আমাদের দেশে সবাই টমেটোকে সবজি হিসেবে চিনি, কিন্তু টমেটো এক প্রকার ফল। বিলাতী বেগুন নামে টমেটোর আরও একটি নাম রয়েছে। আমাদের দেশে টমেটো বহুন প্রচলিত একটি সবজি।
আমরা এটিকে সবজি বললেও এর মাঝে রয়েছে ফলের গুনাগুণ। ফলের মতো একে কাঁচা অবস্থায়ও খাওয়া যায়। আমাদের দেশে টমেটো শীতকালীন সবজি হিসেবে পরিচিত, তবে বর্তমান যুগে গ্রীষ্মকালেও টমেটো চাষ করা হয়।
টমেটো রান্না কিংবা সালাদ হিসেবে জনপ্রিয় আমাদের দেশে। আমাদের দেশের কৃষকরা টমেটো চাষ করে অনেক অর্থ উপার্জন করে থাকেন।
সবজি কিংবা সালাত এর পাশাপাশি প্রক্রিয়াজাত খাবার শিল্পে টমেটো এর ব্যবহার রয়েছে। বর্তমানে টমেটো সসও অনেক জনপ্রিয় আমাদের দেশে।
টমেটোকে নানাভাবে ব্যবহার করা যায়, ভালো স্বাদ, আকর্ষণীতা, উচ্চ পুষ্টিমান, ইত্যাদির কারণে টমেটো সবার কাছে অনেক জনপ্রিয়।
টমেটোতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, ক্যালসিয়াম, এবং প্রয়োজনীয় আমিষ। লাইকোপেন নামক একটি উপকারী উপাদান রয়েছে টমেটোতে যা বিভিন্ন ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে।
একটি গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা গেছে যে, নিয়ম করে প্রতিদিন এক কাপ করে সপ্তাহে ৭ থেকে ১০ কাপ টমেটো খেলে হৃদরোগ কমে যায় এবং প্রতিরোধ করা যায়।
কাঁচা টমেটোকে হালকা তেল দিয়ে রান্না করে খেলেও অনেক উপকার পাওয়া যায়। টমেটো খেলে শরীরে থ্রম্বোসিস এর পরিমাণ কমে যায়। আর কথা না বাড়িয়ে চলুন জেনে নেয়া যাক টমেটোর স্বাস্থ্যগত কিছু উপকারিতা এবং গুণাগুণ।
সুচীপত্র
- কি আছে টমেটোতে?
- টমেটোর উপকারিতা এবং গুণাগুণ
- ১. চর্মরোগ নিরাময়ের ওষুধ টমেটো
- ২. ত্বকের সৌন্দর্য ধরে রাখতে
- ৩. বয়সের ছাপ দূর করতে
- ৪. উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে টমেটো
- ৫. রক্ত অল্পতা দূর করতে
- ৬. ক্ষত নিরাময়ে টমেটো
- ৭. হেপাটাইটিস প্রতিরোধে
- ৮. সর্দি কাশি দূর করতে
- ৯. জ্বর নিরাময়ে টমেটো
- ১০. দাঁতের মাড়ির ক্ষত এবং রক্ত পড়া বন্ধে
- ১১. স্ট্রোক প্রতিরোধ করতে
- ১২. ত্বকের যত্নে টমেটো
- ১৩. অ্যাজমা বা শ্বাসকষ্ট নিয়ন্ত্রণ করতে
- ১৪. হাড় শক্ত করতে টমেটো
- ১৫. ক্যানসার প্রতিরোধ করতে
- ১৬. প্রদাহ বা ব্যথা দূর করতে
- ১৭. সুস্থ চোখের জন্য টমেটো
- ১৮. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে টমেটো
- ১৯. শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে
- ২০. শরীরের ক্ষত সারাতে টমেটো
- ২১. রক্ত জমাট বাঁধতে বাধা প্রদান করে
- ২২. রক্তে সুগার নিয়ন্ত্রণে
- ২৩. DNA এর ক্ষতি রোধ করতে
- টমেটোর খাওয়ার অপকারিতা
কি আছে টমেটোতে?
