক অতিরিক্ত লবন কিভাবে কিডনি নষ্টের কারণ হতে পারে? কিডনির প্রধান প্রধান কাজগুলোর মধ্যে একটি অন্যতম কাজ হচ্ছে লবন পরিপাক করা, যা আমরা বিভিন্ন প্রক্রিয়াজাত খাবারের মাধ্যমে গ্রহণ করে থাকি।
বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে, যদি বেশি মাত্রায় লবন গ্রহণ করা হয় তবে লবন পরিপাক করা নিয়ে কিডনি ব্যস্ত হয়ে পড়ে, এতে কিডনির উপর মারাত্মক চাপ পড়ে। শুধু কি তাই! বেশি লবন গ্রহণ করলে কিডনির নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি, হাই ব্লাড প্রেসারও বৃদ্ধি পায়।
৪. অতিমাত্রায় প্রোটিন গ্রহণ
প্রোটিন মানব শরীর সচল রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। তাই বলে অধিক মাত্রায় প্রোটিন গ্রহণে হতে পারে কিডনি রোগের কারণ অথবা কিডনি নষ্টের কারণ।
কারণ, প্রোটিন পরিপাক হয়ে অ্যামোনিয়া নামক বজ্র উৎপন্ন করে, এই অ্যামোনিয়ার পরিমাণ বেশি হলে চাপ পড়ে যায় কিডনির উপর। তাই উপযুক্ত পরিমাণের তুলনায় অতিরিক্ত প্রোটিন গ্রহণ না করাই কিডনির জন্য উত্তম।
৫. নিয়মিত ব্যথানাশক ওষুধ সেবন
মাথাটা একটু ধরেছে খেয়ে নিচ্ছেন ব্যথানাশক ওষুধ। কিন্তু আপনি জানেন কি! নিয়মিত ব্যথানাশক ওষুধ সেবনেই হতে পারে আপনার কিডনি নষ্ট হওয়ার কারণ।
প্রায় সব ধরণের ব্যথানাশক ওষুধের কম বেশি সাইড ইফেক্ট রয়েছে। বেশীরভাগ সাইড ইফেক্ট সরাসরি কিডনি সম্পর্কিত অর্থাৎ কিডনির উপর প্রভাব বিস্তার করে।
প্যারাসিটামল নামক ওষুধটিকে আমরা কে না চিনি, প্যারাসিটামলকে যদিও অনেকে না চিনে থাকে তো নাপা নামের সাথে কম বেশি সবাই পরিচিত। এই নাপাই অতিমাত্রায় গ্রহণ করলে বা দীর্ঘদিন সেবন করলেই কিডনি বিকল হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
সুতরাং কারণে অকারণে ব্যথা নাশক ওষুধ সেবন করা মোটেও উচিৎ নয়। তবে অতিমাত্রায় ব্যথার ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করা জরুরী।
৬. কোমল পানীয় গ্রহণ
কিডনি নষ্ট হওয়ার কারণ গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে অতিমাত্রায় কোমল পানীয় গ্রহণ করা। বর্তমানে খাওয়ার পর কোমল পানীয় পান না করলে অনেকেই অস্বস্তিবোধ করে থাকে।
কিন্তু অনেকেই জানেন না, কোমল পানীয় অতিরিক্ত রক্তচাপের সৃষ্টি করে এবং ধীরে ধীরে তা কিডনির উপর প্রভাব বিস্তার করা শুরু করে দেয়। এক সময় কিডনি নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
৭. ধূমপান করা
কিডনি রোগের কারণ গুলোর মধ্যে অন্যতম কারণ হচ্ছে ধূমপান করা। ধূমপান শুধু কিডনিকেই নষ্ট করে না বরং শরীরের প্রায় সকল অঙ্গের জন্য ক্ষতিকর।
একটি মার্কিন গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ধূমপানের সাথে কিডনি নষ্ট হওয়ার নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে।
ধূমপানের ক্ষতিকর দিক নিয়ে ইতিপূর্বে একটি লেখা রয়েছে। আপনি চাইলে সেখান থেকে পড়ে নিতে পারেন।
ধূমপান ছাড়ার সহজ উপায় বা টিপস এই সাইটে পেয়ে যাবেন। আশা করি আপনাদের অনেক সাহায্য করবে।
৮. অতিমাত্রায় ক্যাফেইন গ্রহণ
শরীরটা ঝিমঝিম করছে? হুটহাট পান করছেন কফি। কিন্তু আপনি জানেন কি! কফিতে প্রচুর পরিমাণে ক্যাফেইন থাকে? হ্যা, সত্যি তাই।
খুব তৃষ্ণা পেয়েছে! পান করে নিলেন ৫০০ মিলি কোমল পানীয়। তাতেই আপনি সন্তুষ্ট হয়ে গেলেন কিন্তু আপনার কিডনির যে ১২ টা বেজে যাচ্ছে সে খবর রাখলেন না। কেন? কারণ কোমল পানীয়তে প্রচুর মাত্রায় ক্যাফেইন থাকে।
