পড়া ভুলে যায় না এমন মানুষ খুব কমই আছে। সব ছাত্র ছাত্রীর একটি কমন সমস্যা পড়া মনে থাকে না। পড়া মনে রাখার জন্য অনেক চেষ্টা অনেক সাধনা করে থাকে, তবুও সফল হয় না,। এ কারণে অনেকেই হতাশা প্রকাশ করে থাকে।
হতাশ হওয়ার কিছু নেই। পড়া মনে থাকবে না এটাই স্বাভাবিক। তবে পড়াকে মনে রাখতে হবে। নইলে পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করা সম্ভব হবে না।
পড়া মনে রাখার কয়েকটি কার্যকরী কৌশল রয়েছে, যা মেনে চললে কিংবা প্রয়োগ করলে সহজেই যেকোন পড়া মনে রাখা সম্ভব।
আসুন জেনে নেই পড়া মনে রাখার কয়েকটি কার্যকরী উপায়।
সুচীপত্র
পড়া মনে রাখার কার্যকরী উপায়
সহজে কিভাবে পড়া মনে রাখা যায় এ ব্যাপারে আজ পর্যন্ত অনেক লেখালেখি হয়েছে কিন্তু কেউ কার্যকরী কোন উপায় কিংবা কৌশল বাতলে দিতে পারেনি।
এখানে ১১ টি কৌশল রয়েছে যা পড়া মনে রাখার ব্যাপারে শতভাগ কার্যকরী। আসুন জেনে নেই, পড়া মনে রাখার উপায়।
১. পড়ার জন্য সময় নির্বাচন
অনেকেই ধারণা করে থাকেন বেশি বেশি পড়াশুনা করলেই পড়া মনে থাকবে। আসলে এ ধারণাটি একেবারেই ভুল।
বিভিন্ন গবেষণা হতে জানা যায়, মানুষের মস্তিষ্ক সবসময় সমান কাজ করতে পারে না। রাতের দিকে এবং সকালে ঘুম থেকে উঠার পর মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বেড়ে যায়। এ জন্য রাতে এবং ভোরে পড়ার সময় নির্ধারণ করা উচিৎ।
বিশেষজ্ঞদের মতে ভোরের পড়া সব থেকে বেশি মনে থাকে। তাই পড়ার জন্য ভোর বেলা নির্বাচন করা বোকামি হবে না। তাই রাত জেগে না পড়ে ভোরে উঠে পড়াশুনা করা উচিৎ।
২. বেশি বেশি পড়া
পড়া মনে রাখার জন্য একটি পড়াকে বারবার পড়তে হবে এবং অনুশীলন করতে হবে। এর কারণ হচ্ছে, যদি এমনটা করা হয় তবে মস্তিস্কের সৃতি গঠনের স্থানে ধীরে ধীরে গাঠনিক পরিবর্তন হতে থাকে।
এর ফলে যে কোন কঠিন কঠিন পড়া খুব তারাতারি মস্তিস্কে সৃতি হয়ে থেকে যায়। যা সহজে সৃতি থেকে হারিয়ে যায় না।
৩. বেশি বেশি অনুশীলন করা
পড়া অনুশীলনের একটি কার্যকরী কৌশল আছে, আপনি চাইলে এটি প্রয়োগ করে দেখতে পারেন। ধরুন আপনি একটি পড়া ৩ বার পড়লেন, তারপর বই বন্ধ করে এর সারমর্ম বা হেডলাইন বা মূল বিষয়গুলোকে কল্পনা করুন।
কিছু তো মাথায় আসবে, আর যেগুলো আসবে না সেগুলোকে আবার দেখে নিন। ৩-৪ ঘণ্টা পর আপনি বাইরে বের হলেন বা জ্যামে বসে আছেন, ঠিক তখনই কল্পনা করুন সকালের পড়াটা কি পড়েছিলেন।
এভাবে অনুশীলনের কাজটা করতে পারেন খুব সহজেই।
৪. লিখে লিখে পড়া