আমরা অনেকেই জানি না টমেটোতে কি কি উপাদান আছে? কেন আমরা নিয়মিত টমেটো খাবো?
একটি তাজা পাকা টমেটোতে রয়েছে ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, ভিটামিন কে, পটাশিয়াম এবং ফলেট। এর পাশাপাশি টমেটোতে খুব অল্প পরিমাণে রয়েছে স্যাচুরেটেড ফ্যাট, সোডিয়াম, ক্যালোরি, এবং কোলেস্টেরল।
টমেটো থেকে আরও গুরুত্বপূর্ণ কিছু উপাদান পাওয়া যায় যেমন- কপার, ম্যাগনেসিয়াম, নায়াসিন, ফসফরাস, থায়ামিন, ভিটামিন বি৬ ইত্যাদি।
বিভিন্ন উপাদানের পাশাপাশি টমেটোতে রয়েছে ফাইবার এবং পানি। সবকিছু মিলে টমেটোতে রয়েছে অসাধারন গুণাগুণ।
টমেটোর উপকারিতা এবং গুণাগুণ
টমেটোর স্বাস্থ্যগত শত শত গুণাগুণ রয়েছে তার মধ্যে ২৩ টি প্রধান প্রধান গুণ নিয়ে আজকের লেখা। আসুন জেনে নেই টমেটোর ২৩ টি গুণ।
১. চর্মরোগ নিরাময়ের ওষুধ টমেটো
চর্মরোগে আমরা কম বেশি অনেকেই ভুগে থাকি। আমাদের হাতের নাগালে থাকা টমেটোর মধ্যেই রয়েছে চর্মরোগ নিয়াময়ের কার্যকরী উপাদান যা আমরা অনেকেই জানি না।
ত্বকে কোন প্রকার সমস্যা থাকলে টমেটোর ব্যবহারে সাফল্য পেতে পারেন। একটি টমেটোকে রস করে নিয়ে সে রস ত্বকের সমস্যাযুক্ত যায়গায় দুই থেকে তিনবার মাখিয়ে রাখলে দেখবেন অনেক উপকার পাবেন।
২. ত্বকের সৌন্দর্য ধরে রাখতে
একটি তরতাজা টমেটোকে ২ থেকে ৩ টুকরা করে তা থেকে রস বের করে এর সাথে অল্প পরিমাণে চিনি ভালোভাবে মিশিয়ে নিন।
এই মিশ্রণটি আপনার মুখে প্রতিদিন মাস্ক হিসেবে ব্যবহার করুন। এতে আপনার মুখের ত্বক কোমল হবে এবং ত্বক মসৃণ হবে।
৩. বয়সের ছাপ দূর করতে
খুব অল্প বয়স কিন্তু বুঝা যায় বয়স অনেক বেশি। এরকমটা হয় সাধারনত চেহারায় বয়সের ছাপের কারণে। কিছু বদ অভ্যাসের কারণে এই বয়সের ছাপ বেশি পড়ে যায় চেহারায়।
জেনে নিতে পারেন, চেহারায় বয়সের ছাপ পড়ার কারণ
যাই হোক এই বয়সের ছাপ দূর করতে টমেটোর রসকে ব্যবহার করতে পারেন অনায়াসে। প্রতিদিন নিয়ম করে টমেটোর রস ব্যবহার করলে আপনার বয়সের ছাপ কয়েকদিনের মধ্যেই দূর হয়ে যাবে।
৪. উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে টমেটো
আমাদের দেশে উচ্চ রক্তচাপ মারাত্মক আকার ধারন করেছে। যে ব্যক্তির উচ্চ রক্তচাপ আছে সে কোনভাবেই স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারে না। এটি তার জন্য একটি অভিশাপ বলা চলে।
আপনার উচ্চ রক্তচাপ থাকলে তা নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যবহার করতে পারেন টমেটো। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে ২ টি অথবা ১ টি টমেটোর সাথে অল্প পরিমাণে চিনি মিশিয়ে খাওয়া শুরু করুন।