আপনি হয়তো জানেন না, কিডনি রোগের কারণ গুলোর মধ্যে প্রধান একটি কারণ হচ্ছে, অতিরিক্ত মাত্রায় ক্যাফেইন গ্রহণ করা।
প্রশ্ন আসতে পারে, ক্যাফেইন কিভাবে কিডনির ক্ষতি করতে পারে? একটি গবেষণায় উঠে এসেছে, অতিরিক্ত মাত্রায় ক্যাফেইন গ্রহণ করলে উচ্চ রক্তচাপ বৃদ্ধি পায় এবং সাথে কিডনির উপরও প্রেসার এসে পড়ে। আর এভাবেই ধীরে ধীরে কিডনি অচল হয়ে যায়।
৯. রাতে কম ঘুমানো
অনেকেই কারণে কিংবা অকারণে রাত জেগে থাকেন। কিন্তু আপনি হয়তো জানেন না, কিডনি সুস্থ সবল এবং সক্রিয় রাখতে রাতের ঘুম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।
রাতের নির্বিঘ্ন ঘুমের সময় কিডনির টিস্যু তৈরি হয়ে থাকে, যদি আপনি রাতে নির্বিঘ্ন ঘুম দিতে না পারেন তবে কিডনির টিস্যু তৈরি হবে না, এখান থেকেই মূলত কিডনির ক্ষতি হওয়া শুরু করে।
রাতে বার বার ঘুম ভেঙ্গে যাওয়াও কিডনির টিস্যু তৈরিতে বাধা প্রদান করে থাকে। তাই কিডনি রোগের কারণ গুলোর মধ্যে এটি একটি অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন একদল গবেষক।
আরও পড়ুনঃ
১০. অতিমাত্রায় সোডা গ্রহণ করা
কিডনি নষ্ট হওয়ার কারণ গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে অতিরিক্ত সোডা গ্রহণ করা। একটি গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, যদি কোন ব্যক্তি অতি মাত্রায় সোডা গ্রহণ করে তাহলে তার কিডনি নষ্ট হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি অধিক মাত্রায় বৃদ্ধি পায়।
১১. অতিমাত্রায় অ্যালকোহল গ্রহণ
অতিরিক্ত মদ্য পান বা অতিরিক্ত মাত্রায় অ্যালকোহল গ্রহণ করলে লিভারের মারাত্মক ক্ষতি হয়ে থাকে এ কথা আমরা কম বেশি হয়তো সবাই জানি কিন্তু এর পাশাপাশি কিডনির ক্ষতি হয় এ কথা হয়তো অনেকেই জানেন না।
কিডনি রোগের কারণ গুলোর মধ্যে অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে অতি মাত্রায় অ্যালকোহল বা মদ্য পান করা। তাই কিডনি সুস্থ রাখতে মদ্য পানের অভ্যাস ত্যাগ করা অপরিহার্য।
১২. মাত্রাতিরিক্ত পরিশ্রম করা
শারীরিক পরিশ্রম করা শরীরের জন্য ভালো কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম কিডনির জন্য মোটেও ভালো নয়।
কারণ, অতিরিক্ত মাত্রায় পরিশ্রম করলে শরীরের পেশী ভেঙ্গে যায় কিংবা টিস্যু ছিঁড়ে যায়। এই ভেঙ্গে যাওয়া টিস্যু কিংবা পেশী রক্তের মাধ্যমে কিডনিতে এসে পৌঁছায় এবং কিডনি এদের বাহিরে বের করে দিতে পারে না অর্থাৎ ছাকুনি দিতে পারে না। ফলে কিডনির উপর মারাত্মক ধরণের প্রভাব পড়ে।
তাই সুস্থ থাকার জন্য কিডনি নষ্ট হওয়ার কারণ জানা অপরিহার্য, আর কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মাত্রাতিরিক্ত পরিশ্রম করা।
১৩. শরীরচর্চা না করা
একটু আগেই জানলাম অতিরিক্ত পরিশ্রম করলে কিডনির ক্ষতি হতে পারে অপরদিকে শরীরকে ব্যস্ত না রাখলে কিংবা শরীর চর্চা না করলে কিডনির সমস্যা হতে পারে।
সম্প্রীতি একটি গবেষণায় উঠে এসেছে, যারা নিয়মিত শরীরচর্চা করে থাকেন, তাদের কিডনিতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ৩০ থেকে ৩২ শতাংশ কমে যায়।
সুতরাং শরীরচর্চা না করা কিডনি রোগের কারণ গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি প্রাধান কারণ। তাই নিয়মিত শরীরচর্চা করা উচিত।
১৪. ম্যাগনেসিয়ামের অভাব
কি কি কারণে কিডনি রোগ হয়? এই প্রশ্নের একটি উল্লেখযোগ্য উত্তর হচ্ছে, শরীরে ম্যাগনেসিয়ামের অভাব হলে। তাহলে উপায়?