পড়া তারাতারি মস্তিস্কে সংরক্ষণ করে রাখার আরও একটি কার্যকরী উপায় হচ্ছে লিখে লিখে বা ছবি একে পড়া। তার মানে আপনি যাই পড়ুন না কেন, সাথে সাথে যদি লিখেন বা ছবি একে পড়েন তাহলে খুব সহজেই আপনার পড়াটি মস্তিস্কে সৃতি হয়ে থাকবে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, মানুষ যদি কোন ছবি দেখে বা কোন কিছুর ছবি আঁকে তবে সেটি দীর্ঘদিন তার মস্তিস্কে থেকে যায়। তাই পড়ার সাথে সাথে লেখার অভ্যাস করা এবং ছবি একে পড়ার অভ্যাস করা উচিৎ।
৫. পড়ার প্রতি টান বা আকর্ষণ থাকা
যেকোন পড়া সহজেই মনে রাখার জন্য পড়ার প্রতি টান বা আকর্ষণ থাকা জরুরী একটি বিষয়। কোন কাজ করার প্রতি টান বা আগ্রহ না থাকলে যেমন সেই কাজটি সফলভাবে শেষ করা যায় না ঠিক তেমনি পড়ার প্রতি টান বা আকর্ষণ না থাকলে সেই পড়া মস্তিস্কে সৃতি হয়ে থাকবে না অর্থাৎ মনে থাকবে না।
বিজ্ঞানীদের মতে, কোন বিষয়ের উপর মানুষ আকর্ষণ বা টান অনুভব করলে সে বিষয়টি খুব সহজেই মস্তিষ্কের সৃতিতে গেথে যায় এবং দীর্ঘদিন সেটা তার মস্তিস্কে থেকে যায়।
৬. বইয়ে দাগ দিয়ে পড়া
আমাদের অবিভাবকদের মধ্যে অনেকেই তাদের সন্তানদের বই দাগাতে দেয় না। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা গবেষণা করে পেয়েছেন, কেউ যদি বই দাগ দিয়ে দিয়ে পড়ে তাহলে খুব তারাতারি পড়া মস্তিস্কে সৃতি হয়ে থাকে।
দাগিয়ে পড়ার ফলে পড়ার প্রতি আলাদা একটি আগ্রহ তৈরি হয় যা পড়া মনে রাখার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। দাগ দিয়ে পড়ার জন্য বিভিন্ন কালারের কলম ব্যবহার করা উচিৎ।
এর ফলে মস্তিষ্কের ভিজুয়ালিটি ইফেক্ট অনেক গুনে বৃদ্ধি পায়। মস্তিষ্কের ভিজুয়ালিটি ইফেক্ট যত বেশি বৃদ্ধি পাবে ততো বেশি পড়া মনে থাকবে।
৭. কনসেপ্ট ট্রি তৈরি করা
অনেকের কাছে কনসেপ্ট ট্রি শব্দটি নতুন হতে পারে, কিন্তু পড়া মনে রাখার জন্য এই পদ্ধতিটি অনেক বেশি কার্যকরী। কোন একটি বিষয় যখন পড়বেন তখন বিষয়টিকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে নিলে আপনার জন্য পড়তে অনেক সুবিধা হবে।
বিষয়টিকে একটি গাছ মনে করুন এবং অংশগুলোকে ডাল মনে করুন। প্রতিটি ডালের পাতাতে বিষয়বস্তু বা সারমর্ম লিখে রাখুন। এই প্রক্রিয়াটিকে কনসেপ্ট ট্রি বলা হয়ে থাকে।
প্রতিদিন যদি এই গাছটির গোঁড়া থেকে পাতা পর্যন্ত একবার চোখ বলানো যায় তবে যেকোনো কঠিন কঠিন পড়া মনে থাকবে খুব সহজেই।
৮. ছন্দ বানিয়ে পড়া
আমরা কোন কবিতা বা গান একবার শুনলে খুব সহজে মনে রাখতে পারি। এর কারণ এতে ছন্দ রয়েছে। পড়ার ক্ষেত্রেও যদি ছন্দ থাকে তবে সেই পড়া খুব সহজেই মনে রাখা যায়।
যেমন একটি রচনার কয়েকটি হেডলাইন রয়েছে, সবগুলো হেডলাইন গুলোকে একত্রে করে একটি ছন্দ তৈরি করে ফেলুন তারপর সেই ছন্দটি মনে রাখুন। এতে করে বাকি পড়াগুলো সহজেই মনে পড়ে যাবে।