এভাবে নিয়মিত খেলে আপনার উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। আর হ্যাঁ, নিয়মিত প্রেসার চেক করতে ভুলবেন না। সমস্যা বেশি মনে হলে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিৎ।
জেনে নিন, মানসিক স্বাস্থ্য সুস্থ রাখতে যা করা প্রয়োজন
৫. রক্ত অল্পতা দূর করতে
আমাদের দেশে অনেক মানুষ রক্ত অল্পতায় ভুগছেন। যা এনিমিয়া নামে পরিচিত। এই এনিমিয়া দূর করতে প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে একটি টমেটো, ১৫ গ্রাম তিল, এবং একটি আপেল এক সাথে খাবেন।
দিনে একবার অথবা ২ বার খেতে পারবেন। এভাবে কয়েকদিন খেলে রক্ত অল্পতা দূর হয়ে যাবে। আর ডাক্তারের পরামর্শ নিতে ভুলে যাবেন না কখনোই।
৬. ক্ষত নিরাময়ে টমেটো
আমাদের মাঝে অনেক মানুষ আছেন যাদের মুখের ভিতরে ক্ষত রোগ রয়েছে। এই সমস্যার সমাধানে ব্যবহার করতে পারেন টমেটো।
প্রতিদিন সকাল সন্ধ্যা টমেটো রস খান নিয়ম করে। কয়েকদিন এভাবে খেলে আপনার মুখের ক্ষত দূর হয়ে যাবে।
৭. হেপাটাইটিস প্রতিরোধে
জটিল জটিল রোগের মধ্যে অন্যতম একটি রোগ হচ্ছে হেপাটাইটিস। আমরা সাধারণ মানুষ এই রোগটিকে জন্ডিস নামে চিনে থাকি।
কাঁচা টমেটো কিংবা হালকা সিদ্ধ টমেটো হেপাটাইটিস বা জন্ডিস নিরাময়ে সহায়তা করে থাকে। তাই যাদের হেপাটাইটিস বা জন্ডিস আছে তারা নিয়মিত টমেটো খেতে পারেন।
৮. সর্দি কাশি দূর করতে
আমাদের দেশে সর্দি কাশি একটি কমন অসুখ। ঋতু পরিবর্তন হলেই অনেকেই সর্দি কাশিতে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। সাধারনত আবহাওয়া পরিবর্তন হলে যে কারো সর্দি কাশি হতে পারে।
এটি স্বাভাবিক, এতে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। এই সমস্যার সমাধান পেতে পারেন টমেটো খাওয়ার মাধ্যমে। খুব সহজে তৈরি করতে পারেন টমেটো স্যুপ।
একটি অথবা দুটি টমেটো কয়েক টুকরা করে এতে হালকা চিনি এবং লবণ মিশিয়ে গরম করলেই তৈরি হয়ে যাবে টমেটো স্যুপ। এই স্যুপ গরম গরম খেলে সর্দি খাশি নিরাময় হবে।
৯. জ্বর নিরাময়ে টমেটো
জ্বর মানে হচ্ছে শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়া। শরীরের তাপমাত্রা বিভিন্ন কারণে বৃদ্ধি পেতে পারে। তবে যে কারণেই শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাক না কেন এবং সাথে যদি মাথা ব্যাথা থাকে তবে ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিৎ।
স্বাভাবিক ঠাণ্ডা জ্বরে শরীরের তাপমাত্রা কমাতে সহায়তা করে টমেটো। তরমুজের রসের সাথে টমেটোর রস মিশিয়ে খেলে শরীরের তাপমাত্রা কমে যায় এবং আরাম বোধ হয়।
এই রস একবারে না খেয়ে সারাদিনে একটু একটু করে খেতে পারেন, এতে বেশি কার্যকারিতা পাওয়া যাবে।