কিডনির কার্যকারিতা অক্ষুণ্ণ রাখতে শরীরে ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতি রাখা যাবে না, তাই নিয়মিত সবুজ শাক-সবজি, দানাদার জাতিয় খাবার, বাদাম, মটরশুঁটি ইত্যাদি খাওয়া প্রয়োজন।
আরও পড়ুনঃ
১৫. ভিটামিন বি-৬ এর অভাব
কিডনি রোগের প্রধান কারণ গুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে শরীরে ভিটামিন বি-৬ এর অভাব হলে। একটি মার্কিন গবেষণায় দেখা গেছে, শরীরে ভিটামিন বি-৬ এর অভাব হলে কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি বৃদ্ধি পায়।
একজন সুস্থ মানুষকে প্রতিদিন ১.৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি-৬ গ্রহণ করা প্রয়োজন, কারণ এতে কিডনির স্বাস্থ্য ভালো থাকে এবং কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়।
এখন কি ভাবছেন যে অসুধ খেয়ে ভিটামিন বি-৬ এর অভাব পূরণ করবেন? না মোটেও এমন করবেন না। ফলমূল, আঁশযুক্ত খাবার, ছোট মুরগী, কলিজা, আলু, মাছ ইত্যাদি খাবার নিয়মিত গ্রহণ করলেই শরীরে ভিটামিন বি-৬ এর অভাব হবে না।
১৬. হাই ব্লাড প্রেসার (উচ্চ রক্তচাপ)
আরেকটি উল্লেখযোগ্য কিডনি রোগের কারণ হচ্ছে উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেসার। উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেসার সরাসরি কিডনির উপর প্রভাব বিস্তার না করলেও অন্যভাবে কিডনি ড্যামেজ করে দিতে পারে।
উচ্চ রক্তচাপের কারণে হার্ট এবং রক্ত নালীর মারাত্মক ক্ষতি হয়ে থাকে, এই ক্ষতির কারণে শরীরের বিভিন্ন অংশে রক্ত সরবরাহ কমে যায়।
যেহেতু কিডনি শরীরের একটি ভাইটাল অরগ্যান এবং এতেও রক্তের চলাচল রয়েছে, উচ্চ রক্তচাপের কারণে যদি রক্ত নালীর ক্ষতি হয় তবে কিডনিতে থাকা রক্ত নালীরও ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে।
তাই দীর্ঘদিন উচ্চ রক্তচাপ রোগে ভুগলে কিডনি ড্যামেজ হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। তাই যাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে তাদের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা অনেক বেশি জরুরী।
১৭. ডায়াবেটিস
কিডনি ড্যামেজ হওয়ার কারণ গুলোর মধ্যে অন্যতম কারণ হচ্ছে ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র রোগ। অনেকেই ডায়াবেটিস রোগটিকে তেমন কোন গুরুত্ব দেয় না সাধারণত। কিন্তু তা মোটেও উচিৎ নয়।
একটি গবেষণায় উঠে এসেছে, প্রায় ৪০ শতাংশ ডায়াবেটিস রোগীর কিডনি নষ্ট হয়ে থাকে কিংবা কিডনি নষ্ট হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে।
ডায়াবেটিস নিয়ে একটু ধারণা থাকা জরুরী, যেমন- ডায়াবেটিস কাকে বলে? ডায়াবেটিস কত প্রকার ইত্যাদি। আবার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করার উপায় নিয়েও জেনে রাখা প্রয়োজন।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণকারী খাবার সম্পর্কেও জেনে রাখা অনেক বেশি জরুরী। এসব কিছু জেনে রাখা এই জন্য জরুরী যে, এসব তথ্য জানা থাকলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হবে এবং আপনার কিডনি সুস্থ থাকবে।