এই পদ্ধতিটিকে নিমনিক পদ্ধতি বলা হয়।
৯. পড়তে বসার পূর্বে অন্তত ১০ মিনিট হাটা
আমারা জানি ব্যায়াম করলে আলসেমি দূর হয়। আর আলসেমি নিয়ে যদি পড়াশুনা করি তাহলে তো পড়ার বারোটা বাজবেই। তাই শরীরের অলসভাব দূর করার জন্য পড়তে বসার পূর্বে কমপক্ষে ১০ মিনিট হাঁটাহাঁটি করা দরকার।
ইলিনয় ইউনিভার্সিটির একটি গবেষণা থেকে জানা যায়, পড়ার পূর্বে ১০ মিনিট হাঁটাহাঁটি করলে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা প্রায় ১০% পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। তাই সহজে পড়া মনে রাখার জন্য আজ থেকেই শুরু করে দিন এই সহজ কাজটি।
১০. পর্যাপ্ত ঘুম
বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা বলে থাকেন, একজন সুস্থ মানুষকে প্রতিদিন নিয়ম করে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমানো দরকার। একটি গবেষণা প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, মস্তিষ্ক যেকোন তথ্যকে সৃতিতে রূপান্তরিত করে ঘুমের সময়।
বেশি রাত জেগে থাকলে এবং ৭ থেকে ৮ ঘণ্টার কম ঘুমালে মস্তিষ্কের সৃতি ধরে রাখার ক্ষমতা কমে যায়। তাই পড়া মনে রাখার জন্য পর্যাপ্ত ঘুম প্রয়োজন।
জেনে নিন, যেসব খাবার খেলে রাতে ভালো ঘুম হয়
১১. অন্যকে শেখানো
আমি যা পড়েছি বা শিখেছি তা অন্যকে শেখাতে যাব কেন? বা অন্যকে শেখালে যদি সে আমার চেয়ে ভালো কিছু করে। এমন মনোভাব আমাদের মাঝে অনেকরই আছে। কিন্তু এটি অনেক বড় ভুল।
অন্যকে শেখালে পড়া মনে থাকে বেশি, এই পদ্ধতিটি অনেক প্রাচীনকাল থেকে চলে আসছে এবং এখনো এই পদ্ধতিটিকে অনেক গুরুত্বসহকারে দেখা হয়।
আপনি যা শিখেছেন বা জেনেছেন তা যদি অন্যকে শেখান তবে দুই ভাবে উপকৃত হবেন। একটি হচ্ছে যা শিখেছেন সেটি পার্মানেন্টলি আপনার মস্তিস্কে থেকে যাবে।
এবং অপরটি হচ্ছে আপনি কতটুকু শিখেছেন সেটিও আপনি অনুধাবন করতে পারবেন অর্থাৎ আপনার দক্ষতা কতটুকু সেটিও বুঝতে পারবেন। তাই পড়া মনে রাখতে অন্যকে শেখানোর কাজটি আজ থেকেই শুরু করে দিতে পারেন।
মোট ১১টি সহজ উপায়ে আপনি খুব সহজে পড়া মনে রাখতে পারবেন এতে কোন সন্দেহ নেই। তো বন্ধুরা আজ থেকেই শুরু করে দিন নতুন নিয়মে পড়াশুনা। সফলতা আসবেই ইনশাআল্লাহ।
আজ এই পর্যন্ত, আগামীতে দেখা হবে নতুন কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে। সে পর্যন্ত ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন। আল্লাহ হাফেজ।
আরও পড়ুন,
*লেখাটি ভালো লাগলে আপনার প্রিয়জনদের সাথে শেয়ার করুন*