১০. দাঁতের মাড়ির ক্ষত এবং রক্ত পড়া বন্ধে
দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত ঝড়ে মূলত ভিটামিন সি এর অভাব হলে। যদি কারো দাঁতের মাড়ি হতে রক্ত ঝড়ে তাহলে অবশ্যই ভালো ডেন্টিস্টের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিৎ।
তবে নিয়মিত টমেটো খেলে ধীরে ধীরে দাঁতের গোঁড়া থেকে রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে প্রতিদিন একটি করে টমেটো খেলে উপকার পাওয়া যায়।
১১. স্ট্রোক প্রতিরোধ করতে
স্ট্রোকের নাম শুনলেই আমরা অনেকেই আঁতকে উঠি। একবার কারো স্ট্রোক হয়ে গেলে যে পরিমাণ শারীরিক ক্ষতি হয় তা কল্পনাতীত। স্ট্রোকে আক্রাত্ন রোগী অনেক কষ্টে জীবন যাপন করে।
তাদের স্বাভাবিক চলাফেরায় চলে আসে নানান প্রতিবন্ধকতা। ব্রেইন এ যখন স্বাভাবিক রক্ত চলাচল বাধাগ্রস্ত হয় কিংবা বন্ধ হয়ে যায় তখন আমরা তাকে স্ট্রোক বলে থাকি।
প্রতিদিন একটি করে টমেটো খেলে স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেকটাই কমে আসে।
১২. ত্বকের যত্নে টমেটো
আমাদের শরীরের ত্বক সুন্দর এবং সতেজ থাকুক তা আমাদের সকলের কাম্য। ত্বক সুন্দর রাখতে আমরা অনেকেই অনেক কিছুই করে থাকি।
কিন্তু আমরা অনেকেই জানি না যে, হাতের নাগালে পাওয়া যায় টমেটো নামক সবজি বা ফল আপনাকে উপহার দিতে পারে সুন্দর এবং সতেজ ত্বক। হ্যাঁ এটাই সত্যি।
টমেটোর মধ্যে বেটা ক্যারোটিন নামক একটি উপাদান রয়েছে যা সূর্যের ক্ষতিকর দিকগুলো থেকে ত্বককে রক্ষা করতে পারে।
টমেটোতে আরও একটি উপকারী উপাদান রয়েছে যার নাম হলো লাইকোপিন যা সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মি হতে ত্বককে অনেকটাই রক্ষা করতে পারে।
নিয়মিত টমেটো খেলে ত্বকে বলিরেখা পড়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়।
১৩. অ্যাজমা বা শ্বাসকষ্ট নিয়ন্ত্রণ করতে
শ্বাসকষ্ট বা অ্যাজমা আমাদের দেশে বিশেষ করে ঢাকা শহরে মারাত্মক আকার ধারন করেছে। এর প্রধান কারণ হচ্ছে নোংরা পরিবেশ, বাতাসের ধুলো বালি।
অ্যাজমা একটি ফুসফুস সংক্রান্ত রোগ যা পুরোপুরি নির্মূল করা যায় না। ধীরে ধীরে এই রোগ বাড়তে থাকে। তবে এই রোগটিকে নিয়ন্ত্রণ করে রাখতে হয়।
অ্যাজমা নিয়ন্ত্রণ করতে আপনি ব্যবহার করতে পারেন টমেটো। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ অ্যাজমা রোগীকে টমেটো খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
সুতরাং টমেটো নিয়মিত খেলে অ্যাজমা নিয়ন্ত্রনে চলে আসবে। তবে হ্যাঁ, অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ ও সেবন করতে হবে।
১৪. হাড় শক্ত করতে টমেটো