১৮. নেফ্রাইটিস
কিডনির একটি জটিল রোগের নাম হচ্ছে নেফ্রাইটিস। শিশু থেকে শুরু করে বয়স্ক মানুষদেরও এই রোগ হতে পারে। এই নেফ্রাইটিস রোগটি সাধারণত দুই ধরণের হয়ে থাকে, একটি হচ্ছে সংক্রামক এবং অপরটি হচ্ছে অসংক্রামক।
শিশুদের এই রোগ হলে সহজে নিরাময় করা সম্ভব হয় কিন্তু বড়দের ক্ষেত্রে এর চিকিৎসা বেশ জটিল। বিশেষজ্ঞরা এই রোগের সঠিক কোন কারণ আজ পর্যন্ত নির্ণয় করতে পারেনি।
নেফ্রাইটিসের কারণে যেসব লক্ষণ দেখা যায় তা হল- প্রসাবের সাথে প্রোটিন বের হওয়া, ব্লাড প্রেসার বৃদ্ধি পাওয়া, শরীর ফুলে যাওয়া, প্রসাবের সাথে রক্ত কণিকা বের হয়ে যাওয়া ইত্যাদি।
নেফ্রাইটিস এর ফলে ক্রিয়েটিনিন নামক যৌগিক পদার্থও বের হয়ে যেতে পারে। প্রাথমিক পর্যায়ে এই রোগ শনাক্ত করা গেলে চিকিৎসার মাধ্যমে পুরোপুরি নিরাময় করা সম্ভব হতে পারে।
এই রোগের ভালো চিকিৎসা না হলে ধীরে ধীরে কিডনি বিকল হয়ে যায়। এ কারণে নেফ্রাইটিস, কিডনি নষ্ট হওয়ার কারণ গুলোর মধ্যে অন্যতম প্রধান কারণ।
১৯. বংশগত কারণ
কিডনি রোগের কারণ গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে বংশগত কারণ। বংশে কারও কিডনি রোগ থাকলে এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।
জন্ম থেকে কিডনি আকারে ছোট কিংবা কার্যকারিতা কম থাকে আবার কারো কারো ক্ষেত্রে কিডনির আকার বড় হয়ে থাকে।
তবে ভয় পাওয়ার কারণ নেই মোটেও, কারণ প্রাথমিক দিকে যদি এই রোগ ধরা পড়ে তবে চিকিৎসার মাধ্যমে পুরোপুরি নিরাময় করা সম্ভব।
২০. সঠিক সময়ে চিকিৎসা না নেয়া
সঠিক সময়ে চিকিৎসা না নেয়া কিডনি নষ্ট হয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ। ডায়াবেটিস, হাই ব্লাড প্রেসার, ঘন ঘন মুত্র নালির সংক্রমন, বংশে কারো কিডনি রোগ থাকলে, খুব বেশি স্থুলতা থাকলে, নিয়মিত কিডনি পরীক্ষা করা জরুরী।
কারণ এসব রোগের কারণে ধীরে ধীরে কিডনি বিকল হতে শুরু করে। যদি সঠিক সময়ে চিকিৎসা নেয়া না হয় তবে এক সময় কিডনি নষ্ট হয়ে যায়।
মনে রাখা জরুরী, কিডনি যদি ২০% ও কাজ করে তবে একজন মানুষ স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারে, তবে যদি ২০% ও কাজ না করে তবে জীবন বাচানো মুশকিল হয়ে পড়ে।
কি কি কারণে কিডনি রোগ হয় বা কি কারণে কিডনি নষ্ট হয়? কারণ গুলো তো জানা হয়ে গেল, এখন প্রতিকার কি? প্রথম প্রতিকার হচ্ছে সচেতনতা, এবং কিডনির পরীক্ষা করা। একটু সচেতন হলেই আমারা নিরব ঘাতক নামে খ্যাত কিডনি রোগ হতে মুক্তি পেতে পারি।
আর হ্যাঁ সব থেকে জরুরী একটা কাজ হচ্ছে কিডনি রোগের কারণ গুলো মাথায় রাখা, সাথে পরিবারের অন্যান্য লোকদের সাথেও শেয়ার করা।
আরও পরুনঃ
*লেখাটি শেয়ার করার অনুরোধ রইলো*