টমেটোর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ক্যলসিয়াম আছে যা শরীরের হাড়কে শক্ত ও মজবুত করতে সাহায্য করে। এছাড়াও নিয়মিত টমেটো খেলে হাড় ক্ষয় রোগ হতে মুক্তি পাওয়া যায়।
টমেটোর মধ্যে লাইকোপিন নামক একটি উপকারী উপাদান আছে যা দুর্বল হাড়কে শক্ত করে এবং হাড়ের ঘনত্ব বৃদ্ধি করে।
জেনে নিন, যে ৫ টি কারণে সন্তাত জন্মদানের ক্ষমতা কমে যায়
১৫. ক্যানসার প্রতিরোধ করতে
পুরো পৃথিবীতে ক্যানসার একটি আতংকের নাম। এটি একটি মরণব্যাধি। যদিও বর্তমানে এর চিকিৎসা আবিস্কার হয়েছে, তবে এর চিকিৎসা ব্যয় অনেক বেশি।
মানুষের শরীরের DNA যদি খতিগ্রস্থ হয় তবে ক্যানসার হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়। প্রতিদিন টমেটো খেলে DNA এর ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।
এছাড়াও টমেটোর মধ্যে অনেক শক্তিশালী লাইকোপিন নামক এন্টিঅক্সিডেন্ট আছে যা দেহের ভিররের ফ্রী র্যাডিক্যাল দূর করতে সহায়তা করে। আর শরীর থেকে ফ্রী র্যাডিক্যাল দূর করার মাধ্যমে ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি কমিয়ে দেয়।
১৬. প্রদাহ বা ব্যথা দূর করতে
টি এন এফ- আলফা এর কারণে মূলত শরীরে প্রদাহ বা ব্যথা হয়ে থাকে। নিয়মিত টমেটো খেলে শরীরের ভিতরে টি এন এফ- আলফা এর পরিমাণ স্বাভাবিক থাকে।
ফলে শরীরে প্রদাহ হয় না। তাই শরীরের প্রদাহ বা ব্যাথা কিংবা জ্বালাপোড়া দূর করতে নিয়মিত টমেটো খেতে পারেন।
১৭. সুস্থ চোখের জন্য টমেটো
চোখ মানুষের একটি অমুল্য সম্পদ। এই চোখকে সুরক্ষিত রাখতে এবং চোখকে সুস্থ রাখতে টমেটো খুবই উপকারী একটি সবজি বা ফল।
টমেটোর মধ্যে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, যা চোখকে রাখে সুস্থ। এক কাপ কুচি করে কেটে নেয়া টমেটো প্রতিদিন নিয়ম করে খেলে মানুষের শরীরে ভিটামিন এ এর চাহিদা ৫০% পূরণ হয়ে যায়।
১৮. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে টমেটো
আমাদের দেশে বর্তমানে ঘরে ঘরে প্রবেশ করেছে ডায়াবেটিস। এই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অনেক উপকারী একটি সবজি বা ফলের নাম হলো টমেটো।
ডায়াবেটিস রোগীদের শরীরে শর্করার মাত্রা ঠিক রাখতে টমেটো অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের প্রতিদিন টমেটো খাওয়া দরকার।
১৯. শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে
প্রতিদিন টমেটো খেলে শরীরের মধ্যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। কারণ টমেটোতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে, যা বিভিন্ন রোগ সারাতে সাহায্য করে এবং শরীরকে বিভিন্ন রোগের হাত থেকে রক্ষা করে।
শরীর অসুস্থ হলে টমেটো খেতে পারেন বিনা বাঁধায়। কারণ টমেটো খেলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায় এবং শরীরে রোগ বাসা বাঁধতে পারে না।
২০. শরীরের ক্ষত সারাতে টমেটো
কোন কারণে শরীরের চামড়ায় ক্ষত হয়ে গেলে টমেটো লাগিয়ে দেখতে পারেন। এতে করে দ্রুত ক্ষত শুকিয়ে যাবে।
কারণ টমেটোতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে এবং এই ভিটামিন সি ত্বকের ক্ষত সারাতে সাহায্য করে।
২১. রক্ত জমাট বাঁধতে বাধা প্রদান করে
রক্ত নালীতে যদি রক্ত কোন কারণে জমাট বেঁধে যায় তবে রক্ত স্বাভাবিকভাবে চলাচল করতে পারে না। ফলে হতে পারে হার্ট অ্যাটাক কিংবা স্ট্রোক
রক্ত নালীতে রক্ত জমাট বাঁধার হাত থেকে রক্ষা করতে পারে টমেটো। তাই নিয়মিত টমেটো খাওয়া দরকার।
২২. রক্তে সুগার নিয়ন্ত্রণে
আমাদের শরীরে সুগার বা গ্লুকোজের গুরুত্ব অপরিসীম। কিন্তু রক্তে যদি সুগারের পরিমাণ বেড়ে যায় তবে দেখা যায় নানা ধরণের রোগ যেমন ডায়াবেটিস।
নিয়মিত টমেটো খেলে রক্তে সুগারের ব্যাল্যান্স ঠিক থাকে। তাই রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে প্রতিদিন নিয়ম করে টমেটো খাওয়া দরকার।
২৩. DNA এর ক্ষতি রোধ করতে
মানব শরীরের DNA এর যে কোন ধরণের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে টমেটো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। কারণ টমেটোতে প্রচুর পরিমাণে Antioxidant রয়েছে যা শরীরের ভিতরে সব ধরণের রোগকে নিরাময় করতে সহায়তা করতে পারে।
এমনকি এই Antioxidant শরীরের DNA কেও রাখে সুরক্ষিত। মানুষের শরীরের DNA যদি ক্ষতিগ্রস্থ হয় তবে ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে যায়। তাই একজন সুস্থ মানুষকে প্রতিদিন অন্তত একটি করে টমেটো খাওয়া উচিৎ।
কাঁচা টমেটো কিংবা লাল টুকটুকে পাকা টমেটো, ফল কিংবা সবজি যাই বলেন না কেন টমেটোকে অপছন্দ করে এমন মানুষ খুব কমই আছে। কাঁচা কিংবা পাকা দুই অবস্থাতেই খাওয়া যায়।
নিয়মিত টমেটো খান তাতে আপনার শরীর থাকবে ফিট, রোগ বালাই মুক্ত তবে যে খাবারই নিয়মিত খাবেন তার পূর্বে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ ডাক্তার কিংবা পুষ্টিবিদ এর পরামর্শ গ্রহণ করা উচিৎ।
পড়ে নিন, যেসব খাবার খেলে রাতে ভালো ঘুম হয়
টমেটোর খাওয়ার অপকারিতা
অবাক হয়ে যাচ্ছেন তাই না? অবাক তো হওয়ারই কথা, এতগুলো উপকারিতা এত এত গুণাগুণ এর কিনা অপকারিতাও রয়েছে! হ্যাঁ ঠিকই বলছি, টমেটোরও কিছু অপকারিতা রয়েছে।
আসুন জেনে নেই বেশি টমেটো খাওয়ার অপকারিতা কিংবা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কি?
১. অম্লের প্রবাহ
টমেটোতে সাইট্রিক এসিড এবং ম্যালিক এসিড আছে, তাই বেশি পরিমাণে টমেটো খেলে পাকস্থলীতে এসিডের পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে এবং অম্লের প্রবাহ সৃষ্টি করতে পারে।
বেশি পরিমাণে টমেটো খেলে হজমে সমস্যা এবং বুক জ্বালা পোড়া করতে পারে। এছাড়াও পাকস্থলীতে অ্যাসিডিটির পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে।
তাই যাদের অ্যাসিডিটির সমস্যা আছে তাদের কাঁচা কিংবা পাকা টমেটো খাওয়া উচিৎ না।
২. অ্যালার্জি সমস্যা থাকলে
যাদের শরীরে অ্যালার্জি আছে তাদের টমেটো খাওয়া থেকে দূরে থাকা উচিৎ। কারণ টমেটোতে হিস্টামিন নামক এক ধরণের উপাদান রয়েছে যা অ্যালার্জির জন্য দায়ী। এজন্য যাদের অ্যালার্জি সমস্যা আছে তারা অবশ্যই টমেটো থেকে দূরে থাকবেন।
এ অবস্থায় টমেটো খেলে শরীরে র্যাস দেখা দিতে পারে, জিব, গলা ফুলে যেতে পারে পাশাপাশি সর্দিও হতে পারে। তাই টমেটো খাওয়া থেকে সাবধান থাকা উচিৎ।
৩. কিডনির সমস্যা
অতিরিক্ত মাত্রায় টমেটো খেলে কিডনিতে পাথর হতে পারে। কারণ অক্সালেট এবং ক্যালসিয়াম রয়েছে টমেটোতে।
বেশি পরিমাণে টমেটো খেলে শরীরে এদের মাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং শরীর থেকে এই উপাদান গুলো সহজে বের হয় না।
এই উপাদান দুটি শরীরে বেশিদিন থাকলে তা ধীরে ধীরে তা কিডনিতে পাথর তৈরি করতে পারে।
৪. জয়েন্ট ব্যাথা বা বাত ব্যাথা
অতিরিক্ত মাত্রায় টমেটো খেলে জয়েন্ট এ ব্যাথা দেখা দিতে পারে। জয়েন্ট ফুলে যেতে পারে। এর কারণ হচ্ছে টমেটোতে এক প্রকার অ্যালকালয়েড থাকে যার নাম সোলানিন। এটি মূলত শরীরে ক্যালসিয়াম তৈরিতে সহায়তা করে থাকে।
তাই অতিরিক্ত পরিমাণে টমেটো খেলে শরীরে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ বেড়ে গিয়ে জয়েন্ট এ ব্যাথার সৃষ্টি করতে পারে।
৫. লাইকোপিনোডার্মিয়া
আমরা জানি টমেটোতে প্রচুর পরিমাণে লাইকোপেন রয়েছে। টমেটো থেকে যে লাইকোপেন পাওয়া যায় তা অগ্ন্যাশয় এবং প্রোস্টেট ক্যান্সারের প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে।
তবে অতিরিক্ত মাত্রায় লাইকোপেন হতে পারে লাইকোপিনোডার্মিয়া। এটি হলে শরীরের রক্তে রং পরিবর্তন হতে শুরু করে। এটি একসময় শরীরের জন্য অনেক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, একজন সুস্থ মানুষ প্রতিদিন ৭৫ গ্রামের বেশি লাইকোপিন গ্রহণ না করাই ভালো এর বেশি গ্রহণ করলে তা লাইকোপিনোডার্মিয়া এর দিকে ধাবিত হয়।
৬. ডায়রিয়া
টমেটোর মধ্যে এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া থাকে যার নাম সালমোনেলা যা ডায়রিয়ার দিকে নিয়ে যায়। যাদের পাকস্থলী টমেটো সহ্য করতে পারে না তারা টমেটো খেলে নির্ঘাত ডায়রিয়া হবে।
এক্ষেত্রে অবশ্যই তাদেরকে টমেটো খাওয়া থেকে দূরে থাকতে হবে।
সর্বশেষে বলা যায়, টমেটোর অনেক স্বাস্থ্যগত উপকারিতা এবং অপকারিতা রয়েছে। ক্ষতিকর দিকের থেকে উপকারের দিক টাই অনেক বেশি।
তাই বলে মাত্রাতিরিক্ত টমেটো খাওয়া যাবে না। কেননা বাড়াবাড়ি কিংবা মাত্রাতিরিক্ত কোন কিছুই ভালো কিছু নিয়ে আসে না। টমেটোতে অনেক উপকার থাকা সত্ত্বেও ডাক্তাররা পরিমাণ মত খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
আরও পড়ুন,
*লেখাটি ভালো লাগলে আপনার প্রিয়জনদের সাথে শেয়ার করুন*